রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মুয়াজ্জিন আল্লাহর মাইক

আল্লামা মাহমূদুল হাসান

মুয়াজ্জিন যে আজান দেন এটা তার নিজের থেকে বলেন না আল্লাহর পক্ষ থেকে বলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে বলেন— হাইয়্যা আলাছ্ ছলাহ্   হাইয়্যা আলাছ্ ছলাহ্/হাইয়্যা আলাল ফালাহ্  হাইয়্যা আলাল ফালাহ্ অর্থাৎ ‘নামাজের দিকে এসো, কল্যাণের দিকে এসো।’

এটা আসলে মুয়াজ্জিনের নিজস্ব ডাক নয়; বরং তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রতিনিধি হয়ে মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করেন। কারণ আল্লাহর আহ্বানের আওয়াজ সহ্য করার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই। আওয়াজ সহ্যের লক্ষ্যে আল্লাহতায়ালা মুয়াজ্জিনকে প্রতিনিধি বানিয়েছেন। তিনি হলেন নিয়ন্ত্রক। মুয়াজ্জিনের আহ্বানে সাড়া দেওয়া মানে প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দেওয়া।

মুয়াজ্জিনের কোনো ক্ষমতা নেই যে, তিনি জোহরের আজানের সময় হওয়ার আগে আজান দেবেন। মনে করুন ফজরের আজান মাঝ রাতে আর জোহরের আজান ১১টার সময় দেন তাহলে কী হবে? মুয়াজ্জিনকে মার খেতে হবে। মুসল্লিরা শুধু নন, এলাকার মানুষ মিলে মার দেবেন, পেটাবেন, মসজিদ থেকে বের করে দেবেন। তাহলে বোঝা গেল তিনি আল্লাহর গোলাম। আল্লাহর দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাকে আজান দিতে হবে। ইচ্ছেমতো আজান দিলে হবে না। আবার এই যে, আমি কথা বলছি মাইক দিয়ে বের হচ্ছে, এটা মাইকের কথা নয় আমার কথা, আর আমার কথা মাইকে বের হতে বাধ্য। ঠিক তেমনি মুয়াজ্জিনের মুখ দিয়ে আজানের ধ্বনি বের হচ্ছে কিন্তু এটা আল্লাহর কথা। কারণ তিনি আল্লাহর মাইক। সেই আল্লাহর মাইক আপনাকে আমাকে প্রতিদিন পাঁচবার ডাকছেন। কিন্তু আমাদের বুঝে আসে না দোকানদারি ছেড়ে বা অফিসারি ছেড়ে ১০ মিনিটের জন্য মসজিদে আসা সম্ভব হয় না। যাদের দোকানদারি বা অফিসারি নেই তারাও দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে তার ডাকে সাড়া দেওয়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ভাষ্য দ্বারা বোঝা যায়, মহাপ্রলয়ের পর মানুষ যখন হাশরের ময়দানের দিকে ছুটবে, তখন হজরত বেলাল হাবশী (রা.) হবেন ইসলামের পতাকাবাহী। হজরত আবু বকর, হজরত সাহাবা কেরাম সেখানে উপস্থিত থাকবেন কিন্তু পাতাকাবাহী আর কেউ থাকবেন না। একমাত্র পতাকাবাহী থাকবেন হজরত বেলাল হাবশী (রা.)। কারণ, তিনি দুনিয়াতে আজান দিতেন, মুয়াজ্জিন ছিলেন। আর সেই ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ মসজিদের পানে ছুটে যেতেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হতো কে মুসলমান আর কে মুসলমান নয়। সুতরাং সেই দিন তার হাতেই থাকবে মুসলিমদের পতাকা। হাদিস আছে, জান্নাতি সব মানুষের মধ্যে বেহেস্তে যখন সবাই দাঁড়াবে মুয়াজ্জিনের গলা এক মিটার উঁচু থাকবে এবং নূর চমকাইতে থাকবে। আমরা যদি কাজে, কথায়, কর্মে তার সাদৃশ্য অবলম্বন করি হতে পারে আল্লাহ তাআলা দয়া করে আমাদেরকেও নূরান্নীত করে দিতে পারেন।

লেখক :   খতিব গুলশান  সেন্টাল জামে মসজিদ।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর