রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বেদখল খালগুলো উদ্ধার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়নের দৃষ্টিগ্রাহ্য তোড়জোড় নেই বললেই চলে। ফলে ভারি বৃষ্টিপাতের পর পানি নিষ্কাশনের অভাবে জলাবদ্ধতা অনিবার্য হয়ে পড়ছে। রাজধানীর প্রাকৃতিক খালগুলোর বড় অংশ অপদখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে অপদখলকৃত খালগুলো উদ্ধার বা খননের বদলে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন খাল খননের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। ঢাকা ওয়াসার হিসাবেই ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত রাজধানীতে ৫৪টি খালের অস্তিত্ব ছিল। বেশির ভাগ খালের মধ্যে পারস্পরিক যোগসূত্র ছিল, এগুলোর সংযোগ ছিল রাজধানী লাগোয়া প্রধান চারটি নদ-নদীর সঙ্গে। সূত্রাপুর লোহারপুল হয়ে বুড়িগঙ্গা, মোহাম্মদপুরের বছিলা হয়ে বুড়িগঙ্গা, উত্তরার আবদুল্লাহপুর হয়ে তুরাগ, উত্তরখান হয়ে তুরাগ, খিলক্ষেত ডুমনি হয়ে বালু ও মানিকনগর হয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গে সংযোগ ছিল খালগুলোর। সেসবই এখন বিস্মৃত অতীত মাত্র। সরকার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর মধ্যাঞ্চলে দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল সমন্বিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও হাতিরঝিলের পানি নিষ্কাশনের সহজ মাধ্যম রামপুরা খাল সংস্কার ও দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সেগুনবাগিচা খালের ওপর বক্স কালভার্ট তৈরি করে তার ওপর রীতিমতো স্থায়ী সড়কপথ গড়ে উঠেছে। সেগুনবাগিচা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এ বক্স কালভার্ট প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় তা পানি নিষ্কাশনের যোগ্যতা হারিয়েছে। আবদুল্লাহপুর খাল ছিল রাজধানীর একাংশের পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম। রাস্তা ও রাজউকের প্লটের কারণে খালটি এরই মধ্যে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে এখন ছোট নালায় পরিণত হয়েছে। উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের লেকের একাংশ ইতিমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে আবর্জনা ফেলার কারণে। মান্ডা খাল ছিল রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের অন্যতম মাধ্যম। দখলদারদের কবলে পড়ে এ খালটি সংকুচিত হতে হতে ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। মোহাম্মদপুরের বছিলা, মগবাজারের পরীবাগ, আরামবাগ, রাজারবাগ, নন্দীপাড়া ও বাউখার খাল ইতিমধ্যে অস্তিত্ব হারিয়েছে। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে অপদখলকৃত খালগুলো উদ্ধার ও খননের উদ্যোগ নিতে হবে। সেটিই হবে সেরা সমাধান।