রবিবার, ২৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাগরস্নানে মৃত্যুর ছোবল

এই ট্র্যাজেডির অবসান হোক

সমুদ্রস্নান করতে গিয়ে বৃহস্পতি ও শুক্রবার প্রাণ হারিয়েছে তিন তরুণ। এর মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকতে স্নানের সময়। বৃহস্পতিবার জনৈক এম এ কাসেম রাজার মালিকানাধীন অবৈধ পর্যটন কেন্দ্রের সমুদ্রসৈকতে নাজমুল হাসান ইমন ও শাফায়েত হোসেন রাজু স্নান করার সময় হঠাৎ করে আসা ঢেউয়ে ভেসে যায়। এ সময় তাদের বন্ধুরা অবৈধ পর্যটন কেন্দ্রের লোকজনকে উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করার অনুরোধ করলেও কোনো সহায়তা দেননি তারা। শুক্রবার বিকালে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা বাঁশবাড়িয়া সাগরতীর এলাকা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করেন। স্নান করতে গিয়ে প্রাণ হারানো দুই তরুণের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সানারপাড় এলাকায়। তারা পরস্পর খালাতো ভাই। সানারপাড় স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ ও দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল ইমন ও রাজু। শুক্রবার কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে স্নান করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি ছাত্র আরাফাত। চট্টগ্রাম হালিশহরে তাদের বাড়ি হলেও পরিবারের সবাই যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। গ্র্যাজুয়েশন শেষে ভাই-বোনসহ আরাফাত দেশে আসেন ঈদ কাটাতে। কক্সবাজার সৈকতের সিগাল হোটেল পয়েন্টে স্নানে নামার পর পরই ভাটার টানে ভেসে যান তিনি। প্রায় ২০ মিনিট পর পর্যটকদের সহায়তায় অন্য ভাইয়েরা তাকে উদ্ধার করেন। সৈকত থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার সময় প্রাণ হারান এই মেধাবী তরুণ। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রসৈকতে স্নানের সময় প্রাণহানি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৈকতে অননুমোদিত পর্যটন কেন্দ্র খুলে অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পর্যটকদের স্নান করতে উৎসাহ জোগাচ্ছে। ভাটার সময় সৈকতে নামা ঝুঁকিপূর্ণ এবং এ ব্যাপারে নিয়মিত মাইকিং করা হলেও তা অনেক পর্যটক বিশেষত তরুণরা মেনে চলে না। ফলে ট্র্যাজেডির শিকার হয়ে অনেকেই প্রাণ হারাচ্ছে। পরপর দুই দিনে তিন তরুণের মৃত্যু একটি বিয়োগান্ত ঘটনা। সমুদ্রসৈকতের কাছে হাসপাতাল থাকলে আরাফাতকে বাঁচানো যেত বলে তার স্বজনদের আক্ষেপ অনেকের মনেই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে সাগর থাকে উত্তাল। এ সময় পর্যটকদের নিরাপত্তায় বাড়তি নজরদারি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের সমুদ্রসৈকতের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা আশা করব, তিন তরুণের অকালমৃত্যু সংশ্লিষ্ট সবার সম্বিত ফেরাতে অবদান রাখবে। সমুদ্রসৈকতের যেখানে সেখানে পর্যটন কেন্দ্র খুলে যারা অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছেন তাদের দৌরাত্ম্য থামানোরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর