মঙ্গলবার, ২২ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রতারণার নাম বোতলজাত পানি

নজরদারি কর্তৃপক্ষ জেগে উঠুক

পানির অপর নাম জীবন। সে পানি নিয়ে চলছে প্রতারণা। ওয়াসা নগরবাসীর জন্য যে পানি সরবরাহ করছে তার মানও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। ওয়াসার পানির পাইপলাইন লিকেজ হয়ে তাতে স্যুয়ারেজ লাইনের ময়লা পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা থাকায় অনেকেই নিরাপদ ভেবে ব্যবহার করছে জারের পানি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, জারের পানি বিক্রি করে বিভিন্ন পানি বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান দুই হাতে টাকা আয় করলেও সে পানিও নিরাপদ নয়। বিএসটিআইর তথ্যমতে, রাজধানীতে প্রতিদিন নানা ব্র্যান্ডের বোতলজাত পানি বিক্রি হয় প্রায় ৫ কোটি লিটার। জারজাত মিনারেল ওয়াটার বিক্রি হয় ১৫ কোটি লিটার। জারজাত পানির বেশির ভাগই নকল। রাজধানীর কয়েক কোটি মানুষ এ পানির ক্রেতা। নকল জেনেও মানুষ যেমন এসব পানি কিনে খাচ্ছে, জেনেশুনেও কেউ মানহীন পানি বিপণনকারীদের বাধা দেওয়ার সাহস করছে না। দিনের পর দিন চলছে এসব কারখানা। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাজারে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হওয়া সাতটি কোম্পানির বোতলজাত পানি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেসবের কোনোটাই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত নমুনার সঙ্গেও এসব বোতলজাত পানির সামঞ্জস্য রাখা হয়নি। প্রয়োজনীয় লেড, ক্যাডমিয়াম ও জিঙ্ক উপাদানের অস্তিত্ব মেলেনি। এ পানিতে আয়রন, পিএইচ, ক্লোরিন, ক্যালসিয়াম-ম্যাগনেশিয়ামও আছে নামকাওয়াস্তে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের পরীক্ষাগারে বোতলজাত পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ‘অতি নিম্নমানের পানি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সারা দেশে বর্তমানে ২৮৭টি বৈধ পানি বোতলজাতের কারখানা থাকলেও শুধু রাজধানীতেই পানির জার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। সেসব কারখানায় পানির মান রক্ষার কোনো বালাই নেই। গবেষকদের গবেষণায় রাজধানীতে বিভিন্ন কোম্পানির বিপণনকারী পানিতে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি জনস্বাস্থ্যের জন্য নিঃসন্দেহে এক হুমকি। বোতলজাত পানিতে বিএসটিআই নির্ধারিত মান না থাকার ঘটনাও উদ্বেজনক। প্রশ্ন হলো, কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় বছরের পর বছর এ ধরনের ক্ষতিকর ও মানহীন পানি বাজারজাত করা হচ্ছে কীভাবে। যে পানি ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির চেয়ে অদৌ মানসম্মত নয়, তা কেন বাড়তি দামে কিনে ভোক্তারা দিনের পর দিন প্রতারিত হবেন? এসব নজরদারির কোনো কর্তৃপক্ষই কি দেশে নেই?

সর্বশেষ খবর