শনিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

ইসলামের দৃষ্টিতে শিশুর অধিকার

মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ মহীউদ্দিন কাসেম, পেশ ইমাম

শিশুরা ভবিষ্যতের নাগরিক। এদের সুশিক্ষা ও আদব-আখলাকের তালিম দিয়ে গড়ে তুলতে পারলে এদের দ্বারাই দেশ-জাতি ও বিশ্ব বিভিন্নভাবে উপকৃত হতে পারে। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিটি শিশুই তাওহিদ তথা একাত্মবাদের চেতনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে সুপ্ত থাকে সুন্দর স্বভাব ও বহুমাতৃক প্রতিভা। সঠিক শিক্ষা, প্রাপ্য অধিকার ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত এবং পাশাপাশি সব নেতিবাচক বিষয় থেকে তাদের সুরক্ষিত করা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তব্য। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতিটি শিশুই ফিতরাত বা ইসলামী স্বভাব নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তারপর তার পিতামাতা তাকে ইহুদি, খ্রিস্টান অথবা অগ্নিপূজক বানায়।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)।

নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের নামাজের আদেশ করবে, যখন তারা সাত বছর বয়সে পৌঁছে। আর ১০ বছর বয়সে পৌঁছলে এজন্য (প্রয়োজনে) মারধর করবে।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত, রিয়াদুস সালেহীন)।

শিশুদের অধিকার দান এবং লালন-পালনের ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। মুসলিম হিসেবে এজন্য আমাদের প্রথমত ইসলামের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। এরপর নিজের জ্ঞান-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে যখন যা প্রয়োজন হয়, তা করতে হবে। বিশেষ করে নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল করতে হবে। মানবশিশু উত্তরাধিকারসূত্রে পিতামাতা এবং পূর্বপুরুষ থেকে যেসব বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মলাভ করে তাকে বলে বংশানুক্রম। বংশানুক্রমের মধ্যে দীনদারি বা পরহেজগারিও আছে। তাই এরূপ সন্তান পেতে চাইলে সেরূপ স্বামী ও স্ত্রী বাছাই করতে হবে। শিশু জন্ম নেওয়ার আগে (মাকে) এবং পরে (শিশুকে) যে কটি টিকা দেওয়া দরকার, তা দায়িত্বসহকারে দিতে হবে। কোরআন ও হাদিসে মায়ের দুধ খাওয়াতে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে (সূরা বাকারাহ : ২৩৩, লুকমান : ১৪, আল আহকাফ : ১৫)। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরাও এর সপক্ষে সোচ্চার হয়েছেন। পূর্ণ মেয়াদ দুই বছর দুধপান করা শিশুর মৌলিক অধিকার।

রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পিতামাতার ওপর কর্তব্য হলো— জন্মের পরই তার জন্য একটি উত্তম নাম রাখা, জ্ঞানবুদ্ধি বাড়লে তাকে কোরআনের শিক্ষা দান করা। আর যখন সে পূর্ণবয়স্ক হয়, তখন তার বিয়ের ব্যবস্থা করা।’ (শুয়াবুল ইমান)। পরের অংশে বলা হয়েছে, ‘সন্তানকে বিয়ে না দিলে যে গুনা হবে, তা পিতার ওপরে বর্তাবে।’ আজকাল এই দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে খুব কম পিতামাতাই পালন করেন। ইসলামসম্মত নাম না রেখে এমন সব নাম রাখেন, যার দ্বারা দীনদারিত্ব দূরের কথা, মুসলিম না অমুসলিম তাও বোঝা যায় না। আর শিক্ষার কথা তো আগে আলোচিত হয়েছে। থাকল বিয়ের কথা। আমাদের সমাজের বাবা-মায়েরা সন্তানদের সঠিক সময়ে সঠিকভাবে ও সঠিক স্থানে বিয়ে করালে সমাজের কলঙ্ক অনেক কমে যেত।

সন্তানের আকিকা করা ও খতনা করানো : উল্লেখ্য, আজকাল খতনা ও আকিকা ঘিরে যে বাহুল্য ও অপচয়মূলক আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়, তা তো সুন্নাতের পরিপন্থী। সন্তানের জন্য দোয়া করা : কোরআন ও হাদিসে অনেক দোয়া আছে যা পরিবার-পরিজন, সন্তানাদির জন্য করা উচিত। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সন্তানের পক্ষে পিতামাতার দোয়া কবুল হয়।’ একাধিক সন্তানকে আদর-সোহাগ করতে বা কোনো কিছু প্রদান করতে সমতা রক্ষা করা : কাউকে বেশি দিতে বা কারও প্রতি বেশি দুর্বলতা পোষণ করতে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। (বুখারি, রিয়াদুস সালেহীন)। পিতামাতার কাছ থেকে বৈষম্যমূলক আচরণ পেলে শিশুরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বা যাকে প্রাধান্য দেওয়া হয় তাকে শত্রুজ্ঞান করে, যার ফল খুব মন্দ হয়। বিশেষ করে মেয়েশিশুদের অবহেলা করা যাবে না। কারণ রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যার একটি কন্যাসন্তান আছে, সে তাকে জীবন্ত কবর দেয়নি, তাকে অপমানিত করেনি এবং তার ওপর ছেলেদের অগ্রাধিকার দেয়নি, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)।  ছেলেমেয়ে বড় হলে তাদের সঙ্গে মতের আদান-প্রদান ও পরামর্শ করতে হবে। তাদের ইসলামের যাবতীয় বিধান, দোয়া-কালাম, এমনকি জানাজা, কাফন-দাফন ও কবর জিয়ারত ইত্যাদি শেখাতে হবে।

গ্রন্থনা : মুফতি ওয়ালীউর রহমান খান।

সর্বশেষ খবর