শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

বীরাঙ্গনাদের দুঃখ-দুর্দশা

ওঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে

স্বাধীনতার জন্য সবচেয়ে আত্মত্যাগ করেছেন সম্ভ্রম হারানো নারীরা। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও থামেনি বীরাঙ্গনা নামে অভিহিত সম্ভ্রম হারানো নারীদের কান্না। বর্বর পাকিস্তানি হানাদাররা একাত্তরে তাঁদের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছিল। তার পর থেকে যে জীবন তাঁরা বহন করে চলেছেন, সে জীবনের কাছে মৃতরাও ঈর্ষার পাত্র। তথাকথিত ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানকে রক্ষার নামে অসভ্য বর্বর নৃশংস পাকিস্তানি সেনারা একাত্তরের ২৫ মার্চ বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। শুরু করেছিল গণহত্যা। দীর্ঘ নয় মাস ধরে চলে হায়েনাদের তাণ্ডব। নারীদের সম্ভ্রমহানিতে মেতে ওঠে তারা। প্রায় তিন লাখ জায়া-জননী-কন্যা হানাদার ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা নিগৃহীত হয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু লাঞ্ছিত নারীদের বীরাঙ্গনা হিসেবে অভিহিত করে সম্মান দেন। কিন্তু কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ তাঁদের প্রতি সবসময় তাকিয়েছে বাঁকা চোখে। যেসব মা-বোন, স্ত্রী-কন্যা হানাদারদের দ্বারা নিগৃহীত হয়েছেন তাঁদের পরিবারে বা সমাজে সসম্মানে ঠাঁই দেওয়ার উদারতা কখনই দেখা যায়নি। সরকার বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার সম্মান ও সম্মানী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো সবাইকে সে সম্মান দেওয়া সম্ভব হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা সবচেয়ে বেশি সর্বনাশের সম্মুখীন হয়েছেন তাঁরা হলেন সম্ভ্রম হারানো নারী। তাঁদের অনেকেরই স্বামী গণহত্যার শিকার হয়েছেন। কেউ হারিয়েছেন বাবা, ভাই ও পরিবারের অন্য সদস্যদের। ৪৭ বছর ধরে তাঁরা বহন করে চলেছেন অসহনীয় এক কষ্টকর জীবন। বীরাঙ্গনাদের কষ্টকর ও গ্লানিময় জীবন থেকে রেহাই দিতে জীবনের শেষ প্রান্তে হলেও সরকার তাঁদের পাশে দাঁড়াবে— এ প্রত্যাশা প্রত্যেক বীরাঙ্গনার। সারা জীবন দুঃখ আর গ্লানিতে ভুগলেও শেষ জীবনে তাঁরা ক্ষুধায় অন্ন, থাকার জন্য আশ্রয় এবং চিকিৎসার সহযোগিতা পাবেন— এমনই আশা করেন সরকারের কাছ থেকে। জনকল্যাণে বিশেষত মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সরকার এ যাবৎ বেশকিছু পদক্ষেপ নিলেও বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপের বাস্তবায়নে যে শ্লথগতি চলছে তার অবসান হওয়া দরকার। জাতি হিসেবে নিজেদের কৃতজ্ঞ ভাবলে স্বাধীনতার জন্য যাঁরা অসামান্য আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়াতেই হবে। এটি আমাদের সবারই কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর