রবিবার, ২৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

পরিবহন নৈরাজ্য

ফাইলে বন্দী আশাজাগানিয়া সেই পরিকল্পনা

ব্যক্তি যে কখনো কখনো নিজেই প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠেন তেমনই একজন উত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। তার মৃত্যুতে ঢাকার উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কোনো কোনোটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে চললেও গতির সংকটে ভুগছে। রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন স্বপ্নচারী মেয়র। রাজধানীর ২৪৬টি রুটে চলাচল করে ৭ হাজার ৯৩৭টি বাস। এর মধ্যে গাজীপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে ৩৫ কোম্পানির ১ হাজার ৯৮০টি বাস। বাসগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো রুট স্টপেজ ও ভাড়া নির্ধারণ করে যথেচ্ছভাবে ব্যবসা করায় পরিবহন নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছিল সাধারণ যাত্রীরা। এ যথেচ্ছতার অবসানে মেয়র আনিসুল হক ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামেন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পরিবহন মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রায় ৩০টি বৈঠক করেন তিনি। সবার সমন্বয়ে এগিয়ে নিচ্ছিলেন গণপরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের আগেই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমান মেয়র আনিসুল হক। রাজধানীর গণপরিবহনকে তিনি নির্দিষ্ট ৬টি কোম্পানির আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরো শহরে রুট থাকবে মাত্র ২২টি। প্রতিটি কোম্পানির গাড়িতে হলুদ, সবুজ, বেগুনি, কমলা এ রকম ৬টি রং দিয়ে আলাদা করে দেওয়া হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এক রুটে একটি কোম্পানির গাড়ি চলবে। যাত্রী ওঠানোর প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে প্রতিটি গাড়িতে সমপরিমাণ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে গাড়িতে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলার কোনো প্রয়োজন পড়বে না পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থসংস্থানে আনিসুল হক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। কিন্তু মেয়রের মৃত্যুর পর এ পরিকল্পনা ফাইলবন্দী হয়ে পড়েছে। পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা দূরের কথা অনেকেই পুরনো রুটে নতুন বাস নামানোর পরিকল্পনা করছেন। এমনিতেই রাস্তায় যে কয়েক হাজার ফিটনেসহীন লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলছে সেগুলো রাতারাতি অপসারণ সম্ভব নয়। তারপর একই রুটে নতুন বাস নামলে পরিবহন নৈরাজ্য আরও বাড়বে। স্বপ্নবাজ মেয়র আনিসুল হকের আশাজাগানিয়া পদক্ষেপগুলো এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কর্তাব্যক্তিদের ওয়াদা থাকলেও বাস্তবে তার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না দায়িত্বশীলদের মধ্যে। রাজধানী ঢাকাকে সচল করতেই পরিবহন নৈরাজ্যের অবসান হওয়া দরকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর