ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যা মামলায় গত মঙ্গলবার ৩৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ফেনীর জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক সারা দেশে আলোচিত এ মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় ১৬ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ফেনী আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতাও রয়েছেন। খালাসপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন মামলার প্রধান আসামি বিএনপির একজন নেতা। ২০১৪ সালের ২০ মে প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তরা ফেনী শহরের একাডেমি এলাকায় একরামকে গুলি করে, কুপিয়ে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে একের পর এক হত্যাকারীরা গ্রেফতার হতে থাকলে উন্মোচিত হয় ঘটনার নেপথ্য কাহিনী। বেরিয়ে আসে সরকারদলীয় অন্তর্কোন্দলে হত্যা করা হয় একরামকে। হত্যার সঙ্গে রাঘববোয়ালদের নামও বেরিয়ে আসে। এ অবস্থায় আত্মগোপনে চলে যায় হত্যা ষড়যন্ত্রের কুশীলবরা। হত্যার প্রতিক্রিয়ায় ফুঁসে ওঠে এলাকাবাসী। হরতাল-অবরোধ-বিক্ষোভসহ মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন তারা। একরাম হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই রেজাউল হক জসিম বাদী হয়ে বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনারের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। হত্যার ১০০ দিন পর ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ৫৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত আড়াই মাস পর ওই বছরের ১২ নভেম্বর আলোচিত এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। অভিযোগপত্র দাখিলের ১৬ মাস পর ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ আদালত মামলার চার্জ-ফ্রেম গঠন করে। পরে সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হয়। একরাম হত্যার ঘটনা রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের থাবা কীভাবে বিস্তার ঘটছে তারই একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ। দলীয় কোন্দলের কারণে প্রতিপক্ষ একজন নেতাকে পৈশাচিক পন্থায় হত্যা করে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের লোকজনের ওপর তার দায় চাপানোর যে অপচেষ্টা চালায় এ হত্যাকাণ্ডের কুশীলবরা তা শুধু গর্হিতই নয়, নিন্দনীয়। একরাম হত্যা মামলার রায় দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতিকে সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখলে তা হবে দেশ ও জাতির জন্য এক বড় অর্জন। আমরা আশা করব মামলার রায় দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। দৃষ্টান্তমূলক রায়ের জন্য বিচারিক আদালতের প্রতি আমাদের অভিনন্দন।
