রবিবার, ৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

বহুবিবাহ ও আইনগত প্রতিকার

অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

বহুবিবাহ ও আইনগত প্রতিকার

সিথির জীবনে এমনটিই ঘটেছিল। ২১ বছরের সংসার জীবন তছনছ করে স্বামী আরেকটি বিয়ে করেন। বিয়ের আগে প্রায় দুই বছর ধরে মহিলার সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত ছিলেন। স্বামীকে ওই পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য সিথির চেষ্টার কমতি ছিল না, কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। সিথির দুটি মেয়ে। ওর বাবা নতুন বউকে নিয়ে নতুন সংসারে সুখেই আছে। টাকার অভাবে দুই মেয়ে কণা ও কথার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। সিথি তার কন্যা দুটি নিয়ে বর্তমান বাবার টানাপড়েন সংসারে কোনোরকম দিনাতিপাত করছেন।  এক স্ত্রীর বর্তমানে আরেকটি বা একাধিক বিবাহ করাকে বহু বিবাহ বলে। ইসলামে বহুবিবাহের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে ইসলাম আবির্ভাবের প্রথমদিকে একটি ভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক বাস্তবতায়। মূলত বিধবা, এতিমদের নিরাপত্তা ও রক্ষার জন্য ইসলামে এ ধরনের প্রতিকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সে সময়কার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ওহুদের যুদ্ধে বহু মুসলিম পুরুষ শাহাদাতবরণ করেন, ফলে স্বাভাবিকভাবে অভিভাবক ও স্বামীহীন নারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতা বোধ করে। এসব নারীর নিরাপত্তার নিশ্চয়তার জন্য বহুবিবাহ প্রথা চালু হয়। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ধারা ৬ মতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের কাছ থেকে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধন হবে না। অনুমতির জন্য ২৫ টাকা ফি দিয়ে সাদা কাগজে চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে এবং আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের অনুমতি প্রদানে যেসব বিষয়ের প্রতি বিবেচনা করা হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো যথা-১. বর্তমান স্ত্রীর বন্ধত্ব, ২. দৈহিক দৌর্বল্য, ৩. দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা এবং ৪. দাম্পত্য অধিকার পুনর্বহালের জন্য কোনো উন্মত্ততা। কোনো পুরুষ যদি সালিশি পরিষদের অনুমতি বিনা দ্বিতীয় বিবাহ করেন তবে তিনি ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৬(৫) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন। তিনি অবিলম্বে তার বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের আশু বা বিলম্বিত দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা তত্ক্ষণাৎ পরিশোধ করবেন এবং মোহরানার টাকা পরিশোধ করা না হলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব আদায়ের মতো আদায় করা হবে। এ ছাড়াও অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে এক বছর পর্যন্ত জেল ও ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড কিংবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পাশাপাশি দণ্ডবিধি আইন ১৮৬০-এর ৪৯৪ এর বিধান মতে, স্বামী যা স্ত্রীর জীবনকালে পুনরায় বিবাহ করেন তবে সে ব্যক্তি যে কোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে যার মেয়াদ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে, তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবে। তবে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা উচিত, বহু বিয়ের মামলায় বাদীকে সফল হতে হলে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, দ্বিতীয় বিয়ের সময় প্রথম বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব ছিল।

লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আইন গ্রন্থ প্রণেতা।

Email:[email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর