শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

কেন যেন আজকাল মা-বাবাকে বড় বেশি মনে পড়ে

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

কেন যেন আজকাল মা-বাবাকে বড় বেশি মনে পড়ে

মাহে রমজানের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আল্লাহ রব্বুল আলামিন রমজানের সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে আমাদের শিশুর মতো পূত-পবিত্র করে তুলুন। সেই সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি নিবেদন— রোজার মাসে আমাদের ভালো থাকতে দিন। সাধারণ ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলন যাতে আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায় মেহেরবানি করে তা দেখুন, কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করুন। অথবা যা করতে চান করুন। কোনো অবস্থাতেই এভাবে ঝুলিয়ে রাখবেন না। এইচ টি ইমাম অথবা মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কথায় কাজ হবে না। অযথা আর নিজের ক্ষতি নিজে করবেন না।

১৩ মে রবিবার ছিল বাবার ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। কী করে দেড় যুগ চলে গেল মনে হয় এই তো সেদিন। বাবা আমাদের মতো সন্তানদের আদর-যত্ন করতেন না। যা করার তিনি তার ঢঙে করতেন। আজও আমার পিঠের কাপড় উঁচু করলে বাবার বেতের দাগ দেখা যাবে। কত চড়-থাপ্পড় লাথি-গুঁতো মেরেছেন হিসাব নেই। আমি আমার ছেলেমেয়েদের কখনো শক্ত হাতে ধরিও না যদি ব্যথা পায়। যতটা পারি বুকে আগলে রাখি। সব আবদার হয়তো রক্ষা করতে পারি না। কিন্তু কিছু বললে হৃদয় দিয়ে চেষ্টা করি। তাদের আবদারও খুব একটা বেশি নয়। যা একটু-আধটু জোর-জুলুম করার তা ছোটটাই করে। বড় ছেলে দীপ মাটির মানুষ, কুঁড়িও অনেকটা তেমনি। কুশিটাই যা বকাঝকা রাগারাগি করার করে। ব্যাপারটা আমাদের ভালোই লাগে। বাবা আমাকে শাসন করতেন, মারধর করতেন, তার পরও ডাক দিয়ে মাথায় হাত দিলে সারা দুনিয়া আমার হতো। আমার ছেলেমেয়ের তেমন হয় কিনা জানি না। কিন্তু আমি তাদের যেমন ভালোবাসি তারাও যে আমাকে কম ভালোবাসে না তা বুঝতে পারি। আমার স্ত্রী নাসরীন উপযুক্ত ছিলেন না। কিন্তু একসঙ্গে থাকলে, একজন আরেকজনকে মায়া করলে, ভালোবাসলে, সম্মান দিলে কোনো দূরত্ব বা পার্থক্য থাকে না। এখন আমাদের স্বামী-স্ত্রীতে তেমনটাই হয়েছে। পেটের সন্তান যেমন মা ফেলতে পারে না, সন্তানও মাকে ছাড়ে না। ঠিক তেমনি আমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক।

একসময় বাবা ছিলেন রাজপুত্রের মতো। কোনো অভাব-অভিযোগ ছিল না। তার বাবা আমার দাদু আলাউদ্দিন সিদ্দিকী মহাত্মা গান্ধী, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু, বল্লভ ভাই পেটেলের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। তিন বছরে রেখে আগেই তার মা চলে গিয়েছিলেন, ৪০-৪৬ বছর বয়সে হঠাৎ দাদু মারা গেলে বাবা একেবারে এতিম হয়ে যান। তখন আমাদের ভাই-বোনের মধ্যে লতিফ সিদ্দিকী ছাড়া আর কারও জন্ম হয়নি। আমাদের দুই মায়ের ১৫ সন্তান। এখনো ১০ জন জীবিত। কেন জানি কারও বাবা-মায়ের জন্ম-মৃত্যু দিন মনে থাকে না। আমি আবার এসব ভুলতে পারি না। কবরের পাশে কেমন যেন একটা হাহাকার লাগছিল। জানি এখন আমারও বাবা-মায়ের পাশে শয্যা নেওয়ার সময় হয়েছে। কখন চলে যাব জানি না। বাবা-মায়ের পায়ের কাছে পারিবারিক গোরস্থানে জায়গা রেখেছি। সেখানেই শেষ শয্যা নিতে চাই। জোহরের নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে হাত তুলে প্রার্থনা করেছি, দয়াময় বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন তামাম দুনিয়ার মুসলমান, তাঁর সব বান্দাকে তিনি যেন বেহেশতবাসী করেন।

আমার জীবনে মুক্তিযুদ্ধ খুবই গৌরব ও সম্মানের। আবার ভীষণ কষ্টের। মানুষ অত কষ্ট করতে পারে এখন ভাবলেও অবাক লাগে। সেদিন আবদুল হাই সালাফির মাদ্রাসা মাঠে জনসভা ছিল। হাই সালাফির বা মওলানা পাড়া বাজার পর্যন্ত পাকা রাস্তা। দুই জায়গায় ১০০ ফুট ভাঙা পেরোতেও অসুবিধা হচ্ছিল। অথচ ২০-২২ বছর আগে এক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় হতেয়া গিয়েছিলাম, সে এক অভাবনীয় বৃষ্টির মধ্যে কাদামাটিতে মাখামাখি হয়ে। যে রাস্তায় তখন মহিষের গাড়ির পক্ষেও চলা ছিল অসম্ভব। সেই রাস্তায় জহুরুল ইসলামের দেওয়া রকি নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন পাহাড়ে গাড়ি দূরের কথা অনেকের খুব একটা মোটরসাইকেলও ছিল না। সময় মানুষকে বদলে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় একদিন দুই আহতকে কাঁধে তুলে প্রায় এক মাইল পাড়ি দিয়েছিলাম। কী করে পেরেছিলাম এখন ভাবলে নিজের কাছেও অবাক লাগে। ১৬ আগস্ট হাতে-পায়ে গুলি খেয়ে দেড় শ মাইল হেঁটে সীমান্তে বারাঙ্গাপাড়া সাত মাইলের রওশন আরা ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। ছোট ভাই বেল্লাল হাঁটতে পারছিল না। বাবুল কোনোভাবে চলছিল। বাবা ছিলেন সব থেকে বয়সী। কিন্তু তিনি একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। বেল্লালকে তবু কাঁধে নেওয়া সম্ভব ছিল, বাবাকে তেমন সম্ভব ছিল না। দু-এক জায়গায় ঘোড়ায় করে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। অভ্যাস না থাকলে ঘোড়ায় চড়া হাঁটার চাইতে কষ্টের। অনভ্যস্তরা ঘোড়ায় চড়লে শরীর ব্যথায় জর্জরিত হয়ে যায়। বাবাকে নিয়ে দারুণ বেকায়দায় পড়েছিলাম। তবু আল্লাহ রহম করেছিলেন পাকিস্তানি হানাদারদের চোখে ধুলো দিয়ে আহত শরীরে দেড় শ মাইল হেঁটে সীমান্তে গিয়েছিলাম। সেখানে অসাধারণ সম্মান, যত্ন ও গুরুত্ব পেয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে জীবনের সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে আল্লাহর রহমত ও তাঁর দয়ায় নানা ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে সফল হয়েছিলাম। সারা জীবন আল্লাহকে ভরসা করেছি, এখনো করি। তাই ডানে-বাঁয়ে খুব বেশি দেখি না, চিন্তাও করি না। আল্লাহ যখন যতটুকু দিয়েছেন সেটুকু নিয়েই খুশি থেকেছি। এখনো যা পাই তাতেই খুশি। বুকের ভিতর অব্যক্ত যন্ত্রণা লুকিয়ে রাখতে পারি না দেশের দুরবস্থার কারণে, শুধু এই যা কষ্ট। তা ছাড়া বেশ ভালোই আছি। তবে প্রতিদিন একের পর এক সাথীদের মৃত্যু সংবাদ পাগল করে তোলে। বড় বেশি কষ্ট হয়।

বলা হয় বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের সরকার। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের দুরবস্থা দেখলে শরীর-মন শিউরে ওঠে। ১০ মে বৃহস্পতিবার জীবনে প্রথম সখীপুর উপজেলা পরিষদ অফিসের নতুন ভবনে গিয়েছিলাম। অসাধারণ চমৎকার উপজেলা পরিষদ ভবন। ঢুকেই দোতলায় ডানে-বাঁয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউএনওর দফতর। শুধু দুই দফতর সাজানো-গোছানোর জন্যই ১১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। দেশ স্বাধীন না হলে এর কিছুই হতো না। অথচ কেউ স্বাধীনতার অর্থ বোঝে না। সবাই শুধু চায়। আমাদের প্রথম বাজেট ছিল ৫০০ কোটি টাকা। আমি যখন এমপি তখন ছিল ৬৮ হাজার কোটি, এবার ৪ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। কত ব্যবধান! গিয়েছিলাম ইউএনওকে দেখতে এবং দু-চার জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার দুর্দশার কথা জানাতে। তার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান ’৭১-এ যেমন ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ-প্রতিরোধ সংগ্রামেও তেমন ছিল। আমি যখন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করি তখনো ছিল। বড় বড় যারা চিন্তা-ভাবনা করতে পারেন তারা না থাকলেও যারা উম্মি যারা নিজের ভালোমন্দ বোঝে না দেশ নিয়ে পাগল থাকে সে রকমই এক পাগল। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদানের শুরু থেকেই সে পেয়ে আসছে। সে মারা গেলে তার পাগল স্ত্রীকে ভাতা দেওয়া হয়েছে। নির্বিবাদে সে ভাতা তুলে সংসার চালিয়েছে। হঠাৎ কয়েকজন ইউএনওর কানে পানি দিয়েছে শাজাহান মুক্তিযোদ্ধা নয়। তাই তার ভাতা বন্ধ করতে হবে। কথার সঙ্গে সঙ্গে ভাতা বন্ধ। যারা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নেতা-নেত্রী হিসেবে দৌড়াদৌড়ি ছোটাছুটি করে তারা টাকা চেয়েছিল ৪০ হাজার। যার ২০ হাজার সমাজসেবা অফিসারের, বাকি তাদের। সে টাকা দিতে অস্বীকার করায় ভাতা বন্ধ। আমাকে জানালে মাননীয় মন্ত্রীকে বলেছিলাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ভাতা দিয়ে দিতে বলেছিলেন। তার কথামতো সাবেক ইউএনও দয়া করে ভাতা দিয়েছিলেন। বর্তমান ইউএনও একজন মহিলা। তার চালচলন ভালোই লেগেছে। কিন্তু চিন্তা-চেতনা-চৈতন্য পরিষ্কার মনে হয়নি। তার সঙ্গে দুই দিন দেখা, এক দিন কথা। তিনি আমাকে বোঝাতে চেয়েছেন কারও কারও সঙ্গে কথা বলে তার মুক্তিযোদ্ধা মনে হয় আবার কাউকে কাউকে মনে হয় না। মুক্তিযুদ্ধের পর যার জন্ম তার যদি কারও কারও সঙ্গে কথা বলে মুক্তিযোদ্ধা মনে হয় তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরে যাওয়া উচিত। শাজাহানের স্ত্রী ডালিমনকে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডাররা কাগজপত্র দিতে বললে লালবই, নীলবই যা যা ছিল সব দিয়ে দেয়। টাকা না দেওয়ায় সে বই-পুস্তকও এখন কমান্ডাররা দিচ্ছে না। এসব নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগায় ডিসিকে বলেছিলাম। ডিসি ভালো মানুষ, ইউএনওর সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করেছিলেন। সমাজসেবা অফিসার সেখানে ডালিমনের ফাইল এনেছিলেন। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কীসের ভিত্তিতে একজন গরিব মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর পাওনা ভাতা বন্ধ করেছিলেন? সমাজসেবা অফিসারের চাকরি সাত মাস। প্রথম পোস্টিং সখীপুরে। ইউএনও-ও সখীপুরে প্রথম। খুব একটা কাজকর্ম বোঝেন বলে মনে হলো না। ফাইলে কোনো অভিযোগ নেই, মৌখিক কথাবার্তার ভিত্তিতে একজন গরিব মানুষ যার নুন আনতে পান্তা ফুরায় তার ভাতা বন্ধ রেখেছিলেন। ফাইলের পাতা গুনে দেখেছি সব মিলে ১৯ পৃষ্ঠা। তার ২ পৃষ্ঠা দুই সমাজসেবা অফিসারের নোট। একসময় মনে হতো দেশের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করবেন। কিন্তু প্রায় সব অফিসেই কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করেন না, মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর খবরদারি করেন। ইউএনও এবং সমাজসেবা অফিসারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বরাদ্দ টাকা আপনারা ইচ্ছা করলেই কি বন্ধ করতে পারেন? শাজাহানের স্ত্রীর নামে যে টাকা এসেছে সে টাকা ব্যাংক বন্ধ রেখেছিল। কিন্তু কেন? কীভাবে? সোনালী ব্যাংকের অথর্ব ম্যানেজার জবাব দিতে পারেননি। তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমার অ্যাকাউন্ট থাকলে আমি চেক দিলে টাকা থাকলে টাকা না দেওয়ার আপনার কোনো ক্ষমতা আছে? আমার অ্যাকাউন্টের টাকা আমার চেকে না দেওয়ার ক্ষমতা যদি আপনার না থাকে তাহলে একজন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার অ্যাকাউন্টের সরকারি টাকা বন্ধ রেখেছিলেন কী করে? কোনো জবাব দিতে পারেননি। কীভাবে জবাব দেবেন, থাকলে তো দেবেন। কেন এমন হয় বা কেন এমন হবে। এটা নিয়ে যতটা সম্ভব দেখব। সরকারের সঙ্গে মতবিরোধ আছে, তা থাকতেই পারে। কিন্তু দেশের সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই। আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান চাই, দেশের মানুষের সম্মান চাই। আমি চাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশের মালিক না হয়ে মানুষের প্রকৃত সেবক হবেন। রাষ্ট্র তাদের ওপর যখন যে দায়িত্ব দেবে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন এর বেশি কিছু চাই না।

৭ মে আমার এক খুবই প্রিয় সহকর্মী আবদুস সালাম সিদ্দিকী ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার জানাজায় দাঁড়িয়ে বুকটা ভেঙে খানখান হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে কিছু বলতে গিয়ে তার বড় ভাই যখন অঝরে কাঁদছিলেন তখন কেমন যেন লাগছিল। আবদুল আউয়াল সিদ্দিকী ছিলেন নেতা, সালাম সিদ্দিকী কর্মী। আউয়াল সিদ্দিকী শিক্ষিত, সালাম সিদ্দিকী অর্ধশিক্ষিত। আউয়াল সিদ্দিকী তত্ত্বাবধান করতেন, সালাম সিদ্দিকী গায়ে-গতরে কাজ করতেন। সখীপুরের অনেক বড় বড় নেতার চাইতে মুক্তিযুদ্ধে সালাম সিদ্দিকী কোনো অংশে কম করেনি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তেমন কিছু না ভেবেই মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি করেছিল। ইতিহাস স্বীকার করতে গেলে সারা দেশের সঙ্গে টাঙ্গাইলের মুক্তিযুদ্ধের কোনো মিল হবে না। টাঙ্গাইলের শতকরা ৯৯ জন মুক্তিযোদ্ধা কাদেরিয়া বাহিনীর। বাতেন বাহিনী শুনি। কিন্তু বাতেন বাহিনী নামে কোনো বাহিনী ছিল না। ছোটখাটো মুজিববাহিনী ছিল যার কমান্ডার ছিলেন আলমগীর খান মেনু। কাদেরিয়া বাহিনীর অনুমতি নিয়ে নানা ধরনের ৭২টি অস্ত্র তারা পল্টনে জমা দিয়েছিল। এই সালাম সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধু নিহত হলে আমার সঙ্গে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ সংগ্রামে জড়িয়ে ছিল। প্রতিমাবংকীর হাকিম মাস্টারের কাছে অস্ত্র ছিল। ধরা পড়ে জেল খেটেছিল। তারা তাদের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তুলতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর কাদেরিয়া বাহিনী হওয়ায় জেল খাটা, এখন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী আর কাদের সিদ্দিকী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, তাই তাদের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ পড়া, কাজটা খুব একটা ভালো নয়। সেদিন প্রতিমাবংকী মাদ্রাসা মাঠে জানাজায় তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দেওয়ায় খুবই মর্মাহত হয়েছি। সালাম সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধা না হলে তার বড় ভাই আউয়াল সিদ্দিকী কীসের মুক্তিযোদ্ধা, সালাম সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধা না হলে আমি কাদের সিদ্দিকী কীসের মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু এর বিচার কে করবে? দেশবাসী? দেশবাসী ক্ষমতাহীন। সরকার? সরকার নির্বোধ। সত্য অসত্যের পার্থক্য তাদের কাছে অর্থহীন। তারা যা ভাবে তাই সত্য, তারা যা ভাবে না তা মিথ্যা। এ যে সত্য নয়, এ যে কত বড় অর্থহীন বিভ্রান্তি কেউ বোঝে না, বুঝতে চায় না।

হামিদুল হক এমন দুরবস্থায় চলে গেল আপনারা তার জন্য কিছুই করলেন না। ইউএনওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তিনি অবলীলায় বলেছিলেন, কেউ আমাকে জানায়নি। সখীপুরে একজন মাত্র বীরপ্রতীক। তার অবস্থা ইউএনওকে জানাতে হবে, ইউএনও নিজে থেকে কিছুই জানবেন না এই হলো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ দোষ তাদের নয়, দোষ আমাদের, আমরা যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করি তাদের। কী নিদারুণ আর্থিক কষ্ট নিয়ে হামিদুল হক বিদায় নিয়েছে সে শুধু পাক পরোয়ারদেগারই জানেন। এরও আগে স. ম. আলী আজগর যাকে সখীপুরের প্রাণ বলা চলে। শওকত মোমেন শাজাহান পরবর্তীতে এমপি হয়েছিল। সে কারণে একটা অবস্থান ছিল। কিন্তু স. ম. আলী আজগরের মতো মানুষ সখীপুরে ছিল না। এখনো নেই। তার ছেলেমেয়েরা মানুষ হয়নি তাই তাকে তুলে ধরতে পারেনি। সখীপুর পাইলট স্কুলের সভাপতি হিসেবে একবার সভাপতির ভাষণ দিয়েছিলেন। তার ভাষণ শুনে আমি অভিভূত হয়েছিলাম। এর আগে এমন চমৎকার ভাষণ কোথাও শুনেছি বলে মনে হয় না। কত বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের ভাষণ শুনেছি, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের ভাষণ, নিলাম সঞ্জীব রেড্ডি, এমনকি বাংলাদেশের প্রিয় প্রণব মুখার্জির কত ভাষণ শুনেছি। কিন্তু স. ম. আলী আজগরের সেদিনের সেই ভাষণ এর চাইতে কোনোমতেই নিম্নমানের মনে হয়নি। অথচ সেই মানুষটি উপযুক্ত মর্যাদা পেল না। একসময় সখীপুর ছিল প্রাণের আধার। জমি-জমার অভাবনীয় দাম বৃদ্ধিতে সখীপুরে অনেকে আর মানুষ থাকেনি, কেউ কেউ অমানুষও হয়েছে। যারা ছিল সখীপুরের আদি বাসিন্দা, তারা বিতাড়িত। বাইরের লোকজন এসে সখীপুর দখল নিয়েছে। নিজের জেলা নিজের এলাকার বাইরের লোকজনই বেশি। এখন আর সখীপুরে খুব বেশি ঘুঘু ডাকে না, লাল কাদামাটি ধুইয়ে নানার বাড়িতে জুতজাত হয়ে বসে পিঠা খাওয়ার মতো অবস্থা হয় না। সবই কেমন যেন মেকি মেকি আধুনিক অন্তহীন মনে হয়।

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

 

 

সর্বশেষ খবর