শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

কাগজ আমদানির পাঁয়তারা

জাতীয় স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুন

জাতীয় সংসদসহ অন্যান্য নির্বাচনের মুদ্রণকাজে বিদেশি কাগজ আমদানির পাঁয়তারা করছে মতলববাজ একটি মহল। বাংলাদেশে এখন মানসম্মত কাগজ তৈরি হচ্ছে। পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন শিল্পোন্নত দেশেও তা রপ্তানি হচ্ছে। কাগজ রপ্তানি খাতে দেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও করছে। কিন্তু দেশীয় শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতার বদলে বড় অঙ্কের কমিশনের লোভে বাংলাদেশ স্টেশনারি অফিসের মাধ্যমে কাগজ সংগ্রহের জন্য ডাকা দরপত্রের ভাষায় এমন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে দেশীয় পেপার মিলগুলো তাতে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারায়। এমনকি সরকারের ক্রয় নীতিমালা লঙ্ঘন করে শর্তের মধ্যে বিদেশি ব্র্যান্ডের নামও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মুদ্রণকাজের জন্য ৫৩ হাজার ২২৭ রিম কাগজ কেনার লক্ষ্যে গত ২২ জুলাই দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ স্টেশনারি অফিস। ওই দরপত্রে পণ্য বর্ণনায় উন্নতমানের সাদা অফসেট কাগজ উল্লেখ করে ব্র্যাকেটে ‘বিদেশি’ শব্দটি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি তাতে ‘পেপার ওয়ান’ নামে একটি বিদেশি কাগজের নামও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে; যা সরকারি ক্রয় নীতিমালার পরিপন্থী। বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন দেশে মানসম্মত কাগজ উৎপাদন ও বাংলাদেশের কাগজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হওয়া সত্ত্বেও বিদেশ থেকে কাগজ আমদানির পাঁয়তারায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের অভিযোগ, একশ্রেণির আমদানিকারক কমিশনের লোভ দেখিয়ে দরপত্রে শর্ত আরোপে সক্রিয় থাকতে পারে। স্মর্তব্য, দেশে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে ১০৬টি কাগজকল রয়েছে। এসব কাগজকলে বিশ্বমানের প্রায় সব ধরনের কাগজ উৎপাদন হয়। বর্তমানে সরকারি দরপত্রের মাধ্যমে কেনা দেশীয় উন্নতমানের কাগজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। টাঁকশাল, দেশের সব শিক্ষা বোর্ড, বিভিন্ন সরকারি সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতেও ব্যবহৃত হচ্ছে দেশীয় কাগজ। শুধু দেশে নয়, বাংলাদেশে উৎপাদিত আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কাগজ অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ বিশ্বের ৩০টির বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ কাগজ ও কাগজ জাতীয় পণ্য রপ্তানি করে প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে। দেশে মানসম্মত কাগজ উৎপাদন সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদেশি কাগজ আমদানির পাঁয়তারা উদ্বেগজনক। এ-জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে সংশ্লিষ্টরা বিরত হবেন— এমনটিই প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর