মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, যখন তোমার নামাজ শেষ হয়ে যায়, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ তথা হালাল রিজিক অনুসন্ধান কর (সূরা জুমআ) অর্থাৎ ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে জীবন, উপকরণের পেছনে ছুটে চলা এবং তা অর্জন করার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রাখাকে ফরজ ইবাদত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অপরদিকে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, অন্যান্য ফরজ ইবাদতের মতো হালাল রিজিক অন্বেষণ করাও ফরজ। আর এ জন্যই জীবন উপকরণের সন্ধানে মানুষকে বিভিন্ন পেশায় শ্রম বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। যারা শ্রম সাধনা করে জীবিকা নির্বাহ করে তারাই প্রকৃত শ্রমিক। কিন্তু আধুনিক সময়ে শ্রমিক বলতে সাধারণ কর্মচারী, দিনমজুর, মেথর, কুলি, তাঁতি, মুচি, জেলে, ধোপা, রিকশাচালক এবং হেলপার ইত্যাদি পেশাজীবীকে বোঝায়। তারা সব যুগেই অবহেলিত, বঞ্চিত ও নির্যাতত শ্রেণি হিসেবে সমাজে বাস করত এবং সমাজের মানুষগুলো তাদের নিচু শ্রেণির মানুষ হিসেবে জানত। মানবতার একমাত্র জীবনাদর্শ ইসলামই সর্ব প্রথম এসব শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের শ্রমিককে ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি দিয়ে দেবে। এভাবে ইসলাম শ্রমিককে মর্যাদার আসনে উন্নীত করেছে। শ্রমিক কাজ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে তার মজুরি আদায় করার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। এর মর্মকথা হলো একজন শ্রমিক যখন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কারও অধীনে কাজ করে তখন তার কষ্টের সীমা থাকে না। কিন্তু যখনই সে কাজ শেষে ঠিকমতো পারিশ্রমিক হাতে পায় তখনই তার সব খরচ মিটিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে। হজরত বিল্লাল, খাব্বাব, মুযাইর, যায়েদ, উসামা (রা.) সবাই দাস শ্রমিক ছিলেন। কিন্তু তাদের সামাজিক মর্যাদা ছিল অনেক ঊর্ধ্বে। নবীজী (সা.) হজরত বিল্লাল (রা.)-কে ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন এবং হজরত উসাবিন যায়েদ (রা.)-কে ইসলামের প্রথম যুব সেনাপতি নিযুক্ত করে দাস শ্রমিকদের সর্বোচ্চ আসনে আসীন করেন। তার কোনো উম্মত কর্তৃক যেন কোনো শ্রমিককে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে না পারে সে জন্য মহানবী (সা.) কঠোরভাবে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন এভাবে, মহান আল্লাহ বলেছেন কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সঙ্গে আমার ঝগড়া হবে। ১. যে ব্যক্তি আমার নামে চুক্তি করে ভঙ্গ করে। ২. যে ব্যক্তি স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করে। ৩. যে ব্যক্তি শ্রমিকের দ্বারা কাজ পুরোপুরি আদায় করে নেয় অথচ তার পুরোপুরি পারিশ্রমিক আদায় করেনি। (বুখারি শরিফ)।
লেখক : খতিব, হিজবুল বাহার জামে মসজিদ, মোল্লারটেক উত্তরা, ঢাকা।