বুধবার, ১৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে

ইসলাম অকল্যাণের পথ থেকে দূরে থাকতে বলে। এই ঐশী জীবনবিধান মানুষকে সৎ ও সুন্দর পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে দূরে থাকবে। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, সেগুলো কী? তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, জাদু করা, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা এবং ইমানদার সতী-সাধ্বী নারীর ওপর অপবাদ আরোপ করা। বুখারি ও মুসলিম। মুমিনদের মধ্যে উপরোক্ত খারাপ অভ্যাসগুলো থাকলে তা তাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। যে কারণে তা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত মুয়াজ (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ১০টি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন। সেগুলো হলো— ১. যদি তোমাকে হত্যা করা হয় কিংবা জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তবু আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। ২. কখনো পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ো না, যদিও তারা তোমাকে পরিবার-পরিজন ও ধনসম্পদ ত্যাগ করে চলে যেতে আদেশ করেন। ৩. স্বেচ্ছায় ফরজ নামাজ ত্যাগ করো না। কেননা যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে নামাজ ত্যাগ করবে, তার ব্যাপারে আল্লাহর কোনো জিম্মাদারি থাকবে না। ৪. কখনো মদ পান করো না। কেননা তা সমস্ত অশ্লীলতার উৎস। ৫. সাবধান! সবসময় গুনাহ থেকে দূরে থেকো। কেননা পাপের দরুন আল্লাহর ক্রোধ আপতিত হয়। ৬. সাবধান! কখনো জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যেও না; যদিও বা সমস্ত মানুষ ধ্বংস হয়ে যায়। ৭. আর তোমার উপস্থিতিতে যখন মানুষের মাঝে মহামারী দেখা দেবে তখন সেখানেই অবস্থান করবে। ৮. তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করবে। ৯. তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য লাঠি ফেলে দিও না। অর্থাৎ সন্তানদের আদরের পাশাপাশি প্রয়োজনে শাসনও করতে হবে। ১০. আল্লাহর ব্যাপারে তাদের সর্বদা ভীতি প্রদর্শন করো। মুসনাদে আহমাদ। মুমিনদের সব ধরনের মুনাফিকি অভ্যাস থেকেও দূরে থাকতে হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চারটি বস্তু যার মধ্যে থাকবে সে নিরেট মুনাফিক। আর যার মধ্যে সেসবের একটি থাকবে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকির একটি স্বভাব থেকে যাবে— ১. যখন তার কাছে কোনো কিছু আমানত রাখা হয়, সে তা খেয়ানত করে। ২. যখন সে কথা বলে, মিথ্যা বলে। ৩. ওয়াদা করলে তা খেলাফ করে। ৪. এবং যখন সে কারও সঙ্গে ঝগড়া করে, তখন অশ্লীল বাক্য ব্যবহার করে। বুখারি ও মুসলিম।

যে কোনো ইবাদত পালনের সময় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথ-পদ্ধতি অনুসরণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা তাঁর আদর্শ বাদ দিয়ে নিজের অথবা অন্য কোনো ব্যক্তির বুদ্ধি-ধারণা অনুযায়ী খেয়াল-খুশিমতো ইবাদত করলে তা কবুল হয় না। তাই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুযায়ী প্রতিটি কর্ম যাতে সম্পাদন করতে পারেন, হামদ ও সানা, দোয়া-প্রার্থনা ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করতে পারেন সেজন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করা উচিত। প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের নির্দেশনা পালনের  মানসিকতা পোষণ করতে হবে। কোথাও কোনো মাসয়ালা নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে করেছেন সে বিষয়টি তালাশ করে বের করার চেষ্টা করতে হবে। যখন কোনো বিষয়ে হাদিসে আপনার সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন তখন তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে। হাদিসের উদ্ধৃতি ছাড়া কেউ কিছু বললে তা প্রত্যাখ্যান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ব্যক্তি কোনো রেফারেন্স নয়। নামাজ, রোজা, হজসহ সব ইবাদত বা অন্যান্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও এটি সত্য।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব ধরনের অন্যায় ও ক্ষতিকর তৎপরতা থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন।

লেখক :  ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর