জগতে বিচিত্র সব জীব আল্লাহরই দয়া ও করুণায় বেঁচে আছে। আল্লাহ একেকজনকে একেকভাবে বাঁচিয়ে রাখেন। জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করেন। সবল-দুর্বল, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, নারী-পুরুষ, বুদ্ধিমান-বোকা সবাইকে রিজিক দান করেন। কাউকে না খাইয়ে রাখেন না। যে আল্লাহকে মানে এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখে, তাকে যেমন রিজিক দান করেন, তেমন যে বিশ্বাস করে না তাকেও তিনি রিজিক দান করেন। আবার যদি শুধু মানুষকে দিতেন তাহলে সব প্রাণী না খেয়ে মারা যেত। আর মানুষের মধ্যে রিজিক যদি কেবল শিক্ষিতদের জন্য নির্ধারিত হতো তাহলে অশিক্ষিতরা বেঁচে থাকতে পারত না। বোঝা গেল, আল্লাহ সব সৃষ্ট জীবের জন্য রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন এবং একজনের অসিলায় আরেকজনকে তিনি রিজিক দান করেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুল (সা.) এর জমানায় দুই ভাই ছিল। তাদের একজন রসুল (সা.)-এর কাছে আসা-যাওয়া করত এবং অন্যজন রুজি-রোজগার করত। একবার শেষোক্ত ভাই রসুলের (সা.) কাছে অন্য ভাই সম্পর্কে অভিযোগ করল যে, সে কোনো কাজকর্ম করে না; বরং জীবিকার ব্যাপারে আমার ওপরই নির্ভরশীল। তখন তিনি বললেন, এমনও হতে পারে যে, তোমার সে ভাইয়ের অসিলায় তোমাকে রিজিক প্রদান করা হচ্ছে। তিরমিজি। বান্দা যখন আল্লাহর আনুগত্য করে এবং তার ওপর ভরসা রাখে ও দোয়া করে, তখন আল্লাহ সেই বান্দার রিজিকের দায়িত্ব নেন। এ বিষয়ে হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, একবার এক ব্যক্তি তার পরিবারবর্গের কাছে এসে যখন দেখল যে তারা ক্ষুধায় ও উপবাসে কাতর হয়ে পড়েছে। তখন সে এ দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে মাঠের দিকে বের হয়ে গেল। অতঃপর তার স্ত্রী যখন দেখল যে তার স্বামী পরিবারের দুরবস্থা দেখে লজ্জিতভাবে রুজির তালাশে বের হয়ে গেছে, তখন সে আটা পেষার চাক্কির কাছে গিয়ে এক চাক্কি আরেক চাক্কির ওপর রাখল। তারপর চুলার কাছে গিয়ে তাতে আগুন জ্বালাল। এরপর দোয়া করতে লাগল, হে আল্লাহ! আমাদের রিজিক দান কর। অতঃপর সে নিচের চাক্কিটির প্রতি লক্ষ্য করে দেখল যে তা ভর্তি হয়ে রয়েছে। হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি বলেন, এরপর সে রুটি তৈরি করার জন্য চুলার কাছে গিয়ে দেখল যে চুলার ওপর রাখা পাত্রটি রুটি দ্বারা পরিপূর্ণ রয়েছে। হাদিস বর্ণনাকারী বলেন, এরপর স্বামী ঘরে ফিরে তার স্ত্রীকে লক্ষ্য করে বলল, আমি চলে যাওয়ার পর তোমরা কি কারও কাছ থেকে কিছু পেয়েছ? স্ত্রী বলল, হ্যাঁ। আমরা আমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকেই পেয়েছি। অতঃপর লোকটি চাক্কির কাছে গিয়ে তা খুলে রাখল। অতঃপর রসুল (সা.)-এর কাছে গিয়ে বিষয়টি বর্ণনা করল। তিনি বললেন, যদি ওই ব্যক্তি চাক্কি খুলে রাখত তবে কিয়ামত পর্যন্ত তা ঘুরতে থাকত এবং সেখান থেকে আটা বের হতো। মিশকাত।
লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।
