শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

মদিনা শরিফ জিয়ারতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

মুফতি মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহিল বাকী, পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব

সকল প্রশংসা আল্লাহতায়ালার জন্য যিনি মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সব মাখলুকের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। যার পদধূলিতে স্থানের সম্মান বেড়ে যায়, যার স্পর্শে ভেজাল খাঁটি হয়ে যায়, যার সুহবতে নিকৃষ্ট মানুষ শ্রেষ্ঠ মানুষে রূপান্তরিত হয়। আল্লাহর লাখো কোটি শুকরিয়া আমাদের মতো নগণ্যদেরও তিনি তাঁর উম্মত হওয়ার সৌভাগ্য দান করেছেন। সালাত ও সালাম সেই নবীর ওপর যার ওপর সালাত না পড়া পর্যন্ত প্রার্থনাগুলো অবরুদ্ধ থাকে। যার প্রতি সরাসরি সালাম পেশ করার জন্য মুসলমানরা মদিনার দিকে ছুটে পতঙ্গের মতো। মদিনা নামটি কোনো ইমানদার ব্যক্তির কাছে উচ্চারিত হলে সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে শিহরণের সৃষ্টি হয়। কারণ মদিনা শরিফ শব্দটি উচ্চারণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসহায় অবস্থায় মাতৃভূমি মক্কা ত্যাগের স্মৃতি, মদিনায় বসে সারা বিশ্বে কলমার দাওয়াত পৌঁছানোর স্মৃতি, সাহাবায়ে কিরাম (রা.)-এর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে বিভিন্ন আবদার নিয়ে আসার কোলাহলের স্মৃতি, দুনিয়া থেকে তাঁর বিদায় নেওয়ার সময় সাহাবায়ে কিরামের ভগ্নহৃদয় নিয়ে শিশুদের মতো গগনবিদারী কান্নাকাটির স্মৃতি, সেই অবস্থাকে অতিক্রম করে পুনরায় নতুন উদ্যমে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রেখে যাওয়া মিশনকে সারা বিশ্বে পৌঁছানোর জন্য কোরবানির স্মৃতি সব ভেসে ওঠে। বিশেষ করে এ হজের মাসগুলোয়। যখন সারা বিশ্বের আনাচকানাচ থেকে মুসলমানরা পঙ্গপালের মতো তাঁকে সালাম দেওয়ার জন্য মদিনার দিকে ছোটে তখন আমরা যারা এ সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত তারা নিজেদের খুব অসহায় মনে করি। মনে হয় যেন সবাই ঘরের দিকে ছোটে আর আমাদের মতো বঞ্চিতদের প্রবাসজীবন শেষ হলো না। এ রকম হওয়ারই কথা কারণ যখন মাসজিদুন নববী প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি, রওজাতুল জান্নাহ মানুষের অজানা ছিল সেই সময় যখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা জীবনের শেষ দিকে আল্লাহর সঙ্গে দিদারের জন্য মিরাজে যাচ্ছিলেন তখন তিনি মদিনার এই বিরানভূমি  জিয়ারত করলেন এবং দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। বর্তমানে মদিনায় মাসজিদুন নববী প্রতিষ্ঠিত, রওজাতুল জান্নাহ নির্ধারিত, বিশেষ করে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দুই খলিফা নিয়ে চিরবিশ্রামে থাকার রওজা বিদ্যমান, এ অবস্থায় তাঁর জিয়ারতের গুরুত্ব ও এর মর্যাদা কতটুকু তা সহজে বলা যাবে না। বরং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি উক্তি থেকে এর মর্যাদা অনুমান করা যাবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বললেন, হে আল্লাহ! মক্কায় তুমি যেই বরকত দান করেছ মদিনায় তার দ্বিগুণ বরকত দাও! মক্কায় বায়তুুল্লাহ আছে, মাকামে ইবরাহিম আছে, আরও কত ফজিলতপূর্ণ কিছু আছে এমনকি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ছাড়া হজ হবে না তাও বায়তুল্লাহর ফজিলত। এত কিছু থাকার পরও যদি কেউ বলে আল্লাহ! আমি দুনিয়ায় একটু জান্নাতের অংশে বসে থাকতে চাই, অবস্থাদৃষ্টে মনে করা যায় আল্লাহ এটা উত্তর দেবেন যে, সেই ব্যবস্থা মক্কায় নেই, মদিনায় যাও, সে ব্যবস্থা মদিনায় আছে। কারণ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার মিম্বার ও কবরের মাঝখানে জান্নাতের একটি বাগান রয়েছে।’ এখন যদি কেউ দুনিয়ায় জান্নাতের বাগানে বসতে চাই তাহলে তাকে মাসজিদুন নববীতে প্রবেশ করে সবুজ কার্পেট বিছানো সেই রওজাতুল জান্নাতেই বসতে হবে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মাসজিদুল হারাম ছাড়া অন্য যে কোনো মসজিদের এক হাজার নামাজের সমান হলো আমার মসজিদে নামাজ। মাসজিদুল হারাম ছাড়া অন্য যে কোনো মসজিদের এক হাজার জুমার নামাজের সমান হলো আমার মসজিদের এক জুমার নামাজ, মাসজিদুল হারামের রমজান ছাড়া অন্য যে কোনো মসজিদের এক হাজার রমজানের সমান হলো আমার মসজিদের এক রমজান।’ এটা তো হলো মাসজিদুন নববীর ফজিলত। মাসজিদুন নববী ও রওজায়ে আকদাসের সুবাদে পুরো মদিনা অঞ্চলটাই বরকতময় হয়ে গেছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘(স্থায়ী বাসিন্দা হোক অস্থায়ী বাসিন্দা হোক) যে কেউ মদিনার কোনো দুঃখ-কষ্টের ওপর ধৈর্য ধারণ করলে আমি তার জন্য কাল কিয়ামতের ময়দানে সুপারিশ করব।’ মদিনা অঞ্চলের কষ্ট সহ্য করলেও আল্লাহর রসুলের সুপারিশ পাওয়া যায় তা হলে মাসজিদুন নববী, রওজাতুল জান্নাহ, রওজায়ে আকদাসের কত মর্যাদা ও কত ফজিলত?

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যারা দূরে থেকে আমাকে সালাম দেয় সেই সালাম ফেরেশতাদের মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। যারা কাছের থেকে আমাকে সালাম দেয় তাদের সালাম আমি শুনে থাকি।’ অন্য এক হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ যখন আমার ওপর দরুদ পাঠ কর তখন আল্লাহ আমার রুহ আমাকে ফেরত দেন এবং আমি তার সালামের জবাব দিই।’ সুনানে আবু দাউদ। অতএব রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজায়ে আকদাসে দাঁড়িয়ে সালাম দেওয়া মানে সাহাবায়ে কিরাম (রা.) তাঁর সঙ্গে যে রকম সালাম বিনিময় করতেন আপনিও তাঁর সঙ্গে সে রকমই সালাম বিনিময় করছেন। তবে আপনার কানে পর্দা থাকার কারণে তাঁর উত্তরটা আপনি শুনছেন না। অতএব, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজায়ে আকদাসের জিয়ারতের সময় সর্বোচ্চ আদব রক্ষা করা উচিত। রসুলপ্রেম ছাড়া এ আদব অর্জন করা অসম্ভব। প্রেমহীন, নির্জীব অন্তর নিয়ে তাঁকে সালাম দিলে আপনি সালাম ও সালামের কোনো স্বাদ পাবেন না। গতানুগতিকতার অনুসরণ হবে মাত্র। হে আল্লাহ! আমাদের আদবের সঙ্গে মদিনা জিয়ারতের তাওফিক দান করুন।

সর্বশেষ খবর