মঙ্গলবার, ২২ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

মুক্তিযোদ্ধাদের কথা কি শুধু মুখে, নাকি বুকেও

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

মুক্তিযোদ্ধাদের কথা কি শুধু মুখে, নাকি বুকেও

পবিত্র মাহে রমজানে দয়াময় প্রভু আমাদের পবিত্র করে তুলুন, গুনাহমুক্ত করুন। ১৪ মে সখীপুরে হামিদুল হক বীরপ্রতীক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম সিদ্দিকীর স্মরণসভা ছিল। ব্যাপক সাড়া না থাকলেও বেশ ভালো সমাগম ছিল। উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, ইউএনওসহ অনেকেই ছিলেন। তবে তেমন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছিলেন না। কাদেরিয়া বাহিনীর উদ্যোগে স্মরণসভাটি ছিল একেবারেই ভিন্ন ধরনের। আমিও প্রাণ খুলে বলার চেষ্টা করেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি পলে পলে পদে পদে অবহেলা দেখে সত্যিই খুব খারাপ লাগে। একজন বীরপ্রতীকের শেষকালে কেউ তার খবর রাখল না। কী নিদারুণ অবহেলায় শেষ কটা দিন তিনি পাড়ি দিলেন ভেবে পাই না। সালাম সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মান পেল না। একসময় মনে হতো বঙ্গবন্ধুর অনুসারী আর মুক্তিযোদ্ধা এ দুটো নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলবে না, তুলতে পারবেও না। মুক্তিযুদ্ধে আমার অঞ্চলে আর কেউ ছিল না। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, তাদের কাছে অবহেলিত হইনি। কিন্তু এখন যখন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে অবহেলিত হতে হয়, তখন বড় বেশি খারাপ লাগে। সালাম সিদ্দিকী শুধু মুক্তিযুদ্ধে নয়, ’৭৫-এ প্রতিরোধ সংগ্রামেও শরিক হয়েছিল। যে কারণে ভীষণ নির্যাতন ভোগ করেছে। স্বাধীনতার পর সখীপুরের সবাই ছিলেন আমার ভক্ত-অনুরক্ত। তাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হত্যাকারীরা সখীপুরের ওপর বড় বেশি অত্যাচার করেছে। মুখ ফুটে কথা বলতে পারে এমন কেউ ছিল না, যাকে অত্যাচার করেনি। আমরা মুজিব কলেজ করেছিলাম। কলেজ হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখান থেকে চারদিকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ার কথা। কিন্তু মুজিব কলেজে আর্মিরা ক্যাম্প করে এমন অমানবিক নির্যাতন করেছিল যা সখীপুরের মানুষের হৃদয়ে এক কালো ক্ষত হয়ে আছে। এক কালো মান্নান নামের জল্লাদ কতজনকে যে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করেছে তার কোনো হিসাব-নিকাশ ছিল না। বলতে গেলে বড়সড় কোনো লোকই ছিল না যে আমার কর্মী হিসেবে সমর্থক হিসেবে নির্যাতিত হয়নি। অনেকের গায়ে এখনো নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। সালাম সিদ্দিকীর গায়েও তেমন ছিল। তাই বঙ্গবন্ধু মারা গেলে আমি তার প্রতিবাদ করায় কাদেরিয়া বাহিনীর তেমন কেউ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম লেখাতে পারেনি। নাম না লিখিয়ে যে অত্যাচার, নাম লেখালে জীবনই থাকত না। এ অসুবিধা কাউকে বোঝানো যায়নি। টাঙ্গাইলে ছয়-সাড়ে ছয় হাজার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা আছে। কিন্তু কাদেরিয়া বাহিনীর নেই। এর আরও কারণ ছিল। স্বাধীনতার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাড়ে ১৭ হাজার মুক্তিযোদ্ধার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সে তালিকা যে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে এটা অনেকেই জানত না। মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা আছে এটা ভেবেই মুক্তিযোদ্ধারা তেমন উচ্চবাচ্য করেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ শেষে ’৯০-এ দেশে ফিরলে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে কথা উঠতে থাকে। আমিও কমবেশি চেষ্টা করি। আর যাই হোক তখন এখনকার মতো অত অবহেলা ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব ছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আমার কথার দামও ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থা দেখে একসময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী দাবি করেছিলাম। আমার বোন অনেক সহজে অনেক শক্ত কথা বলে ফেলেন। আমাকে গালমন্দ করায় খুবই বিরক্ত হয়েছিলাম। আমি দুই হাজার টাকা সম্মানী ভাতার সঙ্গে আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা চেয়েছিলাম। গালাগাল করলেও দুই-তিন শ টাকা ভাতা চালু করেছিল; যা এখন বাড়তে বাড়তে ১০ হাজারে ঠেকেছে। যেটা ৫০ হাজার হলে একটা মানানসই কিছু হতো। শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নয়, যুদ্ধাহতদের ভাতা আগেই ছিল। খেতাবপ্রাপ্তদেরও সম্মানী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে জটিলতার শেষ নেই। একজন মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্ত হিসেবে ভাতা পাওয়া উচিত। সেখানে একজনের এক কলমের খোঁচায় তিন ক্যাটাগরির যে ভাতা বেশি শুধু সেই একটাই একজন মুক্তিযোদ্ধা পাবে। এ এক বিচিত্র কাণ্ডকারখানা। একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সরকারি তালিকায় নাম না থাকলে কতটা খারাপ লাগে ৭ মে, ২০১৮ সালাম সিদ্দিকীর জানাজায় দাঁড়িয়ে মরমে মরমে উপলব্ধি করেছি। এই তো আর কদিন মুক্তিযোদ্ধা আমরা কেউ থাকব না। মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে অপ্রিয় করে তোলা হয়েছে আমরা চলে গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান কতটা কী থাকবে সে তো শুধু আল্লাহই জানেন। তবে যতকাল বাংলাদেশ থাকবে ততকাল মুক্তিযোদ্ধাদের সবার ওপরে সম্মান থাকা উচিত। আদৌ থাকবে কিনা সেই সন্দেহ প্রতি মুহূর্তে কুরে কুরে খায়। সে কষ্ট সহ্য করা মুক্তিযুদ্ধে গুলি খেয়ে আহত হওয়ার চাইতেও বেদনার। নানা প্রশ্ন বুকে নিয়ে হামিদুল হক ও সালাম সিদ্দিকীর স্মরণসভা শেষ হয়েছিল। রাত ৮টায় ঢাকার পথ ধরেছিলাম। ভেবেছিলাম ১০টা-সাড়ে ১০টায় পৌঁছে যাব। কিন্তু তা হয়নি। অনেক বেশি সময় লেগেছিল। সময়ই জীবন। একজন মানুষ কতটা সময় আর বাঁচে। কাজ-কর্ম করে পরিবার-পরিজন নিয়ে সময় কাটাবে সেই সময় যদি রাস্তায় নষ্ট হয় তাহলে জাতীয় উন্নতি কী করে হবে। চেষ্টা করি কিন্তু কেউ বুঝতে চায় না। সখীপুর থেকে গাড়ি ছাড়তেই এক দুর্বিপাকের কথা শুনলাম। আমার ভাতিজা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজে পড়ে। তাকে এ পর্যন্ত কোনো দিন কোনো ব্যাপারে সহযোগিতা করতে হয়নি। তার স্কুলে পড়া, এসএসসি পরীক্ষায় বাবা-মা যথেষ্ট চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাকে কোনো ব্যাপারে তেমন সাহায্য করতে হয়নি। নকলের কথা তো নয়-ই। গোল্ডেন পেয়ে এসএসসি পাস করেছে। কী কারণে ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষায় ভালো করেনি। আমার স্ত্রীকে বলে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল। সাধারণত ৩টা-সাড়ে ৩টায় ফেরে। সেদিন তখনো বাড়ি ফেরেনি। সবাই অস্থির। চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম সাদামাটা ছেলে কেন বাড়ি ফেরেনি। তার বাবা তো পাগলের মতো। একটু পরপর ফোন আসে। আমার মনে হয় এই বুঝি বাড়ি ফেরার খবর এলো। কিন্তু না, কোনো খবর নেই। সেভাবেই বাড়ি ফিরে দেখি এক হুলুস্থুল কারবার। বেগমের প্রথম ভাষণ, ‘দেখো তো, ছেলেমেয়েরা কী করে। খারাপ লাগে না?’ ওভাবেই কিছু খেয়ে শুয়ে পড়েছিলাম। সারা রাত ঘুম হয়নি। শুধু চিন্তা আর চিন্তা। এমন একটা সাধারণ হাবাগোবা ছেলে কেন বাড়ি ফেরেনি। কোনো দুর্ঘটনা বা অন্য কিছু। ফোন নিয়ে যায়নি, ফোন বাড়িতেই। সকালে কয়েকজন কলেজে গিয়েছিল। পরীক্ষা ভালো হয়নি। গোল্ডেন পাওয়া ছেলে কেন পরীক্ষা ভালো হবে না। কিন্তু হয়নি। পরীক্ষা ভালো হয়নি শুনে একটা ভাবনার খোরাক পেলাম। ছয়-সাত বার বাড়ি পালিয়েছি। স্কুল পালিয়েছি তারও বেশি। বাড়ি পালানো কলাকৌশল অনেকের চাইতে ভালো জানি। একটা আশার আলো পেলাম। ছেলের বাবাকে ডেকে বললাম, চিন্তা করিস না। মনে হয় ফিরে আসবে। কোনো অসুবিধা হয়নি। সেদিন সারা দিন আত্মীয়স্বজন এখানে-ওখানে খোঁজাখুঁজি করে। কেউ কেউ শ্যামলীর কাছে দেখা গেছে বলে জানায়। একইভাবে চলল পরদিন। রোজা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চাঁদ দেখা না যাওয়ায় সৌদি আরবে রোজা হয়নি, আমাদের হবে কী? খুবই ক্লান্ত ছিলাম। একটু শুয়ে পড়েছিলাম। ৩টার দিকে বেগম হাসতে হাসতে বলল, ‘পাওয়া গেছে।’ কী পাওয়া গেছে? ‘তাকে পাওয়া গেছে।’ কই? ‘বাড়ি চলে গেছে।’ ঘূর্ণিপাকে নিমজ্জমান নৌকা যেন কূলে ভিড়ল। না পাওয়ার বেদনা মুহূর্তে কেটে গিয়ে সব পাওয়ার এক মহাানন্দে বুক ভরে উঠল। আল্লাহকে হাজার শুকরিয়া জানালাম। আল্লাহ যে আমায় সবদিক থেকে সাহায্য করেন, সম্মান রাখেন এখানেও তার এক প্রমাণ পেলাম। আগের রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম। অসুস্থ ছিলেন তাই যাওয়া হয়নি। পরদিন রাতে যাব ঠিক করেছিলাম। রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর যাওয়ার কথা। সেখান থেকে ফিরলেই যাব। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমার দৈন্যের কথা বলতে হয়নি। আগেই আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার খবর দিয়েছেন। তবে আমার ভাতিজা পালিয়ে আর কিছু না করুক বুড়ো বয়সে কেউ হারিয়ে গেলে কত জ্বালা তা বুঝবার একটা সুযোগ করে দিয়েছে। বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতাম। আবার হয়তো ফিরে আসতাম কিংবা ধরে আনত। আমার কষ্ট হতো দু-এক দিন না খেয়ে থাকার। কিন্তু আমার জন্য আর কারও যে কষ্ট হতো তা কোনো দিনই বুঝতাম না। ছেলেটি সে কষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে। বাবা-মায়ের অবস্থা, বোনের অবস্থা। নিজের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। সবকিছুতে কমবেশি শিক্ষা থাকে। তিনটা দিন যে কীভাবে গেছে কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। তিনটা দিন পার হয়েছে খুবই কঠিনভাবে। কত কষ্ট করেছি, কত দুঃখ করেছি বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে সর্বহারা হয়েছি। কিন্তু তবু কোনো দিন এ ধরনের কষ্ট চিন্তাও করিনি। সে এক নির্মম অভাবনীয় কষ্ট।

১৯ মে ছিল বিএনপির ইফতার পার্টি। কদিন আগেই দাওয়াত পেয়েছিলাম। এর আগে বরকতউল্লা বুলু দাওয়াতপত্র নিয়ে আসতেন। এবারও তিনি এসেছিলেন। মানুষ হিসেবে ভালো। আবদুল আউয়াল মিন্টুকে নিয়ে কথা ওঠায় তাকে ফোনে মিলিয়ে দিয়েছিলেন। আবদুল আউয়াল মিন্টুকে যতদূর জানি ফোন ধরেই বড়ভাই বলে চিৎকার করে ওঠেন। সামনে পেলে লেখাপড়া নিয়ে কথা বলেন। কৃষিতে গভীর আগ্রহ। অন্যান্য উন্নত দেশে একটা গাভী সারা বছরে ৫০০ থেকে ৭০০ লিটার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারও বেশি দুধ দেয়। আমাদের দেশে ১০০, ১৫০ লিটারের বেশি দেয় না। এটা কী করে ৪০০-৫০০ তে নেওয়া যায় এ নিয়ে চেষ্টা করছেন। উন্নত বীজ তৈরি করছেন। এসব কাজে তার আগ্রহকে সবসময় সম্মান করি। সরকার, সমাজ, রাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া এতটা করা সত্যিই প্রশংসার বিষয়। এখানে রাষ্ট্র যদি সমর্থন করত তাহলে তারা কী যে করতেন ভাবাই যায় না। ইফতারির দাওয়াত দিতে এসে দেশের কথা জানার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কোথায় যেন কোনো ইফতারির ব্যবস্থার জন্য ভালো চাল-বুট-আদা এসব ব্যবস্থার জন্য যত উদগ্রীব ছিলেন যতবার ফোন ধরেছিলেন আমার সঙ্গে কথা বলার অত আগ্রহ ছিল না। এমনিতে আমার দোষ। কারও কাছে গিয়ে ফোন ধরি না, কেউ কথা বলতে এসে ফোন ধরলে ভালো লাগে না। জনাব বরকতউল্লা বুলুর ফোন ধরাও তেমন ভালো লাগেনি। তবু জাতীয়তাবাদী দলের নেতা, দাওয়াত দিতে এসেছেন, সম্মান না করে কি পারা যায়। তাই যতটা করার করেছি। দলীয়ভাবে আলোচনা হয়েছিল ইফতারিতে যাব না। দল যাবে, অন্যরা যাবে। কিন্তু বিএনপির অনেকের সঙ্গেই কমবেশি পরিচয় আছে, বন্ধুত্বও আছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সোজা-সরল ভালোমানুষ হিসেবে জানি। তাকে ভালোবাসি, বিশ্বাস করি। এক পর্যায়ে তিনি এমনভাবে বলছিলেন যে, না করার উপায় ছিল না। যেহেতু আমি রাজনীতি করি, সেহেতু ব্যক্তিগত অনুরোধে শেষ পর্যন্ত গিয়েছিলাম। তবে বিএনপির ইফতারিতে সবসময় যা হয় এবারও তাই হয়েছে। আমাদের দলের ১০ জনকে দাওয়াত করেছিল। বছর তিনেক আগে একবার গিয়ে চেয়ার পাইনি। অনেক কষ্ট করে আমার বসার জায়গা করেছিলেন। তারপর দুই ইফতারিতে যাইনি। এবারও যেতাম না। এবার গিয়েও দলের জন্য নির্দিষ্ট কোনো টেবিল পাইনি। আ স ম আবদুর রবরাও পাননি। এটা কোনো ভালো লক্ষণ নয়। সামনে বসেছিলেন আমানউল্লাহ আমান ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিনু। যতটা সম্ভব আন্তরিকতার কোনো অভাব ছিল না। ইফতারির ১৫-২০ মিনিট আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসেছিলেন হাত ধরে ওপরে মূল টেবিলে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন। আমি জোর হাতে ক্ষমা চেয়েছিলাম। ইফতারিতে এসেছি, রাজনীতি করতে নয়। আ স ম আবদুর রব তানিয়া ভাবীকে নিয়ে পাশের টেবিলে বসেছিলেন। একেবারে শেষ পর্যায়ে এসেছিলেন স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ প্রবীণ চিকিৎসক বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি মূল টেবিলেই বসেছিলেন। ফখরুল ইসলাম আলমগীর চমৎকার আবেদন রেখেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার অভাব তিনি সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পেরেছিলেন এবং নিখাদ একটি জাতীয় ঐক্যের যে প্রয়োজন তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। বাইরের লোক হিসেবে সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী দুই কথা বলেছেন। তিনি যেমনি বলেন তেমনি বলেছেন। মুত্তাকির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। একপর্যায়ে যা আমাদের কথা, দেশের কথা, দেশের আপামর জনসাধারণের কথা তা বলতে গিয়ে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ থাকলে বিএনপির অসুবিধা, বিএনপি ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের অসুবিধা। তাই এমন কিছু হওয়া উচিত যাতে আওয়ামী লীগ বিএনপির কারও কোনো অসুবিধা না হয়। দেশে শান্তি ও ভারসাম্য থাকে।’ বর্ষীয়ান মানুষ হিসেবে তার বক্তব্যকে গুরুত্ব না দিয়ে পারা যায় না। জোটবদ্ধ অনেকেই যদিও এ বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। তা তারা করতেই পারেন। কিন্তু চৌধুরী সাহেবের কথা মোটেই মূল্যহীন নয়। তবে আমার মনে হয়েছে তিনি যা কিছু বলেছেন সবকিছুর পরও খালেদা জিয়ার কল্যাণ কামনা করা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। বেগম খালেদা জিয়ার নাম একবারও মুখে নেননি। এটা যদি মনে না থাকা অথবা স্বাভাবিক কোনো কারণে হয়ে থাকে তা এক কথা আর সম্পূর্ণ ইচ্ছা করে যদি প্রধান টেবিলে বসে বেগম খালেদা জিয়ার নাম না নিয়ে থাকেন তাহলে তা অন্য কথা।...

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর