বৃহস্পতিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

খাদ্যে রাসায়নিক থাবা, পাল্টাতে হবে জীবনধারা

মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী

খাদ্যে রাসায়নিক থাবা, পাল্টাতে হবে জীবনধারা

বোতলজাত, প্যাকেটজাত, প্রক্রিয়াজাত আর পরিশোধিত খাবার কেড়ে নিচ্ছে আমাদের প্রাণশক্তি, জীবনীশক্তি। যৌথ পরিবার যতই ভাঙছে, ততই অস্থির হয়ে পড়ছে সমাজ। আত্মীয়-পরিজনের বন্ধন ছেড়ে মানুষ ছুটছে রেস্তোরাঁয়। ছুটির দিনে চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলো লোকারণ্য। এমনকি ছোটখাটো পারিবারিক অনুষ্ঠানও রেস্তোরাঁনির্ভর হয়ে গেছে। ঘরোয়া রান্না আর আতিথেয়তার দিন ফুরিয়ে এসেছে। এতে বাড়ছে অপচয়, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েক বছর আগে স্নায়বিক অসুস্থতার এক নতুন রোগের তথ্য দিয়েছে, যার নাম Chinese Restaurant Syndrome. এটি মূলত টেস্টিং সল্টসৃষ্ট রোগ, যা স্নায়ুতন্ত্রকে বিকল করে দেয়। অথচ চাইনিজ রেস্টুরেন্ট তো বটেই, অধিকাংশ রেস্তোরাঁর খাবারে টেস্টিং সল্ট অপরিহার্য উপাদান। যান্ত্রিকতা, স্বয়ংক্রিয়তা, আরামপ্রিয়তা, শ্রমবিমুখতা বাড়াচ্ছে আমাদের ফাস্টফুড ও জাঙ্কফুডনির্ভরতা। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে এসে দলে দলে পরম তৃপ্তিতে দূষিত খাবার খায়। সর্বত্র খোলা ও তেলে ভাজা খাবারের রাজত্ব। কনটেইনারে খোলা তেল, কড়াইতে পোড়া তেল, জিভে পানি আসার মতো লোভনীয় খাবার। করপোরেট সংস্কৃতির বদৌলতে তরুণ প্রজন্মের ভয়ানক আসক্তি ফাস্টফুডে। এক তেল দিয়ে বার বার ভাজা, ফলে ওই তেলে সৃষ্টি হয় Benzopyrene নামক টক্সিন, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবার মাইক্রোঅর্গানিজমে দূষিত হবেই, কারণ শতভাগ পরিচ্ছন্ন পরিবেশ কোথাও নেই।  নিউ-ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিতে ভোক্তার সিদ্ধান্ত গ্রহণে যে যৌক্তিক আচরণের কথা বলা হয়েছে, তা বাস্তবে উল্টে গেছে। পছন্দের কেনাকাটা বা খাবারের ক্ষেত্রে আবেগ, ফ্যাশন, ক্রেজ ইত্যাদিই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে, তা যতই অযৌক্তিক হোক। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিবিদ Richard Thaler ‘Behavioral Economics’-এর এ তত্ত্ব প্রমাণ করে ২০১৭ সালে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। স্প্যানিশ প্রবাদ আছে, The belly rules the mind.

বিয়ে ও সামাজিক অনুষ্ঠানে আমরা প্রচুর খাবার গলাধঃকরণ করি, যা রীতিমতো আত্মহনন। কফি শপ, পিজা হাউস ও ফাস্টফুড শপে ছেয়ে যাচ্ছে ঢাকাসহ বড় বড় নগরী। বাড়ছে ফাস্টফুডের ভোক্তার সংখ্যা, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয় এবং স্থূলতা, অলসতা। সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে অসত্ উপার্জনের প্রবণতা। কারণ সত্ উর্পাজন দিয়ে রোজ রোজ রেস্টুরেন্টে খাওয়া অসম্ভব। প্রাকৃতিক খাবার যখনই বাণিজ্যিক উত্পাদন ও প্রক্রিয়াকরণের পথে গেছে, তখনই খাবারের অনন্য প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফ্রান্সের একদল গবেষক পাঁচ বছর যাবত্ মধ্যবয়সী নারীদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, খাদ্য তালিকায় অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাবারের হার ১০% বাড়লে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে ১২%। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।

করপোরেট নিয়ন্ত্রিত এ পৃথিবীতে এখন কোমল পানীয়ের সমুদ্রে তরুণরা ভাসছে। বিভিন্ন উত্সব ও দিবসে কোমল পানীয় ‘শুভেচ্ছা পণ্য’ হিসেবে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। অথচ কার্বনমিশ্রিত কোমল পানীয়ে শরীরের ক্ষতির জন্য যা যা উপাদান, তার সবই আছে। এতে থাকা কার্বন ডাইঅক্সাইড মানবদেহের রক্তে Acid/Alkali ভারসাম্য নষ্ট করছে। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, পানীয় ও মিষ্টিজাতীয় খাদ্যে ব্যবহূত পরিশোধিত চিনিতে পুষ্টির উপাদান শূন্য, বরং তা দ্রুত রক্তে মিশে যায়। দাঁতের এনামেলের ক্ষয়, ত্বকের ক্ষয় এবং এসিডিটি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা এমনকি তরুণদের নেতিবাচক আচরণের জন্য কোমল পানীয়কে দায়ী করা হচ্ছে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের গবেষণায় বলা হয়েছে, কোমল পানীয়ে পুষ্টির উপাদান অতিনগণ্য বরং এটি উত্তেজক। প্রাকৃতিক পানীয় ডাবের ১ কাপ পানি ৪৬ ক্যালরিতে সমৃদ্ধ, যা পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও মিনারেলে পরিপূর্ণ। অথচ ডাবে অভ্যস্ত নয় তরুণরা। কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, খনিজের ঘাটতি মেটায় ডাবের পানি। বেলের শরবত অবিশ্বাস্য উপকারী, কিডনির টক্সিন মুক্তকারী, যা প্রোটিন, থায়ামিন, ক্যারোটিন, নিয়ামিনসহ নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। অন্যদিকে বেল গ্লুকোমা এবং কোলন ও স্তন ক্যান্সার রোধক। কলা অসাধারণ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, যা অ্যান্টাসিডের কাজ করে। কলার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিডনির জন্য উপকারী। হাড় শক্ত করা, এনিমিয়া দূর করায় কলার জুড়ি নেই। লেবু মানবদেহের Cleanser, লিভার purifier এবং ভিটামিন-সির অফুরন্ত উত্স। গবেষণায় বলছে, পেঁপেতে অবিশ্বাস্য ঔষধি ও রোগ প্রতিরোধী গুণ অর্থাত্ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন, ফ্লেভানয়েড ও লুটেইন থাকে। তরমুজ, বেল বা পেঁপেতে কোনো পেস্টিসাইড ব্যবহূত হয় না, তথাপি বেল, পেঁপে ও তরমুজের পরিবর্তে তরুণদের প্রিয় কোমল পানীয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কোমল পানীয় (বেভারেজ) হূদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়, ৪৫ বছরের ঊর্ধ্ববয়সীদের মধ্যে যারা দৈনিক ২৪ আউন্স বা তার বেশি চিনিযুক্ত কোমল পানীয় পান করে, তাদের ক্যালরি তরল মাত্রায় থাকায় লিভারের মাধ্যমে বিপাকীয় কার্য ঘটে। কিন্তু অন্য খাবারের (প্রোটিন) বিপাকীয় কাজ ঘটে ধীরে ধীরে, কারণ রক্তে সুগার ছড়ায় ধীরগতিতে। গবেষকরা বলছেন, পুরুষের জন্য দৈনিক সর্বোচ্চ ৯ চা চামচ (৩৭.৫ গ্রাম) ও মেয়েদের জন্য সর্বোচ্চ ৬ চা চামচ (২৫ গ্রাম) চিনি খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত। চিনিকে এখন ঘাতক বলা হচ্ছে। মুড়ি ভিটামিন ডি, থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম ও আয়রনে ভরা আদর্শ খাবার। অথচ মুড়ি বাদ দিয়ে চিপসে আসক্ত তরুণরা। আলুর চিপসে চর্বির তেল ও সোডিয়ামের আধিক্য উচ্চ রক্তচাপের কারণ। বাসাবাড়িতে গিন্নিরা প্যাকেটজাত মরিচ, হলুদ, জিরানির্ভর হয়ে পড়েছেন। নামিদামি কিছু ব্র্যান্ড ছাড়া বাকিগুলোর বিশুদ্ধতা প্রশ্নবিদ্ধ। এমনকি বাসাবাড়িতে পানি সিদ্ধ করার ঝামেলা থেকে বাঁচতে সরাসরি কলিফর্ম জীবাণুভর্তি জারের পানি ব্যবহার করা হচ্ছে।        

অপাস্তুরিত বা পাউডার দুধে তৈরি হয় আইসক্রিম ও মিষ্টিজাতীয় খাবার। অপাস্তুরিত দুধ সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার জন্য ভয়ানক ঝুঁকিপূর্ণ। ফ্লেভার, কালার ও কেমিক্যাল ছাড়া আইসক্রিম তৈরি হয় না। উচ্চমাত্রার গবষঃরহম চড়রহঃ-যুক্ত চর্বি বা তেল ছাড়া বেকারিতে কেক-বিস্কুট তৈরি হয় না। পরম স্বাদের পটেটো চিপস, স্যান্ডউইচ, ফ্রাইড চিকেন প্রচুর চর্বি ও লবণের আধার। ব্রয়লার মুরগিতে তৈরি ফ্রাইড চিকেন মাত্রাতিরিক্ত ক্রোমিয়াম-এ ভরা, পোড়ালে যার ধ্বংস নেই। ক্রোমিয়াম ব্রেন, কিডনি, নার্ভ সিস্টেম ও লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মিনিকেট নামের চালের ভাতে প্রকৃত খাদ্যপ্রাণের মাত্রাও প্রশ্নবিদ্ধ। মিনিকেট চালে রাসায়নিকের উপস্থিতি পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক বিমানবন্দরে এক বাংলাদেশির চালের প্যাকেট জব্দ করা হয়। গবেষণায় জানা গেছে, ৯০% ডায়াবেটিসের কারণ অপরিমিত ও অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে বছর দুয়েক আগে ৭ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি বইতে হয়েছিল বিষাক্ত ও পুষ্টিবিহীন খাবারের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের এক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি করা হলুদের গুঁড়ায় অতিমাত্রায় সিসা ধরা পড়ে। ওই সিসাযুক্ত হলুদে পেটের পীড়ায় আক্রান্ত এক পরিবারকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল, তদন্তে এফডিএ তা উদ্ঘাটন করে।

চকচকে পাটালি গুড়ে মেশানো ক্ষতিকর সালফেট, হাইড্রোজ, কিডনি ও লিভারকে আক্রান্ত করছে। মানবদেহে জৈব যৌগের সহনীয় মাত্রা প্রতি গ্রাম রক্তে ০.২ মাইক্রোগ্রাম। কিন্তু বাস্তবে এ মাত্রা অনেক বেশি। ফাস্টফুডের মাখন, চিজ ও ম্যায়োনেজ হূদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। অভিজাত শ্রেণির খাবার বিদেশি কর্নফ্ল্যাক্স ক্ষতিকর প্রমাণিত হওয়ায় স্ক্যান্ডিনিভিয়ান বিভিন্ন দেশে তা নিষিদ্ধ হয়েছে। রঙিন পানীয়, রঙিন চকলেট, রঙিন কেক, রঙিন খাবারে আছে Chemical, Refined Sugar I Sweetener. পৃথিবীজুড়ে প্রক্রিয়াজাত খাবারে ব্যবহূত সব is FDA-এর অনুমোদিত নয়।

প্লাস্টিক প্যাকেট আর পলিথিনে মোড়ানো খাবার আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অনুষঙ্গ। অথচ এর বিষাক্ত রাসায়নিক মানবদেহের হরমোন সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানের এক রিপোর্টে ৯০% বোতলের পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে মর্মে জানানো হয়েছে। মাইক্রোপ্লাস্টিকে আছে পলিপ্রপিলিন, পলিস্টাইরিন, নাইলন ও পলিথিলিন টেরেফথ্যালেট। এর বিষাক্ত প্রভাব পড়ছে দেহে, অনিবার্য পরিণতিতে ক্যান্সার। ফ্রিজে প্লাস্টিক কনটেইনার ভর্তি খাবার আরেক বিপদ ডেকে আনছে। এসব প্লাস্টিক কনটেইনার অধিকাংশই ফুড-গ্রেডের নয়। গবেষণায় ফ্রিজের খাবারে ই-কোলি নামক ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমান প্রজন্মের শিশুরা দূষিত শরীর নিয়েই জন্মগ্রহণ করছে। বর্তমানে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে ফ্যাটি লিভারের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে তরুণ প্রজন্ম আগামীতে দেশের প্রশাসক, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, সৈনিক, চিকিত্সক, গবেষক হবে, খাদ্যের অনাচার থেকে তাদের বাঁচাতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। দোকান-রেস্তোরাঁর খাবার নয়, পুষ্টি বাড়াতে ঘরের রান্না করা খাবারে ফিরে আসতে হবে। প্রিয় চিকিত্সকরা! ওষুধের ব্যবস্থাপত্রে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পরামর্শ দিন। চিকিত্সকদের পুষ্টিবিদের ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রিয় গৃহিণীরা! হাতের পরশে সন্তানদের জন্য খাবারের পরিবেশ ঘরে তৈরি করুন। নতুবা ফাস্টফুড আপনার সন্তানের মেধা, অভিনিবিষ্টতা, সৃজনশীলতা ও কর্মক্ষমতা কেড়ে নেবে। ঘাম ঝরানো আন্তরিকতা নিয়ে রান্নায় সময় বাড়িয়ে দিন। সন্তানের খাবারের আচরণ ও অভ্যাসে বাবা-মায়ের ভূমিকা অনেক বড়। শিক্ষার্থীদের টিফিন হিসেবে মুড়ি, কলা, বেল, পেঁপে, ডাব, পেয়ারা এবং বাসায় তৈরি হালকা স্ন্যাকস ও খিচুড়ি সবচেয়ে নিরাপদ খাবার। আলু দিয়ে ঘরে মজাদার ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তৈরি করুন, কিন্তু চিপস নয়। লেবুর পানি খেতে উত্সাহিত করুন। খাদ্যের জেনেটিক মডিফিকেশন জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সর্বত্রই হাইব্রিডের জয়জয়কার, ফলে প্রাকৃতিক তাজা খাবার হারিয়ে যাচ্ছে। চীনে বর্তমানে চলছে নিরামিষ বিপ্লব, বহু নিরামিষ রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে চীনে। বর্তমান ফাস্টফুড আর রেস্তোরাঁনির্ভর খাদ্যাভ্যাসের পথে চললে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের ৬০% মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবে। মহান আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষ পাঠিয়েছেন রিজিক (খাদ্যের বরাদ্দ) নির্দিষ্ট করেই। কিন্তু মানুষ লোভের তাড়নায় নির্ধারিত সময়ের বরাদ্দ আগেভাগেই নিঃশেষ করছে। সুতরাং খাবারে পরিমিতি আনুন। চল্লিশোর্ধ্বরা খাদ্যে অর্গানিক ও নিরামিষের মাত্রা বাড়িয়ে দিন। স্যাচুরেটেড ও ট্রান্সফ্যাটের লাগাম টেনে ধরুন। উজান থেকে বয়ে আসা পলিতে যেমন কমে যায় নদীর নাব্য, তেমনি অতিভোজনে হ্রাস পায় শারীরিক সক্ষমতা। যত ভোজন, তত ওজন। যুক্তরাজ্যে ১ লাখেরও বেশি রোগীর ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, এক তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে ক্যান্সার আক্রমণের কারণ অতি ওজন। ভূরিভোজনে স্বাস্থ্যের ছন্দপতন, রোগব্যাধিতে যন্ত্রণাময় মরণ। সুতরাং নিয়ন্ত্রণহীন জিবের পরিণতি অসুস্থতা, হাসপাতালে আর্তনাদ আর কান্না, অবশেষে মৃত্যুযন্ত্রণা। জীবনচক্রকে সাজাতে হবে তাজা, সবুজ, প্রাকৃতিক ও অপ্রক্রিয়াজাত খাবার দিয়ে। বোতলজাত, প্যাকেটজাত খাবার এড়াতে হবে। প্রাকৃতিক খাদ্যশস্য ছাড়া পুষ্টি আসবে না। খেটে খাওয়া মানুষ রোগব্যাধি ছাড়াই বেঁচে আছে গরম ভাত আর সবজি খেয়ে, প্রাচুর্যহীন তাদের খাবার। অথচ প্রেসার কুকার, টোস্টার আর মাইক্রোওভেনের যত্নের খাবার খেয়ে প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত বিত্তবানেরা। পরিমিত খাদ্যে সুস্থ জীবন। খাদ্যের অভাবে মানুষ মরে না, মরে খাদ্যের স্বভাবে।

 

লেখক : মহাপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন।

email: [email protected]

সর্বশেষ খবর