শনিবার, ১০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই

কড়া আইনের পাশাপাশি চাই সামাজিক প্রতিরোধ

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে মাদকসংক্রান্ত অপরাধের কড়া শাস্তি নিশ্চিত করতে আইন যুগোপযোগী করা হচ্ছে। মাদকের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। ইতিমধ্যে মাদক ব্যবসায়ী ও বহনকারীদের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। মাদক ব্যবসার ওপর আঘাত হানতে তৈরি করা হয়েছে এই তালিকা। মাদক আগ্রাসন দেশের যুবসমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সৃষ্টি করছে অবক্ষয়। দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্যও তা মূর্তমান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আনুমানিক হিসাবে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় ৫২ লাখ। প্রতি বছর ৫ লাখ তরুণ-তরুণী মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকাসক্তের ৪১ ভাগই বেকার এবং এদের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ ভাগ। সোজা কথায়, শতকরা ৫৫ ভাগ মাদকসেবী মাদকের অর্থ জোগাতে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। তারা মাদকের অর্থ জোগাতে পারিবারিক জীবনে অশান্তি সৃষ্টি করছে। ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। গড়ে প্রতি দুজন মাদকাসক্তের একজন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতদের সিংহভাগই মাদকাসক্তের শিকার। এ অবস্থায় মাদক আগ্রাসন ঠেকাতে সর্বাত্মক পদক্ষেপের বিকল্প নেই। মাদকের বিরুদ্ধে পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাও জরুরি হয়ে উঠেছে। মাদক ঠেকাতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মাদক নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের অনেকের মধ্যেই সততার সংকট রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় মাদক প্রতিরোধের নামে যেসব কমিটি গড়ে উঠেছে, সেগুলোর ৮০ ভাগ সদস্য নিজেরাই মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধিরা আন্তরিক ভূমিকা রাখলে মাদক আগ্রাসনের ইতি ঘটানো সম্ভব। মাদক নিয়ন্ত্রণে কড়া আইন প্রণয়ন এবং তা যথাযথভাবে কার্যকরের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষক এবং মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডার ধর্মীয় নেতাদের অগ্রণী ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। নৈতিক শিক্ষার ধারা জোরদার করা সম্ভব হলে মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ার বিপদ অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে পরিবারের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানদের সর্বনাশ না চাইলে বাবা-মা-অভিভাবকদেরও

সচেতন হতে হবে। তারা কাদের সঙ্গে মিশছে, কীভাবে চলছে সে বিষয়ে নজর রাখলে বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর