বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

আমানতের খেয়ানত মোনাফেকের নামান্তর

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

আমানতের খেয়ানত মোনাফেকের নামান্তর

বান্দার হকের ব্যাপারে ইসলাম আপসহীন দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। বলা যায়, মানবাধিকারের সব কিছুই বান্দার হকের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইসলামে পারস্পরিক আমানতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন : ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর ও তাঁর রসুলের এবং জেনেশুনে নিজেদের পারস্পরিক আমানতের খেয়ানত কর না’ (সূরা আনফাল-২৭)। এ আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে ইমাম ওয়াহেদি (রহ.) বলেন : বিশিষ্ট সাহাবি হরজত আবু লুবাবা (রা.)’র ব্যাপারে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। মুসলমানগণ যখন বনু কুরায়যাকে অবরোধ করে রেখেছিলেন, আর বনু কুরায়যার মহল্লায় লুবাবার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা অবস্থান করছিল। রসুল (সা.) তখন কোনো এক বিশেষ প্রয়োজনে আবু লুবাবা (রা.)কে বনু কুরায়যার কাছে পাঠালেন। কুরায়যা গোত্রের লোকেরা জানতে চাইল : আবু লুবাবা! সা’দের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা যদি বের হয়ে আসি, তাতে আমাদের কি পরিণতি হবে বলে তুমি মনে কর?’ আবু লুবাবা (রা.) আপন গলার দিকে ইশারা করে বোঝাতে চাইলেন, তোমাদের সবার গলা কেটে ফেলা হবে, কাজেই তোমরা তা করতে যেও না। তার এ আচরণ ছিল আল্লাহ ও রসুলের খেয়ানতের পর্যায়ভুক্ত। আবু লুবাবা (রা.) নিজেই স্বীকারোক্তি করেন, ‘আমি পা স্থানচ্যুত করার আগেই বুঝতে সক্ষম হলাম, আমি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের খেয়ানত করে ফেলেছি। এরপর হজরত আবু লুবাবা (রা.) দীর্ঘ ছয় দিন মসজিদে নববির একটি কাঠের খামের সঙ্গে নিজেকে বেঁধে রাখেন এবং তওবা মঞ্জুর হওয়ার ঘোষণা আসার পরই তিনি বাঁধনমুক্ত হন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : আল্লাহ বান্দাদের জন্য যা কিছু (যে বিষয়গুলো) ফরজ করেছেন, তাই আল্লাহর আমানত।’ অর্থাৎ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তোমরা আল্লাহর দেওয়া ফরজ আদেশ-নিষেধ ভঙ্গ বা অমান্য কর না। হজরত কালবি (রা.) বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রসুলের অবাধ্যচারিতাই হচ্ছে খেয়ানত। আল্লাহর ফরজকৃত বিধানের ব্যাপারে প্রত্যেকেই আমানতদার। ইচ্ছা করলে সে তা খেয়ানত করতে পারে, আবার রক্ষা করতেও পারে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউই তা জানবে না। উল্লিখিত আয়াতে ‘তোমরা জেনেশুনে’ কথার অর্থ-নিঃসন্দেহে তোমরা জান যে, এটা আমাদের আমানত। আল্লাহ আরও বলেন : নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা খেয়ানতকারীকে সুপথ প্রদর্শন করেন না। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন রসুল (সা.) বলেছেন : ‘মোনাফেকের চিহ্ন তিনটি : যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং যখন তার কাছে কিছু গচ্ছিত রাখা হয়, তখন তা খেয়ানত করে (বোখারি ও মুসলিম)।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে পারস্পরিক আমানতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের তৌফিক দান করুন।  আমিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর