রবিবার, ২৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাদক পরিহার করুন, স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবুন

আফতাব চৌধুরী

মাদকাসক্তি একটি সামাজিক ব্যাধি, সর্বগ্রাসী মরণনেশা। এ নেশার কারণে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত দেশের লাখ লাখ মানুষ বিশেষ করে যুবসমাজ। মাদকের নীল দংশনে তরুণসমাজ আজ বিপথগামী ও বিপন্ন। এর বিষবাষ্প দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে। মাদকের বিষাক্ত ছোবল গ্রাস করে চলেছে নতুন প্রজন্মকে। ফলে এর বিষাক্ত কামড়ে অকালে ঝরে পড়ছে বহু তাজা প্রাণ। শূন্য হচ্ছে অনেক মায়ের বুক। সে সন্তানহারা মা-বাবার আহাজারিতে দিন দিন ভারি হচ্ছে বাতাস। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোয় এখন শুধুই মাতম। কারা সৃষ্টি করছে এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতি? কারা ছড়িয়ে দিচ্ছে এ ভয়ানক আতঙ্ক? কারা কেড়ে নিচ্ছে মায়ের বুক থেকে তার প্রিয় সন্তানকে? দায়ী কারা? আজ আমরা এমনই এক বৈরী পরিবেশে কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি। জর্জ বার্নার্ড শকে আমরা জানি। তিনি বলেছিলেন, ‘মধ্যযুগের লোকেরা তাদের রুচিসম্মত উত্কৃষ্ট দ্রব্য উৎপন্ন করত বলেই যে বর্তমানের তুলনায় সহজ সুন্দর জীবন যাপন করত, তা নয়। তার প্রধান কারণ তারা মাদকাসক্ত ছিল না। ছাত্রছাত্রী, যুবক-যুবতীদের মাদকাসক্ত ভাব দেখে আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তাত্ত্বিক বিভাগের অধ্যাপক হেরিংটন অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সমাজ, দেশ ও জাতিকে সুস্থ রাখতে হলে ছেলেমেয়েরা যাতে মাদকাসক্ত না হয় সেদিকে প্রতিটি নাগরিকের সচেতন হওয়া উচিত। এ বার্তা বিশ্বের প্রতিটি দেশের সচেতন নাগরিকদের জানিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি মিডিয়ার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। মানবধর্ম ও সমাজব্যবস্থার দৃষ্টিতে নেশাজাতীয় দ্রব্য উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় ও সেবন গর্হিত কাজ হিসেবে পরিগণিত হলেও একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ন্যায়-নীতি বিসর্জন দিয়ে এসব উৎপাদন, বিতরণ ও পাচারের মাধ্যমে আয় করছে প্রভূত অর্থ, গড়ে তুলছে অবৈধ সম্পদ। অথচ এর খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে। আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে বিচরণ করছে সর্বনাশা মাদক। ঘুণ পোকার মতো কুরে কুরে খাচ্ছে মানব অস্থিমজ্জা। অজগরের মতো হাঁ-মুখে খাওয়ার উপক্রম করছে গোটা মানবজাতিকে। এ ভয়ানক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব। অভিভাবকরা আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত। তারা শঙ্কিত কখন মাদকের স্রোতে দিক হারিয়ে নেশার জালে আটকা পড়ে যায় তাদের প্রিয় সন্তান। কখন ছোবল মেরে নেশাগ্রস্ত করে পাঠিয়ে দেয় মরণকূপে। এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে নিজের সন্তানকে রক্ষার জন্য মা-বাবার সঙ্গে পুরো জাতি আজ শঙ্কিত, আতঙ্কিত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মাদক কী? ফেনসিডিল, হেরোইন, কোকেন, সিডাকসিন, ইনোকট্রিন, মরফিন, টেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনল, মেথাডন, বিয়ার, কেনা বিসরেসিন, অ্যাবসলিউট অ্যালকোহল, ভেষজ কেনাবিস, গাঁজা, দেশি-বিদেশি মদ প্রভৃতি। তবে বর্তমানে ফেনসিডিল আর ইয়াবার ব্যবহার হচ্ছে সর্বত্র। এর পরিণাম যে কী হবে, তা নিয়ে ভাবলে শরীরে শিহরণ জাগে। মাদক ব্যবহারে শরীরে স্বল্পমেয়াদি প্রতিক্রিয়া : মাদক রক্তচাপ কমায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা হ্রাস করে। মাদক সেবনে ক্ষুধা ও যৌন অনুভূতি দ্রুত হ্রাস পায়। মতিবিভ্রম ঘটে এবং তার মধ্যে সন্ত্রস্ত ভাব দেখা যায়। শ্বাস-প্রশ্বাস ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়। মাদকসেবী ক্রমে নিস্তেজ ও অবসন্ন হয়ে যায়। হৃত্স্পন্দন বৃদ্ধি পেলে রক্তচাপও বৃদ্ধি পায়। চলাফেরায় অসংলগ্নতা ধরা পড়ে। স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগের ক্ষমতা সাময়িক হ্রাস পায়। তাই যে কোনো মুহূর্তে জীবন বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। চোখ লালচে হয় এবং মুখ শুকিয়ে যায়। উগ্র মেজাজ, নিদ্র্র্রাহীনতা ও রাগান্বিত ভাব দেখা যায়। চামড়ায় ফুসকুড়ি, বমি বমি ভাব এবং নানা পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অধিক মাত্রায় মাদকসেবী মাতালের মতো আচরণ করে এবং হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ে।

সর্বশেষ খবর