শুক্রবার, ২২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

মাদক সব অপরাধের চাবিকাঠি

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

মাদক সব অপরাধের চাবিকাঠি

অধুনা বিশ্বে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হিসেবে যে বিষয়সমূহ দায়ী বলে বিবেচিত, তার মধ্যে অন্যতম হলো মাদক।  এর সর্বনাশা মরণ ছোবলে বিশ্বব্যাপী মানবসভ্যতা আজ বিপন্ন। বিঘ্নিত হচ্ছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা। ব্যাহত হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্রোতধারা। বৃদ্ধি পাচ্ছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ খুন, ধর্ষণের মতো অসংখ্য অপরাধ। মাদকের বিষাক্ত থাবায় প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে কত সম্ভাবনাময় তরুণ, সমূলে বিনষ্ট হচ্ছে কত সাজানো সংসার। আর সমাজের বেশির ভাগ অপরাধের জন্য দায়ী এই মাদকতা। তাই তো বলতে হয়, ‘মাদক তুই মানব সভ্যতার ঘাতক’। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা মদ পান কর না, কেননা তা সব অপকর্মের চাবিকাঠি’ (ইবনে মাজাহ)।

মদ, গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ সব ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। মহান আল্লাহতায়ালা এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন ‘হে মুমিনগণ, নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ধারক তীরসমূহ নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার’ (সূরা মায়িদা-৯০)।

মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর চায় আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে বাধা দিতে। অতএব তোমরা কি বিরত হবে না?’ (সূরা মায়িদা-৯১)।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী পানীয় হারাম’ (সহিহ বোখারি)।

রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমার রব তার মহান ক্ষমতার কসম করে বলেছেন, আমার বান্দাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এক ঢোক মদ পান করবে, নিশ্চয়ই আমি তাকে অনুরূপ দোজখিদের পচা পুঁজ পান করাব’ (মিশকাত)। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) মদের সঙ্গে সম্পৃক্ত দশ শ্রেণির মানুষের ওপর অভিশাপ দিয়েছেন, মদ প্রস্তুতকারী, পানকারী, পরিবেশক, বিক্রেতা, ক্রেতা, উৎপাদনকারী কর্মচারী, উৎপাদক, বহনকারী ও লভ্যাংশ ভোগকারী (মিশকাত)।

মাদক কেবল সামাজিক ব্যাধি নয়, বরং তা মানবদেহের জন্য চরম বিপর্যয়কর। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা পর্যাপ্ত গবেষণার পর এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, মাদক মানবদেহের জন্য একটি ক্ষতিকর পদার্থ। মাদকের ক্ষতিকর ক্রিয়া প্রথমে মুখ হতে শুরু হয়। মানুষের মুখে প্রায় সব সময় এক প্রকার লালা জাতীয় পদার্থ থাকে যা মুখের অভ্যন্তরে সজীবতা ধরে রাখে। কিন্তু মাদক সেবনে মুখের লালা উৎপাদন হ্রাস  পায়।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন ও ইসলামী গবেষক।

E-mail: [email protected]

সর্বশেষ খবর