রবিবার, ৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

বান্দাকে দয়ার চাদরে রেখেছেন আল্লাহ

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

বান্দাকে দয়ার চাদরে রেখেছেন আল্লাহ

প্রসিদ্ধ গ্রন্থ মিশকাত শরিফের হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘খালাকাল্লাহু আদামা আলা সুরাতিহি। আল্লাহতায়ালা আদমকে তাঁর নিজ সুরতে সৃষ্টি করেছেন।’ ‘তাঁর নিজ সুরত’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে? এর ব্যাখ্যায় যুগশ্রেষ্ঠ মোহাদ্দিসরা বলেছেন, ‘যেহেতু আদম আল্লাহর প্রতিনিধি, কোরআনের ভাষায় খলিফাতুল্লাহ; তাই আল্লাহ তাঁকে নিজ অবয়বে সৃষ্টি করেছেন। হাদিস বিশেষজ্ঞদের আরেকটি দল মনে করে, ‘আলা সুরাতিহি’ বলে আদমের ওই আকৃতিকে বুঝানো হয়েছে যে আকৃতি আল্লাহ জ্ঞানখাতায় আগেই এঁকে রেখেছেন। আদমকে সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহ যে অবয়ব ভেবে রেখেছেন, ঠিক সে অবয়বেই আদমকে সৃষ্টি করেছেন।  নিজ সুরতে আদমকে সৃষ্টি করে আল্লাহতায়ালা তাঁর ভিতর রুহ ফুঁকে দিয়েছেন। মাটির আদম এবার প্রাণময় খোদার প্রাণময় সৃষ্টি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন। মাটির দেহে প্রাণ পেয়েই আদম নড়েচড়ে বসল। নাকের ভিতর চিন চিন অনুভূতি হলো। একটু পরেই হাঁচি দিলেন আদম (আ.)। হাঁচি শেষে বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ।’ ছোট্ট সন্তান যখন ভালো কিছু করে বা বলে তখন বাবা যেমন মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, পরম দরদি কণ্ঠে বলে ওঠে, বেঁচে থাক, বড় হও; তেমনি আল্লাহতায়ালাও আদম (আ.)-এর মাথায় দয়ার পরশ বুলিয়ে মমতা জড়ানো কণ্ঠে বললেন, ‘ইয়ারহামু কাল্লাহ। তোমার স্রষ্টা আল্লাহ তোমাকে দয়ার চাদরে জড়িয়ে রাখুন।’

দয়াময়ের দয়া যাকে জড়িয়ে রাখে তার আর কী লাগে? যেখানে দাঁড়াবে সেখানেই সেরা হবে। দুনিয়া আখেরাত তার পায়ের ধুলায় ধন্য হবে। ধন্য হবেন তারাও, যারা তাকে ভালোবাসবেন। তার শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি দেবেন। যেমন ধন্য হয়েছেন ফেরেশতাকুল। আদমকে ভালোবেসে ও তার শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ সেজদা করে। এবার আল্লাহতায়ালা আদমকে বললেন. ‘ওই যে ফেরেশতার সমুদ্র দেখছ, সেখানে যাও। তাদের অভিবাদন কর। দয়াময় যাকে দয়া করেন, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা কত বেশি তা বোঝানোর জন্যই আজ ফেরেশতাদের নিয়ে মহাসমাবেশের আয়োজন করেছি। এ মহাসমাবেশের সভাপতি আমি। প্রধান মেহমান তুমি। আর প্রধান আকর্ষণ তোমার কপালে চমকাতে থাকা নূরে মুহাম্মাদী (সা.)।’ সমাবেশে আসা মাত্রই আদম (আ.) ফেরেশতার দলকে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।’ জবাবে ফেরেশতারা বলল, ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়ারাহ মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।’ আল্লাহ ফেরেশতাদের বললেন, এটার নাম কী? ওটার নাম বল। এটা দিয়ে কী করে? ওটার কাজ কী? এমনিভাবে হাজারো প্রশ্ন। ফেরেশতারা তো লা-জওয়াব। তারা কখনো এসব শুনেনওনি, এ সম্পর্কে জানেনও না। তাহলে বলবেন কী করে? এবার আদম (আ.)-এর প্রতি লক্ষ্য করে আল্লাহতায়ালা বললেন, আদম! এসবের নাম-ধাম-পরিচয় সব বলে দাও। আদম (আ.) গড়গড় করে সব বলে দিলেন। ফেরেশতারা বড় বড় চোখ করে আদমের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। আর তিনি যা বলছেন সব গোগ্রাসে শুনছেন। কোরআনের ভাষায়— ‘ওয়া আল্লামা আদামাল আসমাআ কুল্লাহা সুম্মা আরাদাহুম আলাল মালাইকাতি ফাকালা আম্বিউনি বি আসমাইহা ইনকুনতুম স্বদিকিন। আল্লাহ আদমকে সবকিছুর নাম-পরিচয় শিখিয়ে দিলেন। তারপর ফেরেশতাদের বললেন, এগুলোর নাম পরিচয় বল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ যখন আদম (আ.) সব বলে দিলেন, তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলেন, ‘উসজুদু লি আদামু। আদমকে সেজদা কর। ফসাজাদু। সবাই সেজদা করল। ইল্লা ইবলিস। ইবলিস ছাড়া। খোদার প্রতিনিধিকে সম্মান করে ফেরেশতারা পেল বরকত, আর ইবলিস সেজদা না করে, সম্মান না দেখিয়ে হলো চির অভিশপ্ত। হলো ‘শায়তানির রাজিম।’ আজকের লেখা থেকে দুটো শিক্ষা আমরা নিতে পারি। দয়াময় যাকে দয়া করেন, তাকে সেরা স্থান দেওয়ার দায়িত্ব দয়াময় আল্লাহরই। তাই আমাদের অবশ্যই সব সময় আল্লাহর দুয়ারে ধরনা দিতে হবে। তবেই দীন-দুনিয়ায় আমরা হব সেরা। হব শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আর খোদা যাকে সেরা করেছেন, যাকে সম্মান দিয়েছেন, নির্দ্বিধায়, বিনা সংকোচে, কোনো ঈর্ষা ছাড়াই তাকে সম্মান দিতে হবে। তবেই আমরা ফেরেশতাদের মতো হয়ে যাব। বরকত লাভ করব জীবনে।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

সর্বশেষ খবর