সোমবার, ২৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

কে হতে পারেন বাংলাদেশের মাহাথির

সুনীল শুভ রায়

কে হতে পারেন বাংলাদেশের মাহাথির

‘কে হতে পারেন বাংলাদেশের মাহাথির’— শিরোনামে এ নিবন্ধটি লেখার অভিপ্রায় হলো— স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীর একটি নিবন্ধ পাঠ করে। ১৯ মে ২০১৮ তারিখে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার খোলা কলামে নূরে আলম সিদ্দিকী ‘একজন মাহাথির আমাদেরও প্রয়োজন’ শিরোনামে যে লেখাটি লিখেছেন- তার প্রেক্ষাপটেই আমার এ প্রয়াস। বলার অপেক্ষা রাখে না, মালয়েশিয়ার নির্বাচনে মাহাথির মোহাম্মদের বিজয়ে বিশ্ব রাজনৈতিক গগনে এক নতুন বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। এটা এক বিরল দৃষ্টান্তও বটে, যা ইতিহাসে ঠাঁই নেবে স্বর্ণাক্ষরে।

আমাদের বাংলাদেশেও তেমন একটি আবহ সৃষ্টি হয়েছে পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং জরুরি প্রয়োজনীয়তার তাগিদে। তাই যথার্থভাবেই নূরে আলম সিদ্দিকী সাহেব বলেছেন— ‘একজন মাহাথির আমাদেরও প্রয়োজন’। কিন্তু সেই প্রয়োজন কীভাবে মিটবে বা কাকে দিয়ে মিটাতে চান সে নামটি বলতে আটকে গেলেন কেন? কোনো মাহাথির মোহাম্মদ হঠাৎ করে নাজিল হয় না। তার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হতে পারে অনেক আগে থেকে। মালয়েশিয়ায়ও তাই হয়েছে। অতীত এবং বর্তমান প্রেক্ষিত মিলিয়ে বাংলাদেশের ন্যূনতম সচেতন একজন মানুষের কাছেও যদি জানতে চাওয়া হয় যে, ‘কে হতে পারেন বাংলাদেশের মাহাথির’— নির্দ্বিধায় তার উত্তর আসবে- তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। জনাব সিদ্দিকী এ নামটি বলতে পারেননি। পারবেন না— সে কথাও জানা। মন বললেও মুখ বলবে না। তবে বলেছেন ভিন্নভাবে অন্য দৃষ্টিতে। আলোচনার প্রয়োজনে তার কিন্তু দৃষ্টিকোণ এখানে তুলে ধরছি। তিনি লিখেছেন— “মাহাথির মোহাম্মদের বিজয়ে বাংলাদেশে প্রচণ্ড উল্লসিত হয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার উল্লাসের বিশেষ কারণ হলো- তিনি তার দলের কর্মী, নেতৃবৃন্দ এবং প্রান্তিক জনতাকে জানান দিতে চান- দুই নেত্রীর অপশাসন, দুঃশাসন, একনায়কতান্ত্রিক মানসিকতা ও দুর্নীতির অতল গহ্বর থেকে তিনিও বাংলাদেশকে টেনে তুলতে পারেন। এটি তার ব্যক্তিতগত প্রত্যাশা। কিন্তু বাংলার সাধারণ মানুষ এমনকি তার নিজ দলের নেতা-কর্মীরাও আদৌ উজ্জীবিত, অনুপ্রাণিত বা উদ্বেলিত নন। কারণ, মাহাথির মোহাম্মদের যে নিষ্কলুষ ভাবমূর্তি মালয়েশিয়াতে সুপ্রতিষ্ঠিত, বাংলাদেশে তা শুধু এরশাদ সাহেবেরই নয়, কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্বই মাহাথির মোহাম্মদের মতো এখন নিষ্কলুষ ভাবমূর্তি বহন করেন না”।

নূরে আলম সিদ্দিকীর যে উদ্ধৃতি এখানে উল্লেখ করলাম— তার শেষ বাক্যটি নিয়েই আলোচনা শুরু করতে চাই। আপনি যদি মনে করেন, বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্বই মাহাথির মোহাম্মদের মতো নিষ্কলুষ নন, তাহলে মাহাথিরের প্রয়োজনটা মেটাবেন কাকে দিয়ে, কাকেই বা আপনি বরমাল্যে ভূষিত করবেন? সুতরাং মন্দের হলেও তার মধ্য থেকে ভালোটা আপনার বেছে নিতে হবে। মেলাতে হবে মাহাথিরের সঙ্গে কার ন্যূনতম মিল আছে। মানুষের মধ্যে একজনের সঙ্গে আরেকজনের সামঞ্জস্য থাকতে পারে, একেবারে মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। মালয়েশিয়ার সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পূর্ণ মিল হবে না। নীতি-আদর্শ-সংস্কার-সমৃদ্ধি-উন্নতি-অগ্রগতির সঙ্গে একটা সাদৃশ্য অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। তারা মালয় জাতি, আমরা বাঙালি। তাদের মনমানসিকতা-চিন্তা-চেতনা-চরিত্রের সঙ্গে আমাদের মিল হবে না। তারা একটি দল বা একজন নেতাকে একনাগাড়ে ২২ বছর ক্ষমতায় রাখতে পারে। কোনো সরকারকে দুই বছর ক্ষমতায় দেখার পরই তাকে টেনে নামানোর প্রবণতা সৃষ্টি হয় না। মালয়রা উন্নয়ন-সমৃদ্ধি পছন্দ করে বলে সরকারকে কাজ করার সুযোগ দেয়। সরকারের কাজ দেশ ও জনগণের স্বার্থের প্রতিকূলে চলে গেলে ভোটের মাধ্যমে তাকে সরিয়ে দেয়। আমরা কি তাই করি? কিংবা করতে পারি? পারার ইচ্ছা থাকলেও কি তার সাধ্য আছে? অবস্থাদৃষ্টে কখনো কখনো মনে হয়, আমরা উন্নয়ন-সমৃদ্ধি কিংবা ভাগ্যের পরিবর্তন বেশি পছন্দ করি না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের তীব্র সমালোচকরাও স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, তার নয় বছরের শাসনামলে দেশে যে উন্নয়ন-সমৃদ্ধি হয়েছে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে আর কোনো সরকারের আমলে তা হয়নি। এ কথা বিবেচনা করলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদেরও একনাগাড়ে ২২ বছর ক্ষমতায় থাকা উচিত ছিল। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও অবকাঠামোগত এবং সংস্কারমূলক উন্নয়ন হয়েছে, তবে সার্বিকভাবে দেশের মানুষ শান্তি ও নিরাপত্তা বোধ করেনি। কিন্তু যে দলটি দেশকে কিছু দিতে পারেনি। দিয়েছে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, আন্তর্জাতিকভাবে এনেছে দুর্নীতির চ্যাম্পিয়ন খেতাব আর সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের সার্টিফিকেট, সেই দলটি নাকি এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন হলে নাকি তারাই ক্ষমতায় যাবে। হলেও তা হতে পারে। অন্তত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেখে তো তাই মনে হলো। ওই নির্বাচন কেমন হয়েছে সে বিতর্কে এখন আর যেতে চাই না। জলের তলে জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে যাওয়া মাছটি কত বড় ছিল তার পরিমাপ করে লাভ নেই। ওই নির্বাচনে বিএনপি লক্ষাধিক ভোট পেয়েছে এটাই বিস্ময়। যে বিএনপি নব্বই-পরবর্তী সময়ে দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে খুলনার জন্য দৃশ্যমান একটি কাজও করেনি, যারা আগের মেয়াদে খুলনার মেয়র থেকে কিছুই করতে পারেনি, উপরন্তু যারা ক্ষমতায় থাকলে পদ্মা সেতু নির্মিত হতো না, তার পক্ষেই লক্ষাধিক ভোট পড়েছে এটাই বিস্ময়। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি হয়তো সঠিক প্রার্থী দিতে পারেনি, ছদ্মবেশী ঢুকে পড়ায় বিপর্যয় ঘটেছে। কিন্তু মনে রাখার বিষয় হলো— এদেশে ‘মেয়র’ শব্দটা চিনিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি এরশাদ। খুলনাকে তিনিই সিটি করপোরেশনে উন্নীত করেছিলেন। উন্নয়ন-সমৃদ্ধি-সংস্কারের শত সহস্র নিদর্শনের মধ্যে এটি একটি উদাহরণ মাত্র। আসা যাক, কেন মানুষ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে এদেশের মাহাথির হিসেবে দেখতে চায় সে কথায়। মাহাথিরের সঙ্গে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কোথায় কতটুকু মিল বা অমিল আছে খুঁজে দেখা যাক।

ড. মাহাথির মোহাম্মদ প্রথম ক্ষমতায় এসেছিলেন ১৯৮১ সালে এবং হুসেইন মুহম্মদ ক্ষমতায় এসেছেন ১৯৮২ সালে। অর্থাৎ দুজনের ক্ষমতা গ্রহণ প্রায় সমসাময়িক। তবে ক্ষমতায় আসার পথ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতায় এসেছেন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। আর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এসেছেন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতার মধ্যে এবং দেশের চরম বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য রাষ্ট্রপতির আহ্বানে। এ পথটি সমর্থনযোগ্য না হলেও রাষ্ট্রের স্বার্থ এবং জাতির মঙ্গলের প্রশ্নটি তখন মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধি-সংস্কারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও তাই করেছেন। ফলে দুটি দেশই সমানতালে এগিয়ে যেতে শুরু করেছে। মাহাথির মোহাম্মদের সুবিধা ছিল, তিনি স্বচ্ছন্দে দেশ পরিচালনা করতে পেরেছেন। তিনি হরতাল-অবরোধ-জ্বালাও-পোড়াওয়ের সম্মুখীন হননি। পক্ষান্তরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ওইসব উপকরণের সবটাই মোকাবিলা করতে হয়েছে। মাহাথির নির্বাচন দিয়েছেন জনগণের রায় নেওয়ার জন্য আর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রথম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। মালয়েশিয়ায় নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করে, সেখানে কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয় না। আর বাংলাদেশে নির্বাচন বর্জনের একটা প্রবণতা থাকে। মালয়েশিয়ায় নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটার নিশ্চয়তার থাকে আর এখানে তা থাকে না।

মাহাথির মোহাম্মদ তার দেশের প্রবীণতম রাজনীতিবিদ। তার বয়স এখন ৯২ বছর। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও এখন বাংলাদেশের প্রবীণতম রাজনীতিবিদ। তার বয়স এখন ৮৯ চলছে। শারীরিক সুস্থতার দিক থেকে মাহাথির মোহাম্মদের মতোই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সুস্থ এবং সবল। মাহাথির মোহাম্মদ স্বেচ্ছায় ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশে শান্তি ও গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন মোকাবিলা না করে সাংবিধানিক পন্থায় স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন। মাহাথিরকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পর রাজনৈতিক কারণে জেলে যেতে হয়নি, সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে প্রতিহিংসার শিকার হয়ে রাজনৈতিক কারণে জেলে যেতে হয়েছে। মাহাথির মোহাম্মদ রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে দেশের প্রয়োজনে আবার রাজনীতিতে এবং ক্ষমতায়ও এসেছেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেননি। তিনি দেশ ও জাতির জন্য রাজনীতিতে থেকেছেন, এখনো আছেন এবং ক্ষমতায় যাওয়ার প্রত্যাশা করেন। ধর্মীয় চেতনার দৃষ্টিকোণ থেকে মাহাথির এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের মধ্যে রয়েছে অনেক মিল। মাহাথির মোহাম্মদ ইসলামের একনিষ্ঠ অনুসারী এবং এরশাদ সাহেবও তাই। ধর্মের ক্ষেত্রে মাহাথিরের কোনো গোঁড়ামি নেই, সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদও সেই নীতিতে বিশ্বাসী। ইসলাম সম্পর্কে এ দুই নেতাই একই সুরে কথা বলেন— যেমন- ‘ইসলাম আমাদের জীবনের অংশ। একে পরিত্যাগ করার কোনো সুযোগ নেই। ইসলামের শিক্ষা সমসাময়িক দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ করতে হবে। ইসলাম শুধু সপ্তম শতাব্দীর ধর্ম নয়। ইসলাম অবশ্যই সর্বকালের ধর্ম’।

মাহাথির মোহাম্মদ ২২ বছর ক্ষমতায় থেকে তার দেশকে সমৃদ্ধির উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে তার দেশের জনগণ ১৫ বছরের ব্যর্থতার অবসান ঘটাতে আবার তাকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২২ বছর সময় পাননি, পেয়েছেন ৯ বছর। এ সময়ের মধ্যে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকেও উন্নয়ন-সমৃদ্ধির সঙ্গে পরিচিত করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রশাসনকে শুধু মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাননি বরং জনগণের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-যোগাযোগ-নিরাপত্তা-অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছিলেন। যদি মাহাথিরের মতো হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সময় পেতেন তাহলে এদেশে কোনো গৃহহীন-বাস্তুহারা মানুষ থাকত না। অন্তত গুচ্ছগ্রামে তাদের আশ্রয় হতো। কোনো শিশুকে পথে থাকতে হতো না। ইউনিয়ন পর্যায়েও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত থাকত। মানুষের ন্যূনতম চাহিদা খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকত। গোটা বাংলাদেশ ঢাকা শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত না। সচিবালয় স্থানান্তরিত হতো। প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে দেশ একটি আধুনিক রাষ্ট্রের পর্যায়ে পৌঁছে যেত।

মাহাথির মোহাম্মদকে কেন মালয়েশিয়ায় ক্ষমতায় আসতে হলো। মুখ্য কারণ দুটো— এক. দুর্নীতি, দুই. অর্থনৈতিক বিপর্যয়। মালয়েশিয়ার জনগণ এটা মানতে পারেনি। যে দেশকে মাহাথির সাজিয়েছিলেন সেই দেশ তারই জীবদ্দশায় দুর্নীতি রোগে আক্রান্ত হবে, অর্থনীতিতে বিপর্যয় নামবে তার প্রতিকার হিসেবেই মালয়েশিয়ার জনগণ এ পরিবর্তন এনেছে। মাহাথিরকে অন্তত তার দেশে খুন-গুম-ঘুষ-জীবনের নিরাপত্তাহীনতা-সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি, দলীয়করণ, দখলদারিত্ব, ছিনতাই, ডাকাতি, নারী নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, শিক্ষা ব্যবস্থার পতন, ভেঙে পড়া আইনের শাসন মোকাবিলা করতে ক্ষমতায় আসতে হয়নি। মাহাথির ছোট ছোট কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের মোর্চা করে ক্ষমতায় এসে তার ওয়াদা পূরণ করে চলে যাবেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি দেশ এবং জাতিকে শুধু দিতেই পারবেন, কিছু নেওয়ার প্রয়োজন তার হবে না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবনেও এখন তার নেওয়ার কিছু নেই, শুধু দেওয়ার আছে। অনেকেই বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদই হবেন এদেশের মাহাথির। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ উক্তির সঙ্গে একমত নই। কারণ, এ দুই নেতাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বমহিমায় ভাস্বর। মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার মাহাথির। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের এরশাদ। তাদের যার যার তুলনা তার তার কাছে। মালয়েশিয়ার প্রয়োজনে যেমন মাহাথির মোহাম্মদকে ফিরে আসতে হয় তেমনি বাংলাদেশের প্রয়োজনেও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

পরিশেষে, নূরে আলম সিদ্দিকীর উদ্ধৃতির অংশে আবার ফিরে আসতে চাই। যে প্রেক্ষাপটের কথা উল্লেখ করে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের ক্ষমতায় আসার প্রত্যাশার কথা বলেছেন, সেই প্রেক্ষাপট থেকে দেশকে উত্তরণের পথে নিয়ে যাওয়ার মতো কোনো মাহাথির নাম কি তিনি বলতে পারবেন? মাহাথির মোহাম্মদের এ ঐতিহাসিক বিজয়ে তাকে অভিনন্দন জানানো উল্লসিত হওয়ার বিষয় নয়। এটা শিষ্টাচার। মাহাথিরের বিজয়ে অবশ্যই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পার্টির নেতা-কর্মীরা উল্লসিত-উদ্বেলিত এবং অনুপ্রাণিত হয়েছেন। মাহাথির ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই দলের নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা-বিবৃতিতে মাহাথিরের উদাহরণ টেনে বলতেন যে, সময় পেলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদই হতে পারতেন বাংলাদেশের মাহাথির মোহাম্মদ। এখন নূরে আলম সিদ্দিকীর মতো বরেণ্য ব্যক্তি যদি বাংলাদেশের জন্য একজন মাহাথির মোহাম্মদের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন তাহলে সেক্ষেত্রে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ছাড়া আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজ হোক আর কাল হোক এ কথা তাকে একদিন মানতেই হবে।

            লেখক : সাংবাদিক।

সর্বশেষ খবর