সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ধোঁয়ার মধ্যে দুধ দুধ ঘ্রাণ!

গোলাম মাওলা রনি

ধোঁয়ার মধ্যে দুধ দুধ ঘ্রাণ!

ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার বয়সের পার্থক্য ছিল প্রায় ১০ বছরের মতো। তথাপি আমাদের মধ্যে কেন জানি প্রগাঢ় বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। আমি তখন উঠতি ব্যবসায়ী— আর তিনি ছিলেন রীতিমতো প্রতিষ্ঠিত এবং নামকরা শিল্পপতি। সেই আমলে দু-তিনটি দামি গাড়ি, কয়েকটি প্রাসাদোপম বাড়ি এবং দুহাতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করার নিদারুণ যোগ্যতার সঙ্গে অতিরিক্ত যোগ হয়েছিল তার স্মার্টনেস। কথা বলার দক্ষতা এবং নেতৃত্বগুণ। ফলে তেমন লেখাপড়া না জানা সত্ত্বেও বন্ধু মহলে তাকে সবাই মহাপণ্ডিত এবং সর্বকাজের কাজি হিসেবে তোয়াজ-তদবির করতেন। আর তিনিও অকাতরে ধর্ম-কর্ম, শিল্প-বাণিজ্য, বিয়েশাদি থেকে শুরু করে উড়োজাহাজ, জাহাজ এবং গাড়ি শিল্পের ভূত-ভবিষ্যৎ নিয়ে বন্ধুদের কৌতূহলী নানা প্রশ্নের সিরিয়াস উত্তর দিতেন। একবার আমিও তার কাছে একটি প্রশ্ন করেছিলাম এবং চমৎকার একটি জবাব পেয়েছিলাম যা নিয়েই মূলত আজকের শিরোনাম রচিত হয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার আগে আমার প্রশ্নটির প্রেক্ষাপট নিয়ে সামান্য একটু ভূমিকা দেওয়া আবশ্যক— নব্বই দশকের শুরুতে অর্থাৎ এরশাদ শাহীর পতনের পর বিএনপি সরকারের প্রথম দফার শাসনামলে আমি আমার প্রিয় পেশা সাংবাদিকতা ছেড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছিলাম। আমার যখন গাড়ি কেনার সামর্থ্য হলো তখন আমি ভারি বিপদে পড়ে গেলাম। ঢাকাতে তখন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল খুবই কম। বাসায় যদি কারও একটি টিঅ্যান্ডটির ল্যান্ডফোন এবং কোনো মতে পুরনো ভাঙাচোরা একটি গাড়ি থাকত তবে তার সামাজিক মর্যাদা কত উঁচুতে উঠত তা এই জমানায় কল্পনা করাও দুষ্কর। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন তাকে তোয়াজ-তদবির করে নিজেদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে আনতেন যেন তিনি গাড়িতে করে এসে সংশ্লিষ্ট পাড়া-মহল্লায় নিমন্ত্রণকারীর মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। ঢাকা শহরের তৎকালীন বেশির ভাগ নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তদের এহেন মন-মানসিকতার কারণে উঠতি ধনীরা ধন লাভের সঙ্গে সঙ্গে একটি গাড়ি কেনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতেন। এটাকে যদি আপনি কোনো রোগ হিসেবে আখ্যা দিতে চান তবে নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, আমিও রোগটির দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম।

প্রায় দু-তিন মাস ধরে আমি দোকানে দোকানে ঘুরে গাড়ি দেখতে লাগলাম এবং গাড়িওয়ালা বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে গাড়ির মূল্য, ব্র্যান্ড এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে ধারণা নিতে আরম্ভ করলাম। আমি যে সময়টির কথা বলছি তখন দেশীয় বাজারের শতকরা ৯৫টি ব্যক্তিগত বাহনই ছিল জাপানি রিকন্ডিশনড গাড়ি। অন্যদিকে, নতুন ক্রেতাদের শতকরা ৬০ কিংবা ৭০ ভাগ লোক প্রথম দফায় সরাসরি রিকন্ডিশনড গাড়ি না কিনে পুরনো গাড়ি দিয়ে তথাকথিত ডাট-ফাট বা বড়লোকির জীবন শুরু করতেন। ফলে একদিকে যেমন পুরনো ও ব্যবহৃত গাড়ির জমজমাট বাজার ছিল তেমনি পুরনো গাড়ির ঝক্কি ঝামেলা, প্রতারণা ও দুর্ভোগ-দুর্গতিও ছিল সীমাহীন। ফলে নতুন ক্রেতারা পুরনো গাড়ি কিনতে গিয়ে অভিজ্ঞ মেকানিক্স, গ্যারেজ মালিক কিংবা ব্যবহারকারীদের রীতিমতো পীর হিসেবে মান্যগণ্য করতেন। সুতরাং আমিও অন্য সবার মতো একজন পীরের সন্ধান করতে গিয়ে শেষমেশ আলোচিত বন্ধুটির শরণাপন্ন হলাম।

বন্ধুটির কাছে আমার প্রশ্ন ছিল— আচ্ছা ভাই! গাড়ির ইঞ্জিনটি যে ভালো তা বুঝব কী করে। তিনি বিজ্ঞের মতো জবাব দিতে গিয়ে বললেন— গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে জোরে জোরে পিকাপ মেরে পর্যাপ্ত ধোঁয়া বের করবেন। ভালো ইঞ্জিনের ধোঁয়া হবে নীল আকাশের সাদা মেঘের ভেলার মতো এবং সেই ধোঁয়ার মধ্যে একটা দুধ দুধ ঘ্রাণ থাকবে। আমি বন্ধুটির কথা বিশ্বাস করলাম এবং গাড়ির ইঞ্জিন থেকে বের হওয়া ধোঁয়ার মধ্যে সাদা মেঘের ভেলা ও দুধ দুধ ঘ্রাণ খুঁজতে গিয়ে কী যে বিরল অভিজ্ঞতার শিকার হতে থাকলাম তা বলতে গেলে রীতিমতো একটি মহাকাব্য রচিত হয়ে যাবে। আমি সেই বর্ণনায় না গিয়ে বরং কেন আমার এত বছর পর দুধ দুধ ঘ্রাণযুক্ত ধোঁয়ার কাহিনী মনে এলো তা নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলি—

আমাদের সমাজে ইদানীংকালে আমার বন্ধুটির মতো সবজান্তা শমসেরদের সংখ্যা এতটা মহামারী আকারে বেড়েছে যে, সমাজ সংসারের স্থিতি এবং অস্তিত্ব রীতিমতো হুমকির মধ্যে পড়ে গিয়েছে। আমাদের সমাজের যে লোকটি রাস্তা ঝাড়ু দেন অথবা ফেরি করে পাড়া-মহল্লায় ছাই-নুছনি অথবা মুরগি বিক্রি করেন তিনিও মনে মনে প্রায়ই এমপি, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতি হওয়ার চিন্তা করেন। তিনি একটু সময় পেলেই দেশের রাজনীতি নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করেন এবং বন্ধুমহলে নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করেন। তিনি মনে করেন বর্তমান শীর্ষ-রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ঠিকমতো দেশ চালাতে পারছেন না। তিনি যদি ক্ষমতায় থাকতেন তবে নিশ্চয়ই দৃষ্টান্তমূলক নজির স্থাপনকারী শাসন পদ্ধতি দেশ ও জাতিকে উপহার দিতেন। তিনি প্রায়ই এ কথা ভেবে নিদারুণ মর্মবেদনা অনুভব করেন এবং রাগে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে আফসুস করেন এবং স্বগোক্তি করে বলতে থাকেন— ‘কেন তাকে সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে বঙ্গভবন বা গণভবনে ডেকে নেওয়া হয় না এবং শাসকবর্গ কেন আজ অবধি তার মূল্যবান পরামর্শ গ্রহণ করে নিজেদের ধন্য করেন না।’

উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও আমাদের সমাজের প্রায় সব শ্রেণি-পেশার বিভিন্ন স্তরের নারী-পুরুষ প্রায়ই রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান এবং দেশ জাতির উন্নয়নে নিজেকে সর্বোত্তম এবং যোগ্যতম বিশেষজ্ঞ মনে করেন। তারা তাদের চলাফেরা, চাল-চলন, কথাবার্তা, সামাজিক অনুষ্ঠানাদি এবং একান্ত আলোচনায় সর্বদা নিজস্ব মতামত, মতাদর্শ, সমর্থন ইত্যাদিকে একতরফাভাবে প্রাধান্য দিতে দিতে পুরো দেশকে একটি একনায়কমূলক, উগ্র এবং রক্ষণশীল ভূমিতে পরিণত করার জন্য পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে শুরু করেন। তারা বাস্তবতাকে পরিহার করে স্বপ্নের পেছনে সর্বশক্তি নিয়োগ করে দৌড়াতে থাকেন। বিবেককে বন্দী করে আবেগের বেলুন উড়িয়ে তা দিয়ে জীবন সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন। সমঝোতা, আলাপ, আলোচনা, ধৈর্য-সৈহ্য এবং ন্যায়নীতি পরিহার করে দম্ভ, জোর-জবরদস্তি এবং গোঁয়ারতুমির মাধ্যমে সবকিছু হাসিলের অপচেষ্টার মধ্যে জীবনের সার্থকতা খুঁজে বেড়ান। ফলে সামাজিক সংঘাত, পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং ব্যক্তিজীবনে ঊষরতা এবং অনুর্বরতা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজনীতির বাইরে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সাহিত্য, স্থাপত্য-কলা প্রভৃতি ক্ষেত্রেও অনাহূত, অহেতুক এবং খাজুরে প্রবৃত্তির স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞের সংখ্যা হু হু করে বেড়েই চলছে। সরকারি অফিসের নিম্নমান সহকারী মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারির চেয়ে দিনকে দিন বেশি বুদ্ধিমান ও ক্ষমতাধর হয়ে পড়ছেন। চকিদার-দফাদারেরা থানার ওসিকে পুলিশ অর্ডিন্যান্স শিক্ষা দেওয়ার জন্য হা-পিত্যেশ শুরু করেছেন। ভূমি অফিসের পিয়ন-ড্রাইভার দারোয়ানরা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধি কিংবা সোনালী ব্যাংকের মন্দ ঋণ নিয়ে পঞ্চবার্ষিকী মহাপরিকল্পনার খসরা তৈরিতে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। জীবনে যারা কোনো দিন লেফট রাইট করেননি কিংবা বন্দুক-পিস্তল, বোমা-ট্যাংক ইত্যাদি চালানো তো দূরের কথা একটি ছটকা বা গুলতিও নাড়াচাড়া করেননি তারাও সামরিক বিশ্লেষক হিসেবে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও যুদ্ধকৌশল নিয়ে বড় বড় মহাকাব্য রচনায় হাত দিয়েছেন। জেলে-মুচি-ঝাড়ুদার প্রভৃতি শ্রেণির মন-মানস এবং বোধসম্পন্ন লোকেরা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, মালটিমোডাল ট্রান্স পোর্টেশন, আঞ্চলিক আন্তমহাদেশীয় এবং ট্রান্স প্যাসিফিক ফরেন রিলেশনের ওপর থিসিস সম্পন্ন করে গণমাধ্যমগুলোতে তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান উদগিরণের লাগি সকাল-সন্ধ্যা রাত্রিতে হুমড়ি খেতে আরম্ভ করে দিয়েছেন। পাগলেরা পাগল চিকিৎসার বিশেষজ্ঞ, হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের সহকারীরা এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা মস্তবড় চিকিৎসক এবং পশু হাসপাতালের কম্পাউন্ডের দালালেরা গাইনি বিশেষজ্ঞ রূপে আমাদের সমাজে যে তাণ্ডব চালু করেছে তা আজ আর অতীতকালের মতো কোনো কল্পকাহিনী বা স্বাপ্নিক এবং অবাস্তব কোনো কাহিনীর গীতিনাট্য নয়। থানা-পুলিশ-র‌্যাব এবং বেসামরিক প্রশাসনের অভিযানে যেসব দুর্বৃত্তকে চিকিৎসাপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের কুকর্মের খতিয়ান এখন পর্যন্ত কোনো লেখক-সাহিত্যিক রচনা করার মতো কল্পনাশক্তি বা দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। চিকিৎসার মতো মানবিক কর্মকাণ্ড যেসব পাশবিক কর্মকাণ্ডের কথা শোনা যায় তা শুনলে মানুষ তো দূরের কথা দানবের দেহের পশমগুলো পর্যন্ত ভয়ে খাড়া হয়ে যায়, পশুরা স্তম্ভিত হয়ে অভিসম্পাত আরম্ভ করে দেয় এবং শয়তানেরা অনুশোচনা করতে করতে বীর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

ঘুষ দুর্নীতির ক্ষেত্রে আজব ও অদ্ভুত প্রতারণা শুরু হয়েছে। ইতিপূর্বে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তারা ঘুষ-দুর্নীতি করতেন অতি গোপনে এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে। তারা ঘুষ নিতেন বটে কিন্তু কাজটি করে দিতেন। অতীতের সেই ঘুষ-দুর্নীতির দুর্বৃত্তায়নের ক্রমিক বিবর্তনে এক সময় একাধিক লোকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে একজনের পক্ষে কাজ করা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কারোর জন্যই কাজ না করা এবং প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেন এবং সংশ্লিষ্ট অপকর্মের জন্য বড়াই করা এখন ইতিমধ্যেই নিকট অতীতের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এখনকার টাটকা খবর হলো— ভুয়া কর্মকর্তা-কর্মচারী সেজে প্রতারণার মাধ্যমে বড় বড় বিস্ময়কর সব ঘুষ-দুর্নীতির ঘটনা ঘটাচ্ছেন। এসব ভুয়া কর্মকর্তার দাপট এবং সংখ্যাধিক্যের কারণে সত্যিকার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এক ধরনের অস্তিত্ব সংকটের ভয়ে তটস্ত জীবন কাটাচ্ছেন। এসব ভুয়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাইব্রিড পদ্ধতিতে নিজেদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়িয়ে জ্যামিতিক হারে বংশ বৃদ্ধি ঘটাচ্ছেন এবং পঙ্গপালের মতো দেশের সব শ্রেণি-পেশা, প্রতিষ্ঠান এবং সমাজ সংসারে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছেন। তারা ভুয়া কোম্পানি করে ব্যাংক থেকে যেভাবে ঋণ নিচ্ছেন ঠিক সেভাবে শেয়ার মার্কেট থেকে জনগণের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তারা ভুয়া শিক্ষা সনদ, ভুয়া ভোগ্যপণ্য এবং ভুয়া সেবা বিতরণের জন্য প্রকাশ্যে প্রতিষ্ঠান খুলে পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন পর্যন্ত দেওয়া শুরু করেছেন।

মানুষের উল্লিখিত সীমা অতিক্রমের কারণ খুঁজতে গিয়ে মহামতি সক্রেটিসের আমলের একটি কাহিনী মনে পড়ে গেল। তার জমানায় এথেন্স নগরীর লোকজন একবার কৌতূহলী হয়ে তখনকার বিখ্যাত ডেলফির মন্দিরে ভিড় জমালেন একটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য। তারা মন্দিরের পূজারি বা ওরাকলের কাছে জানতে চাইলেন যে, এথেন্সের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিটির নাম কী? পূজারি তার উত্তরে সক্রেটিসের নাম বলার পর লোকজন সক্রেটিসের কাছে জানতে চাইলেন তিনি কেন এবং কীভাবে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি হলেন! সক্রেটিস নির্লিপ্তভাবে জবাব দিলেন যে, তিনি জানেন না। লোকজন তারপরও পীড়াপীড়ি করতে থাকলে তিনি বললেন— ‘আমি সত্যিই বলছি যে, আমি জানি না, কেন ডেলফির মন্দিরের পূজারি আমাকে সবচেয়ে জ্ঞানী বলে আখ্যা দিলেন। আর তোমরা যদি আমার জ্ঞানের পরিধি সম্পর্কে জানতে চাও তবে আমি বলব যে আমি কী কী বিষয় জানি তার চেয়েও আমি কী কী বিষয় জানি না সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সচেতন ও সতর্ক থাকি।

সক্রেটিস যে বিষয়গুলো জানতেন এবং যা জানতেন না তার পার্থক্য করতে শিখেছিলেন বলেই জ্ঞানের ভুবনে তিনি আজও অমর হয়ে আছেন। অন্যদিকে আমাদের বেশিরভাগ লোকই প্রকৃতপক্ষে জানি না যে, আমরা আসলে কী জানি এবং কী জানি না। ফলে আমরা আমাদের কাজকর্মের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং পরিণতি সম্পর্কে হয় উদাসীন নয়তোবা বেখবর হয়ে থাকি। আমাদের অজ্ঞতার কারণে আমরা প্রায়ই করণীয় বিষয় পরিহার করি এবং নিষিদ্ধ বিষয়াদি করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। আমরা সুখ ছেড়ে অসুখের পানে ধাবিত হই এবং যাত্রাপথে বিনামূল্যে শান্তি বিসর্জন দিয়ে বহুমূল্যে অশান্তি ক্রয় করে থাকি। আমরা বন্ধুসংঘ ত্যাগ করে শত্রুসংঘ লাভের জন্য মরিয়া হয়ে যাই এবং সম্মান লাভের চেয়ে অসম্মানিত হওয়ার বহু পথঘাট, জানালা, দরজা এবং ফাঁকফোকর সৃষ্টি করে ফেলি। আমরা অজ্ঞতার কারণে বিপথে চলি এবং নিজেদের নির্বুদ্ধিতার জালে জড়িয়ে অপরকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে বিপথে ঠেলে দিই। আমরা কেন এসব করি তা যেমন আমরা জানি না— তেমনি অনাগত দিনে জানতেও চাই না। সক্রেটিস হওয়ার সাধ ও সাধ্য কোনোটিই আমাদের নেই।

            লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট।

সর্বশেষ খবর