মঙ্গলবার, ১ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইবাদতের ফসল বোনার মাস

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ইবাদতের ফসল বোনার মাস

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘রজব আল্লাহর মাস। শাবান আমার মাস। আর রমজান হলো আমার উম্মতের মাস।’ যেহেতু রজবে আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রেমিক নূরে মুহাম্মাদীর দিদার পেয়েছেন তাই রজবকে আল্লাহ নিজের মাস করে নিয়েছেন। আর রমজান হলো অফুরন্ত কল্যাণ ও খায়ের অর্জনের মাস। বিশ্ব মানুষ এ মাস থেকে যত বেশি কল্যাণ অর্জন করে, ভালো কাজের শপথ নেয়, আর কোনো মাসে এ রকম সুন্দর পরিবেশে এত সুন্দর সুযোগ ঘটে না। তাই  রমজানকে উম্মতের মাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি রইল শাবান। রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস শাবান। শাবান যেন একা হয়ে না যায় তাই নবী (সা.) শাবানকে নিজের মাস বলে ঘোষণা করেছেন।  তাহলে কি শাবানের কোনো মাহাত্ম্য নেই? এমনি এমনিই শাবানকে তিনি নিজের মাস বলে ঘোষণা করেছেন? না, বিষয়টি তেমন নয়। শাবানেরও মাহাত্ম্য আছে। রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী হলো শাবান। শাবানের সিঁড়ি না ভেঙে রজব ও রমজানের মিলন হয় না। তেমনি আল্লাহ ও বান্দার মাঝে রয়েছেন মুহাম্মাদ (সা.) নামক নূরের সিঁড়ি। এ সিঁড়ি না বেয়ে কোনোভাবেই বান্দা ও আল্লাহর মাঝে প্রেমের সেতু গড়ে  ওঠে না, উঠতে পারে না। তাই আমরা বলতে পারি, রজব ও রমজানের সেতু যেমন শাবান, তেমন আল্লাহ ও বান্দার মাঝেও প্রেমসেতু হলেন মুহাম্মাদ (সা.)। তাই রসুল (সা.) শাবানকে নিজের মাস বলে ঘোষণা করেছেন। নবী (সা.) আরেকটি হাদিসে বলেছেন, ‘রজব হলো বীজ বপনের মাস। শাবান পানি ও সার দেওয়ার মাস। আর রমজান ফসল ঘরে তোলার মাস।’ এ ফসল হলো ইবাদতের ফসল। ভালো কাজ ও ভালো কিছু অর্জন করতে হলে অবশ্যই রজব থেকেই সাধনা করতে হবে। শাবানে কোমর বেঁধে নেমে পড়তে হবে। আর রমজানে কৃষক যেমন হাসতে হাসতে ফসল ঘরে তোলে তেমন আমাদেরও হাসতে হাসতে ইবাদতের ফসল ঘরে তুলতে হবে। এখানে একটি সূক্ষ্ম বিষয় লুকিয়ে আছে। ফসল বপন ও পরিচর্যার মতোই ফসল তোলাও কিন্তু কম কষ্টের নয়। কিন্তু কৃষক যখন ফসল তোলে তখন সে কোনো কষ্টই অনুভব করে না। উল্টো তার মুখে থাকে আনন্দের হাসি। চোখে থাকে তৃপ্তির ছায়া। কেন? কারণ, ফসল বপন থেকে শুরু করে তোলার আগ পর্যন্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করার কারণে পরিশ্রম তার গা সওয়া হয়ে যায়। তাই ফসল তুলতে আর তেমন কষ্ট হয় না বললেই চলে। মুমিন যখন রমজানের জন্য দুই মাস আগেই পরিশ্রম শুরু করে, তখন রমজানের পুরো সময় ইবাদতে ডুবে থাকা তেমন কষ্ট মনে হয় না তার কাছে। সহজেই সে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করতে পারে। তাই রজব আমাদের যেভাবেই যাক গেছে, আজ আমরা রমজানের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি, তবেই শাবানের বরকত ও রমজানের কল্যাণ আমাদের নসিব হবে। হাদিসের কিতাবগুলোয় পাওয়া যায়, শাবানে রসুল (সা.) কোমর বেঁধে ইবাদত করতেন। পুরো মাসটিই তিনি নফল রোজায় যাপন করতেন। আমাদেরও উচিত শাবানকে রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে বেশি বেশি ইবাদতে লেগে যাওয়া। আল্লাহতায়ালা আমাদের তাওফিক দিন।

 

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর