বুধবার, ১৩ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

আরও এক লেখকের হত্যাকাণ্ড

অপরাধীদের খুঁজে বের করুন

আরও একজন বিজ্ঞানমনস্ক লেখক-প্রকাশককে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হাতে প্রাণ হারাতে হলো। গত সোমবার সন্ধ্যার পর মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব কাকালদি গ্রামের তিন রাস্তা মোড়ে সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন শাজাহান বাচ্চু (৬০) নামের মুক্তমনা লেখক। রাজধানীর বাংলাবাজার এলাকার বিশাকা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী শাজাহান বাচ্চু কবি ও সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মুন্সীগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির এই সাবেক সাধারণ সম্পাদক ২০১৫ সাল থেকে জঙ্গিদের কাছ থেকে হুমকি পেয়ে আসছিলেন। সম্ভবত এ হুমকির কারণেই তিনি তার এক সন্তানকে বিশাকা প্রকাশনী পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে নিজে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করতেন। পূর্ব কাকালদি তিন রাস্তার মোড়ে আনোয়ার হোসেনের ফার্মেসির সামনে কথা বলছিলেন শাজাহান বাচ্চু। সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে চারজন লোক এসে তাকে ধরে রাস্তায় নিয়ে আসে। তারা লোকজনকে সরে যেতে বলে এবং ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তারপর শাজাহান বাচ্চুর বুকের ডান পাশে গুলি করে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। শাজাহান বাচ্চু ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন। তার মৃত্যুর পেছনে জঙ্গিবাদীরা দায়ী বলে ব্যাপকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। স্মর্তব্য, আড়াই বছর আগে ২০১৫ সালের শেষদিকে রাজধানীতে একই দিন দুজন প্রকাশকের ওপর হামলা চালায় সন্দেহভাজন জঙ্গিরা। দুই প্রকাশকই ছিলেন বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এর মধ্যে শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনকে গলা কেটে হত্যা করে তার অফিসরুমে তালাবদ্ধ করে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। প্রায় একই সময়ে লালমাটিয়ার সি-ব্লকে প্রকাশনী সংস্থা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে দুর্বৃত্তরা ওই প্রকাশনীর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী ও তার সঙ্গে থাকা তরুণ কবি তারেক রহিম ও ব্লগার রণদীপন বসুকে গুলি করে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়। লেখক অভিজিৎ রায়কে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বইমেলার সন্নিকটে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা গণ্ডির মধ্যে হত্যা করা হয়। আড়াই বছর পর আরও একজন লেখক ও প্রকাশককে তার স্বাধীন চিন্তাধারার জন্য প্রাণ দিতে হলো। দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় খড়্গ হয়ে দেখা দিচ্ছে জঙ্গিবাদের উপাসকরা। আমরা আশা করব শাজাহান বাচ্চু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

সর্বশেষ খবর