সোমবার, ৩০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাঘ রক্ষার উদ্যোগ নিন

বন্ধ হোক অবৈধ শিকার ও পাচার

প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাঘের সংখ্যা বাড়লেও কমছে বাংলাদেশের বাঘ সংখ্যা। এক সময় দেশের বিভিন্ন বনে বাঘের দেখা পাওয়া গেলেও এখন তা সুন্দরবননির্ভর। ২০১৫ সালে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী বিশ্বের বৃহত্তম বাদাবন সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘ রয়েছে ১০৬টি। তবে বন বিভাগের দাবি এ সংখ্যা ১৩০। দুই সংখ্যাতত্ত্বের যেটিই ঠিক হোক না কেন সুন্দরবনে বাঘের এ সংখ্যা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ও শক্তিশালী বাঘ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্ব সুরক্ষার জন্য তা কোনো সুখবর নয় বরং অশনি সংকেতই বলা চলে। সুন্দরবনে বাঘের নিরাপত্তা হুমকিই এর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার জন্য দায়ী। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাত কারণে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দিন দিন কমছে। এর মধ্যে রয়েছে বাঘ শিকার ও দেহাবশেষ পাচার, বনাঞ্চল ধ্বংস, বাঘের আবাসস্থলের চারপাশে শিল্প ও কলকারখানা স্থাপন, বাঘ শিকার করার জন্য ফাঁদ ও অবাধে বিষটোপের ব্যবহার, বাঘের খাদ্য শূকর, হরিণ ইত্যাদি প্রাণী নিধন। বাঘ ও মানুষের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং বাঘ সমৃদ্ধ বনাঞ্চল দিয়ে যানবাহন ও নৌচলাচল বেড়ে যাওয়া তাদের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। বন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চলে ৪৪টি বাঘ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বাঘ নিয়ে গবেষণাকারীরা বলেন, পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন এলাকার বাঘ স্থান পরিবর্তন করে থাকে। গভীর জঙ্গল না থাকায় বাঘ তার নিরাপদ আবাসন হারাচ্ছে। বাঘ সচরাচর নিঃশব্দ এলাকা পছন্দ করে। এদের শিকার হিসেবে বনে যে শূকর দরকার, তা যথেষ্ট নয়। অপরদিকে বয়সী বাঘের পক্ষে দ্রুতগতির হরিণ ধরা খুবই কঠিন। মিষ্টিপানি আর শিকারের সন্ধানে বাঘ নিরুপায় হয়ে নদী পার হয়ে লোকালয়ে চলে আসে এবং হত্যার শিকার হয়। সুন্দরবনে পুরুষ বাঘ সংখ্যায় বেশি হলেও বাঘিনীর সংখ্যা কম। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একটি বাঘিনী একবার দুই থেকে চারটি বাচ্চা দেয়। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর বাঘিনী শাবকদের সুরক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। তারা স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ করে বাচ্চাদের নিরাপদ জায়গায় লুকিয়ে রাখে। শাবকরা চলাচলের উপযোগী হয়ে ওঠা পর্যন্ত বাঘিনী তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হলে বাঘের খাদ্য বিশেষত, শূকরের সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। বাঘ শিকার এবং চামড়াসহ দেহাবশেষ পাচার বন্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর