বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

অন্ধ গুহায় জীবনের জয়

প্রমাণিত হলো মানুষ মানুষের জন্য

থাইল্যান্ডে ১০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ জলমগ্ন অন্ধকার গুহায় শেষ পর্যন্ত জীবনেরই জয় হলো। একজন উদ্ধারকারী প্রাণ হারালেও দীর্ঘ ১৯ দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে কোচসহ কিশোর ফুটবল দলের ১৩ জন সদস্যকে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এই গুহায় কিশোর ফুটবল দলটি ঘুরতে গিয়েছিল গত ২৩ জুন উষ্ণ আবেগ নিয়ে। তারা সেখানে প্রবেশের পরপরই শুরু হয় ভারি বৃষ্টিপাত। সে বৃষ্টিপাত ও ধারেকাছের এলাকা থেকে আসা স্রোতে জলমগ্ন হয়ে যায় বিশাল গুহা। প্রাণ বাঁচাতে কিশোর দলটি ঠাঁই নেয় শেষ প্রান্তের কিছুটা উঁচু একটি এলাকায়। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে তাদের দিনের পর দিন কাটাতে হয়। গুহায় ঢোকার আগে কিশোর দলটি তাদের সাইকেল ও জুতা রেখে গিয়েছিল গুহার বাইরে। বাড়িতে না ফেরায় তাদের স্বজনরা শুরু করে খোঁজাখুঁজি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষও অনুসন্ধানে ব্রতী হয়। বলা যায়, গুহার মুখে রেখে যাওয়া সাইকেলগুলো তাদের প্রাণ বাঁচায়। অনুসন্ধানকারীরা বুঝতে পারেন কিশোর ফুটবল দল ভিতরে আটকা পড়েছে। তবে পানিভর্তি গুহায় তারা বেঁচে আছে কিনা তা নিয়ে দেখা দেয় সংশয়। নিখোঁজ হওয়ার নয় দিন পর ব্রিটিশ দুই ডুবুরি কিশোর দলটির জীবিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন। তারপর শুরু হয় অভিযান। থাইল্যান্ডের ৪০ জন এবং দুনিয়ার অন্যান্য দেশের ৫০ জন ডুবুরি অংশ নেন ঝুঁকিপূর্ণ এই অভিযানে। প্রথম পর্যায়ে চারজন, দ্বিতীয় পর্যায়ে চারজন এবং তৃতীয় পর্যায়ে পাঁচজনকে উদ্ধার করা হয় জীবন্ত। গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে হেঁটে, কাদা মাড়িয়ে, কখনো চড়াইয়ে উঠে, আবার কখনো পানির নিচ দিয়ে সাঁতরে ওই কিশোরদের বের করে আনা হয়। উদ্ধারকাজের জন্য বাইরে থেকে ওই ফুটবল দলের অবস্থানস্থল পর্যন্ত দড়ি বাঁধা হয়। উদ্ধারের সময় প্রত্যেক কিশোরকে অক্সিজেন মাস্ক পরানো হয়, দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় সামনে থাকা ডুবুরির সঙ্গে। একজন গুহায় বাঁধা দড়ি এবং অক্সিজেনের বোতল নিয়ে যান খুদে ফুটবলারদের কাছে। কোনো সমস্যা হলে সহায়তার জন্য তাদের পেছনে ছিলেন আরেকজন ডুবুরি। মিয়ানমারের সীমান্তের কাছে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ থাম লুয়াং গুহা থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম গুহা হলেও কম চওড়া আর অনেক প্রকোষ্ঠ থাকায় এর ভিতরে চলাচল করা কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। সে ঝুঁকিকে অগ্রাহ্য করে দেশ-বিদেশের উদ্ধারকারী দল মানবতার ডাকে যেভাবে সাড়া দিয়ে উদ্ধারকাজে এগিয়ে এসেছে, তা মনে রাখার মতো ঘটনা। মানুষ মানুষের জন্য— এ সত্যটি ফুটে উঠেছে এই উদ্ধারকাজের মধ্য দিয়ে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর