বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্যাংকিং খাতে লুটপাট

খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি রোধ হোক

খেলাপি ঋণ দেশের অর্থনীতির জন্য এক অভিশাপের নাম। দেশের ব্যাংকিং খাতকে দেউলিয়া করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ঋণ খেলাপিরা। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে তারা লোপাট করে চলেছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এ টাকা আদায়ে ব্যাংকগুলো দৃশ্যত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেও তা নিছক লোক দেখানো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মামলার জালে খেলাপি ঋণের ৫৫ হাজার কোটি টাকা দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে। এই অর্থের ৫১ হাজার কোটি টাকাই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও আইনগত জটিলতায় বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এই অর্থসহ খেলাপি ঋণের ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা আদায়ে ব্যাংকগুলোকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ঋণ খেলাপিদের অর্থ আদায়ে উচ্চ আদালতে পৃথক বেঞ্চ গঠনেরও পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অনাদায়ী খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতের সংকটকে ঘনীভূত করছে। অর্থঋণ আদালতে খেলাপি ঋণের দুই লাখ আড়াই হাজার মামলার বিপরীতে প্রায় ৫৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। যা মোট খেলাপি ঋণের ৭৩ শতাংশ। এই অর্থ তুলতে না পারলে ব্যাংকিং খাতে ভয়াবহ সংকট নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঋণ খেলাপির বিরুদ্ধে সরকার দৃশ্যত কড়া মনোভাব দেখালেও এই অঙ্ক দিন দিন বেড়েই চলছে। এ জন্য পৃথক বেঞ্চ গঠন এবং এ সংক্রান্ত আইনে সংশোধনী এনে অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে বোদ্ধাজনদের পক্ষ থেকে। খেলাপি ঋণের দিক থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এগিয়ে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সঞ্চিত টাকা অনেক ক্ষেত্রে মতলববাজদের ঋণ হিসেবে দেওয়া হয় লোপাট করার অসৎ উদ্দেশ্যে। এ জন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এবং অসৎ কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের উেকাচ পান, এটি একটি ওপেন সিক্রেট। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের একাংশের মধ্যে ঋণ দেওয়ার নামে অর্থ লুটের প্রবণতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ব্যাংকে সাধারণ মানুষের সঞ্চিত টাকা লুট করাকে যে তারা কর্তব্য বলে ভাবছেন তা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় লুটেরা সংস্কৃতি ব্যাংকিং খাতে থাবা বিস্তার করছে। জাতীয়  স্বার্থেই যার অবসান সময়ের দাবি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর