শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

বিশ্বাসই মানবজীবনের মূল চালিকাশক্তি

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

বিশ্বাসই মানবজীবনের মূল চালিকাশক্তি

আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর তারা আখেরাতের প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস পোষণ করে।’ আলোচ্য আয়াত থেকে বোঝা গেল, একান্ত বিশ্বাসই মানবজীবনের মূল চালিকাশক্তি ও জীবনের সব কাজের নিয়ন্তা। মানুষ বিশ্বাস করে যে কাজে হাত দেয় রব্বুল আলামিন সে কাজ বরকতময় ও সফলতা দান করেন। আখেরাত বা পরকাল সম্পর্কে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের প্রকৃত মুমিন বলা হয়েছে। নিশ্চিত বিশ্বাসের মৌলিক শিক্ষা তিনটি। এক. তাওহিদ বা আল্লাহর একাত্মবাদে বিশ্বাস। একাত্মবাদ সম্পর্কে সূরা ইখলাসে ইরশাদ হচ্ছে, ‘বলুন, তিনি আল্লাহ এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী।’ সূরা ইখলাস : ১-২। আলোচ্য সূরাটির মধ্যে আল্লাহর একাত্মবাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এ সূরার অসংখ্য অগণিত ফজিলত রয়েছে। যেমন, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে আরজ করল আমি এ সূরাটি অর্থাৎ সূরা ইখলাসকে খুবই ভালোবাসি। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এই ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’ তাফসিরে ইবনে কাসির। অন্য বর্ণনায় আছে, একবার রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা সবাই একত্রিত হয়ে যাও। আমি তোমাদের কোরআনের এক তৃতীয়াংশ শোনাব। অতঃপর তারা একত্রিত হয়ে গেলে তিনি আগমন করলেন এবং সূরা ইখলাস পাঠ করে শোনালেন। তিনি আরও বললেন, ‘এ সূরাটি কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।’ মুসলিম, তিরমিজি। এ সূরার মাঝে তাওহিদের প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাসের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। দুই. রিসালাত তথা নবী ও রসুলদের প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস। এ সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘রসুল বিশ্বাস রাখেন, ওইসব বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেস্তাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমূহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরদের প্রতি। তাঁরা বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না। তাঁরা বলে আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ সূরা বাকারা : ২৮৫। তিন. আখেরাত অর্থাৎ পরকালের প্রতি বিশ্বাস। আখেরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাসই মানুষকে সৎকর্মে অনুপ্রেরণা জোগায়। জোগায় আগ্রহ। মনের ভিতরে জাহান্নামের ভয়ানক দৃশ্য ভেসে ওঠে। আর জাগ্রত হয় অনাবিল শান্তির জায়গা জান্নাতের মনোরম দৃশ্য। পরকালে বিশ্বাস মানে হলো মৃত্যুর পর পুনরায় অনন্ত জীবন লাভ। এক কথায় বলতে গেলে, জীবনের শুরু আছে তবে শেষ নেই। কতকাল সেখানে থাকতে হবে তা একমাত্র রব্বুল আলামিনই জানেন। এ জীবনের সব কর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার, যথাযথ ভালো-মন্দ ফলপ্রাপ্তি এবং পরিণাম হিসেবে জান্নাত ও জাহান্নাম ভোগ ও উপভোগ করা। রব্বুল আলামিন অতি দয়াবান। তাঁর কাছ থেকে দুনিয়ায় থাকতেই রহম ও দয়া চেয়ে নিতে হবে। মানুষ তাঁর কাছে যত চায় তিনি তত খুশি হন। যাতে তিনি ময়দানে মাহশারে আমাদের বিনা হিসাবে জান্নাত দান করেন। হাদিসে এসেছে, যার থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব নেওয়া হবে, তার হালাকি আর ধ্বংস অনিবার্য। মৌলিকভাবে একজন বিশ্বাসী মুমিন জীবনের সব ক্ষেত্রে সফলতা পায়। বিশ্বাসই মানবজীবনের মৌলিক চালিকাশক্তি। সাহাবায়ে কিরামদের ইতিহাস পাঠ করলে দেখা যায় তাঁরা আম্বিয়ায়ে কিরামদের সহবতে থেকে বিশ্বাসের উঁচুস্তরে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিলেন। পাহাড়সম বালা-মুসিবত এলেও আল্লাহর ওপর বিশ্বাসের পাহাড় বনে যেতেন। তাই তো তারা সব ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে পেরেছিলেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, একজন বিশ্বাসী মুমিন দুনিয়ায় পরবাসী। এখানে স্থায়ীভাবে আবাদ করার কিছুই নেই। আসল ঠিকানা বা স্থায়ী বাড়ি হলো পরকালে। মুমিন ব্যক্তি সারাক্ষণ পরকালের বাড়িকে আবাদ ও সাজানোর ফিকির করে নেক আমল বাড়িয়ে দেয়। অনেকে বলেন, আমি বেকার কাজকর্ম নেই। আসলে এ কথাটি ঠিক নয়। যার পরকালের ফিকির আছে তার ২৪ ঘণ্টা কাজ করলেও কাজ শেষ হবে না। হজরত ওয়ায়েস কুরনি (রহ.) বলতেন, ‘আল্লাহ আমাকে এত বেশি কাজ দিয়েছেন সারা জীবন ২৪ ঘণ্টা কাজ করলেও শেষ হবে না। আমি তো একটু হাসি দেওয়ারও সময় পাই না।’ প্রিয় পাঠক! একান্ত বিশ্বাসই মানবজীবনের মূল চালিকাশক্তি। বিশ্বাস মানুষকে এগিয়ে নেয়। উন্নতি-অগ্রগতি সবকিছু নির্ভর করে একান্ত বিশ্বাসের ওপর। সন্দেহ বা ওয়াসওয়াসার দ্বারা মানুষ উন্নতি-অগ্রগতির মুখ দেখতে পায় না। সে জীবনের পদে পদে ব্যর্থ হয়। ওয়াসওয়াসা বা সন্দেহ রোগ বড় খারাপ। এক ব্যক্তির খুব বেশি ওয়াসওয়াসা ছিল। সে অজু করতে করতে গোসল করে ফেলত। কারণ তার ভিতরে ওয়াসওয়াসা আসে যে আমার অজু হলো কিনা। এ ভাব করতে করতে তার গোসল হয়ে যেত। কিন্তু অজু আর শেষ হতো না। তাই সন্দেহ বা ওয়াসওয়াসামুক্ত জীবন গঠন করতে হবে। হতে হবে একান্ত বিশ্বাসী একজন খাঁটি মুমিন-মুসলিম। তাই চলুন আমরাও তাওহিদ, রিসালাত ও আখেরাতের প্রতি একান্ত বিশ্বাস করে আমাদের জীবনকে বিশ্বাসী জীবন বানাই। রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে প্রকৃত মুমিন হওয়ার তাওফিক দান করুন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর