বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাহাড়ধসে প্রাণহানি

প্রকৃতির প্রতিশোধ রোধে চাই সচেতনতা

রাঙামাটি ও কক্সবাজারে পাহাড়ধসে মঙ্গলবারে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে। প্রচণ্ড ঝড় ও টানা বৃষ্টিপাতে পাহাড়ধসের ফলে রাঙামাটির সঙ্গে পার্বত্য জেলা বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে নানিয়ারচর উপজেলার সাবেক্ষং ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামে। নিম্নচাপের জন্য রাঙামাটিতে সোমবার সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে। সারা দেশে এ দিন বৃষ্টি হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। এর ফলে পাহাড়ধসে রাঙামাটিতে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১১ জন। পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো হলো— বড়পুলপাড়া, ধর্মচানপাড়া, হাতিমারা, ঘিলাছড়ি ও বুড়িঘাট। রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের একটি যৌথ দল দিনব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে নিহতদের লাশ উদ্ধারে সক্ষম হয়। রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ধসের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো পার্বত্যাঞ্চলে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তরের চেষ্টা চালাচ্ছে। এরপরও এখনো পাহাড়ধসের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। রাঙামাটি জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে বারবার তাগিদ দিচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোয় মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবারের পাহাড়ধসে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তারা সবাই পাহাড়ের আদি বাসিন্দা। পাহাড়ের মতিগতি সম্পর্কে তারা তুলনামূলকভাবে বেশি সচেতন। যে কারণে অতীতে পাহাড়ধসের যেসব ঘটনা ঘটেছে তাতে পাহাড়ি আদিবাসীর সংখ্যা ছিল নগণ্য। এবার ব্যতিক্রম হওয়ায় পাহাড়িদের মধ্যে ধস সম্পর্কে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ধসে প্রাণহানি প্রতিবছরই ঘটছে। নির্বিবাদে পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ সবুজ পাহাড়ের গাছগাছালি নির্মূলের আত্মঘাতী প্রবণতা অনিবার্যভাবে বিপদ ডেকে আনছে। এ বিপদ ঠেকাতে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। পাহাড় কাটা বা পাহাড়ের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট হয় এমন অপতৎপরতা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে শত্রুতাকালে প্রকৃতি যে প্রতিশোধ নেয়— পাহাড়ধসের ঘটনা তারই মর্মান্তিক প্রমাণ। এ বিপদ রোধে সচেতন হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর