শিরোনাম
শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

জামায়াতির জুতাহরণ এবং রাজনীতির রসায়ন!

গোলাম মাওলা রনি

জামায়াতির জুতাহরণ এবং রাজনীতির রসায়ন!

কাহিনীটি আমি কার কাছ থেকে শুনেছিলাম তা আজ আর মনে করতে পারছি না। তবে কাশিমপুর কারাগারে অন্তরিন অবস্থায় আমি কথাটি শুনেছিলাম। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুন অথবা যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রয়াত জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার কাছ থেকেই যে শুনেছি তা দিব্যি করে বলতে পারি। ঘটনাটি ঘটেছিল বিএনপি চেয়ারপারসনের তৎকালীন রাজনৈতিক অফিসে। প্রথা অনুযায়ী সব নেতা-কর্মীকে বেগম জিয়ার কামরায় ঢুকতে হতো খালি পায়ে অর্থাৎ জুতা বাইরে রেখে। প্রয়াত কাদের মোল্লাও সেভাবে ঢুকেছিলেন বিএনপি নেত্রীর রুমে এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে একান্তে বৈঠক শেষে বের হয়ে দেখেন তার জুতাজোড়া চুরি হয়ে গেছে। কাদের মোল্লা কথাবার্তায় অত্যন্ত চৌকস ছিলেন এবং প্রচুর হিউমার সৃষ্টি করতে পারতেন। তিনি পুনরায় বেগম জিয়ার রুমে ঢুকে অভিযোগের সুরে বললেন, ‘ম্যাডাম! আমার জুতো চুরি হয়ে গেছে। আপনাকে এখন আমাকে একজোড়া জুতো কিনে দিতে হবে।’ বেগম জিয়াও কৌতুক করে উত্তর দেন, ‘এটা বিএনপি অফিস— জামায়াত অফিস নয়!’

আজ এত বছর পর হঠাৎ করে কাহিনীটি মনে পড়ল মূলত জামায়াত-বিএনপির সাম্প্রতিক রসায়ন দেখার পর। বিশেষ করে সদ্য সমাপ্ত তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপির রসায়ন যেভাবে প্রকাশ্যে এসেছে ঠিক সেভাবে ইতিপূর্বে আসেনি। খুলনা ও গাজীপুর সিটির নির্বাচনে জামায়াত পরোক্ষভাবে নিজেদের নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিল বিএনপি প্রার্থীর পক্ষের প্রচার-প্রপাগাণ্ডা থেকে। অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে জামায়াত আগ বাড়িয়ে নিজেদের দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের কথা বলেছিল। পরে, হাই কোর্টের একটি রায়ে ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেলে বিষয়টি আর এগোতে পারেনি। কিন্তু সাম্প্রতিককালের তিন সিটির নির্বাচনে বিশেষত সিলেটে জামায়াতের প্রকাশ্যে বিদ্রোহ এবং নির্বাচনের পর ফল বিপর্যয়ে যে কানাঘুষা চলছে তা বর্তমানকালের রাজনীতি তো বটেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করছি।

আজকে আমি মূলত সিলেট নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপি দ্বন্দ্ব এবং আওয়ামী লীগ-জামায়াতের নতুন মেরুকরণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক। বিষয়টিকে সহজবোধ্য করার জন্যই শুরুতে জামায়াত-বিএনপির সম্পর্কের নমুনা বোঝানোর জন্য কাদের মোল্লার জুতো চুরির কাহিনীটি বর্ণনা করেছি। আপনারা যদি কাহিনীটির অন্তর্নিহিত বাস্তবতা বোঝার চেষ্টা করেন তবে লক্ষ্য করবেন যে, কাদের মোল্লার জুতো চুরি করার জন্য কোনো দক্ষ চোর সেদিন বিএনপি নেত্রীর অফিসে ঢোকেনি। তিনি দীর্ঘক্ষণ ধরে একান্তে বৈঠক করে সেদিন হয়তো বিএনপি নেত্রীকে এমনভাবে ব্যস্ত রেখেছিলেন যার কারণে নেতা-কর্মীরা তাদের নেত্রীর সাক্ষাৎ লাভের জন্য অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত এবং ধৈর্যহারা হয়ে পড়েছিলেন। এ অবস্থায় কোনো বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী হয়তো কাদের মোল্লাকে দুর্ভোগে ফেলার জন্য তার জুতোর ওপর ঝাল ঝেড়েছিলেন। অন্যদিকে, বেগম জিয়ার উত্তরও ছিল দ্ব্যর্থবোধক এবং যথেষ্ট ইঙ্গিতবহ। আমার মনে হয় না যে, তিনি ‘এটা বিএনপি অফিস, জামায়াত অফিস নয়’— এই বাক্য দ্বারা জামায়াতের সততা এবং বিএনপির অসততার বিষয়টি ইঙ্গিত করেছিলেন। তিনি বরং বিএনপি অফিসে জামায়াতের অবাধ ও নিরাপদ-খোশগল্পের বাধা-বিপত্তি সম্পর্কে ইঙ্গিত করেছিলেন বলেই আমি বিশ্বাস করি।

জামায়াত-বিএনপির পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আওয়ামী শিবিরে বিশেষত শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে তুমুল একটি মিথ চালু রয়েছে; যার কারণে তারা মনে করেন ওই সম্পর্ক যমজ ভাই-বোনের মতো। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ জামায়াত ও বিএনপিকে আলাদা আলাদা শক্তি এবং দল দুটির বিভেদ-বিসম্বাদ নিয়ে চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করতে না পারার কারণে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা বিএনপিকে আক্রমণ করতে গিয়ে একই সঙ্গে জামায়াতকেও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ফেলেন। এতে আওয়ামী লীগের যেমন অহেতুক এবং অতিরিক্ত শক্তি ক্ষয় হয় তেমন জামায়াত ও বিএনপি যুগপত্ভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করার সুযোগ লাভ করে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ যদি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয় জামায়াতের কর্মকাণ্ড বিচার-বিশ্লেষণ করতেন তবে দেখতে পেতেন যে, অঞ্চলভেদে জামায়াতের নেতৃত্ব ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি করে একেকরকম আচরণ করে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে।

আপনি যদি চাঁপাইনবাবগঞ্জে যান তবে দেখতে পাবেন দীর্ঘদিন যাবৎ সেখানে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে তার ঠিক উল্টোটা অর্থাৎ দা-কুমড়া সম্পর্ক রয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। একইভাবে দেশের অন্যান্য জামায়াত প্রভাবিত এলাকার মধ্যে সাতক্ষীরা, খুলনার দাকোপ, কয়রা প্রভৃতি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতিরা বিএনপির পরিবর্তে আওয়ামী লীগারদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখে চলছেন। অনুরূপভাবে বৃহত্তর রংপুরের জাতীয় পার্টি প্রভাবিত এলাকাগুলোয় জামায়াতের এক নম্বর মিত্র হলো হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। এ ছাড়া তারা বেশকিছু অঞ্চলে এককভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যার মধ্যে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর, রাজশাহী, সিলেট ও চট্টগ্রাম অন্যতম। জামায়াত-বিএনপির ঐতিহাসিক সম্পর্কের মিথ ও অঞ্চলভেদে তাদের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান এবং বিগত কয়েক বছরের রাজনীতির নির্মম বাস্তবতার কারণে এ কথা সর্বত্র ক্রমেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছিল যে, এই বুঝি জামায়াত-বিএনপির ভাঙন শুরু হয়ে গেল। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক শক্তি, প্রতিবেশী ভারত এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রভাবশালী বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ও সুশীলসমাজ দীর্ঘদিন থেকেই বিএনপির ওপর ক্রমাগত চাপ দিয়ে আসছিল জামায়াতকে ত্যাগ করার জন্য। বাংলাদেশের কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী অথচ ছোট রাজনৈতিক দলের বড় বড় নেতারা কেবল জামায়াতের কারণে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করতে পারছেন না। বিএনপির তরুণ নেতৃত্বও নানা কারণে জামায়াতের ওপর নাখোশ। সর্বোপরি, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গত ১০ বছরের ক্রমাগত চেষ্টা-তদবির, দেনদরবার ও কূটনীতির শক্তি সর্বতোভাবে চেষ্টা করেছে জামায়াত-বিএনপির পারস্পরিক সম্পর্কে চিড় ধরানোর জন্য; যা ২০১৮ সালের জুলাইয়ে এসে আলোর মুখ দেখেছে বলে মনে হচ্ছে।

উপরোক্ত রাজনৈতিক তাপ, চাপ, নানামুখী সমীকরণ এবং রসায়নে জামায়াতও বিএনপির ব্যাপারে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে পড়েছে বলেই মনে হয়। বিভিন্ন সময়ে জামায়াত নেতাদের কিছু কথাবার্তা, দলের তরুণ তুর্কিদের বিএনপিবিরোধী মনোভাব এবং বিএনপি কর্তৃক নানা অবহেলা, অসম্মান ও এড়িয়ে চলার মনোভাবের কারণে জামায়াতও সুযোগ খুঁজছিল বিএনপির সঙ্গে সম্মানজনক সহাবস্থানে পৌঁছানোর জন্য দেনদরবার অথবা পৃথক হয়ে স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য। আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ গোছানোর জন্য তারা যে প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারই একটি অ্যাসিড টেস্ট হয়ে গেল সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে। আমার অনুমান যদি সত্যি হয় তবে সিলেটে নির্বাচনপূর্ব সময়ে যে গোপন রাজনৈতিক সমঝোতা হয়েছিল তা ছিল মূলত ত্রিমুখী। অর্থাৎ জামায়াত যেমন আওয়ামী লীগকে রাজি-খুশি করে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোর কৌশল নিয়েছিল ঠিক তেমন আওয়ামী লীগও চেয়েছিল জামায়াত-বিএনপির সম্পর্কে ফাটল ধরুক। এর বাইরে জামায়াত অবশ্যই স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় বিএনপিকে এ কথা বলে আশ্বস্ত করেছিল যে, তারা সরকারি দলের বেকুব কিছু লোকের সঙ্গে রাজনীতি রাজনীতি খেলা খেলছেন মাত্র।

সিলেট সিটি নির্বাচনকে উপলক্ষ করে সেখানে যে রাজনৈতিক মেরুকরণ হয়েছিল তা ছিল এক ধরনের প্রহসন মাত্র। আরও একটু খোলাসা করলে সেই মেরুকরণের সম্পর্ককে পরকীয়া বলে আখ্যায়িত করা যায়। পরকীয়ার মতোই সম্পর্কটি ছিল একান্ত গোপন যা নিয়ে কোনো পক্ষই আজ অবধি উচ্চবাচ্য করেনি। তারা কেবল সম্ভোগের জন্য পরস্পরকে ব্যবহার করার মানস থেকে একত্র হয়েছিল বটে তবে কেউ কারও প্রতি সহানুভূতিশীল ও শ্রদ্ধাশীল ছিল না। তারা একদিকে যেমন পরস্পরের প্রতি দায়িত্বশীল ছিল না তেমন একত্রে কাজ শুরু করার আগে তারা অতীতের তিক্ততাকে বিসর্জন দিতে পারেনি। ফলে নির্বাচনের সব পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জামায়াতের কিছু নেতা অভিযোগ করেছেন, সিলেট মহানগরে তাদের প্রায় ৩০-৩৫ হাজার ভোট রয়েছে। অথচ তারা পেয়েছেন মাত্র ১১ হাজারের মতো। তাহলে বাকি ভোট গেল কোথায়?

জামায়াতের সিলেটের নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্যে কিছু না বললেও দলটির অনেক কেন্দ্রীয় নেতার অভিযোগ, সরকার তাদের সঙ্গে ছলচাতুরী করেছে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে জামায়াত কর্মীদের বিরূপ মন্তব্য থেকে এ কথা স্পষ্ট হয় যে, তারা সরকারি ফাঁদে পা দিয়ে মাইনকার চিপায় আটকে পড়েছেন। তাদের ৩০ হাজার ভোটকে মাত্র ১১ হাজার বানিয়ে তাদের শক্তিমত্তা, সাংগঠনিক ভিত্তি ও ভাবমূর্তিকে অত্যন্ত সুকৌশলে দেশবাসীর কাছে হেয় করা হয়েছে। অন্যদিকে, সিলেট জামায়াতকে কেন্দ্র করে সরকারি দলে যেসব কথাবার্তা হচ্ছে তাতে একদল বলছে যে, জামায়াতের ভোট সিলেট সিটিতে হাজার পাঁচেকের বেশি হবে না। তারা যে মোট ১১ হাজার ভোট পেয়েছে তার মধ্যে হয়তো হাজার ছয়েক পপুলার অর্থাৎ নিরপেক্ষ ভোট রয়েছে।

সরকারি দলের অন্য গ্রুপটি অবশ্য বলছে ভিন্ন কথা। তাদের মতে, জামায়াত সরকারকে বুদ্ধ বানিয়ে আরিফকে জিতিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। তারা নিজেদের বাক্সে ১১ হাজার সিল মেরেছে এবং বাকি ১৯ হাজার জামায়াতি ব্যালট বিএনপি প্রার্থী আরিফের বাক্সে ঢুকিয়েছে। জনাব আরিফ যদি জামায়াতি ভোট না পেতেন তবে তার পক্ষে ইহজনমেও সিলেটের মেয়র নির্বাচিত হওয়া সম্ভব ছিল না।

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াত এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে যে ত্রিমাত্রিক রসায়ন চলছিল তাতে শেষ পর্যন্ত কোনো পক্ষই লাভবান হয়নি এবং যার ফলে আগামী দিনেও কোনো পক্ষের লাভ হবে না। বরং সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরস্পরকে অবিশ্বাস ও ঠকানোর যে প্রক্রিয়া শুরু হলো তা যদি আগামী দিনগুলোয় অব্যাহত থাকে তবে আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিশ্চিতভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এমনিতেই আমাদের দেশের নির্বাচনের সংস্কৃতি, রাজনীতি ও জনসাধারণের চিন্তা-চেতনা, অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা এক অজানা ভয় ও আশঙ্কা দ্বারা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়েছে। প্রতিপক্ষের প্রতি আস্থা না থাকায় ক্ষমতাসীনরা যেমন ক্ষমতা ছাড়তে ভয় পায় তদ্রূপ ভালো কর্মের জন্য সর্বজনীন প্রশংসা, সমর্থন এবং সহযোগিতার মনোভাব বেশির ভাগ মানুষের হৃদয় থেকে উধাও হয়ে যাওয়ায় নির্বাচনের মাঠে জনরায়ের ওপর কেউ আস্থা রাখতে চায় না।

সিলেট থেকে জামায়াত ও বিএনপির যে অনৈক্য শুরু হলো তা যদি আগামী দিনগুলোয় পূর্ণতা পায় তবে বিএনপি রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে যাদের পাবে তাতে রাজনীতির ময়দান গরম হয়ে যাবে। অন্যদিকে, জামায়াত যদি সম্পূর্ণ একলা চলে অথবা কয়েকটি ইসলামী দলের সঙ্গে ঐক্য করে তাহলেও নতুন হিসাব-কিতাব শুরু হয়ে যাবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী দল, পীর-ফকিরদের মাজার, খানকাহ, তাবলিগ, হেফাজত প্রভৃতি সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব কেবল ওয়াহাবিদের কিছু মতাদর্শ নিয়ে যা মূলত জামায়াত এ দেশে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে সৌদি সরকারের মদদে। সাম্প্রতিককালে সৌদি যুবরাজ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ওয়াহাবিবাদ বলতে আসলে কিছু নেই। তারা পশ্চিমাদের পরামর্শে দুনিয়াব্যাপী ওয়াহাবিবাদ চালু করতে গিয়ে সব মুসলমান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন এবং অনেক মুসলিম দেশের শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। সৌদি সরকারের বর্তমান নীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জামায়াত যদি ওয়াহাবিবাদের কিছু ধারা পরিবর্তন করে বা কিছু বিষয়ে নমনীয় মনোভাব দেখায় তবে অন্য ইসলামপন্থিদের সঙ্গে তাদের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে উঠবে যা সব রাজনৈতিক দলের জন্যই বিরাট এক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

বিএনপি ও জামায়াতের নতুন জোটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আওয়ামী লীগ যদি তাদের জোটের পরিধি বাড়াতে চায় তাহলে প্রথমত পুরনো মিত্রদের সঙ্গে টানাপড়েন শুরু হয়ে যাবে। কেউ কেউ নির্বাচনের ঠিক পূর্বমুহূর্তে হঠাৎ করে জোট থেকে বের হয়ে যেতে পারে। আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনপূর্ব সময়ে কেবল জোট নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে তবে তাদের নিজ দলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে এবং আগামী নির্বাচনে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীতে সারা দেশ সয়লাব হয়ে পড়বে। গত ১০ বছরের বিরতিহীন ক্ষমতার কারণে তৃণমূলের অনেক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী প্রচণ্ড উচ্চাভিলাষী হয়ে পড়েছেন। মেম্বার হওয়ার যোগ্যতা নেই, এমন অনেকে এমপি হওয়ার বাসনায় ভয়ঙ্কর তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন, যা সামাল দিতে না পারলে পুরো পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের বিপক্ষে চলে যাবে। এ অবস্থায় বিএনপি ও জামায়াতের প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাদ দিয়ে নিজেদের ঘর গোছানোই সবচেয়ে জরুরি বলে অভিজ্ঞরা মনে করছেন।

 

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট।

 

সর্বশেষ খবর