মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

পবিত্র হজে আছে বিশ্বশান্তির পরম আদর্শ

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম। ঐক্য, সোহাগ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ জান্নাতি সমাজ প্রতিষ্ঠার সুদৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে অবতরণ হয়েছে এ ধর্মের। এ ধর্মের অমিয় পরশে দুর্ভেদ্য প্রাচীরের মতো দাঁড়াতে পারে একটি পথহারা জাতি। একমাত্র ইসলামই সর্বস্তরের মানুষের ইহ ও পরকালের চিরকল্যাণ বয়ে আনতে পারে। উপহার দিতে পারে আনন্দময় সুখী জীবন, বিনয়ী ও আত্মত্যাগী মানব, শ্রেণিহীন-বৈষম্যহীন নির্মল স্বচ্ছন্দ সমাজ। গড়তে পারে দ্বন্দ্বমুখর এ বিশ্বে সৌভ্রাতৃত্বের অকৃত্রিম বন্ধন, শান্তি-সুখের নীড়। ইসলামের প্রতিটি বিধান মানবতার উজ্জ্বল প্রতীক। সুখ-শান্তির নির্মল পাথেয়। ইসলামের স্তম্ভ পাঁচটি। হজ এর অন্যতম। হজ পালন করা মহান আল্লাহর ইবাদত। এতে রয়েছে ইহ ও পরকালীন কল্যাণ। রয়েছে সামাজিক রীতিনীতি ও সুখ-স্বচ্ছন্দে জীবনযাপনের পরম আদর্শ। ঐক্য, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ জান্নাতি সমাজ প্রতিষ্ঠার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ, ধৈর্য, সহনশীলতা ও সহমর্মিতার উত্তম দৃষ্টান্ত। মহান আল্লাহ আল কোরআনে বলেন, ‘যে লোক হজের পূর্ণ নিয়ত করবে, তার জন্য স্ত্রীসহবাস ও আনুষঙ্গিক কিছু জায়েজ নেই। যাবতীয় অশোভন কাজকর্ম ও ঝগড়া-বিবাদও হজ পালনকারীর জন্য নিষিদ্ধ।’ সূরা বাকারা : ১৯৭। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করে, আর হজ পালনকালে নারী আসক্তি ও যাবতীয় অশুভ কাজকর্ম থেকে বিরত থাকে ওই ব্যক্তি মায়ের গর্ভ থেকে নিষ্পাপ ভূমিষ্ঠ হওয়ার মতো গুনাহমুক্তভাবে ফিরে আসবে।’ বুখারি, মুসলিম। বর্তমান বিশ্বে হজের চিত্র হলো লাখ লাখ মানুষের বিশাল সমাবেশ। নারী-পুরুষের অপরিমিত ভিড়, অবর্ণনীয় যানজট সেখানে সার্বক্ষণিক বিষয়। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান, মিনায় পাথর নিক্ষেপ এবং কাবাঘর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ায় সায়ি মানুষের প্রচণ্ড ভিড় ঠেলেই সম্পন্ন করতে হয়। অথচ এই পরিস্থিতিতেই কি অনাবিল শান্তির পরিবেশ! ঝগড়া নেই, বিবাদ নেই, ঠেলাঠেলি-ধাক্কাধাক্কি নেই। নেই অন্যায়, উগ্রতা। অবাধ সেই মহিলা-পুরুষের বিশাল সমাবেশে নারী কেলেঙ্কারি নেই। নেই ইভ টিজিংয়ের মতো সামাজিক কোনো মহামারী।

হজের এ আদর্শ থেকে আমাদের সমাজ আজ বহু দূরে। অত্যাচার, মারামারি, হানাহানি, খুন-সন্ত্রাস, হিংসা-বিদ্বেষ আজকের সমাজের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধৈর্য, সহনশীলতা ও সম্প্রীতিপূর্ণ একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের জন্য আমরা হজ পালনের বিধান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। আমার আশা ও বিশ্বাস, ঐক্য, সোহাগ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ জান্নাতি সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন যারা বুকে ধারণ ও লালন করেন, হজের দৃশ্য তাদের জন্য প্রেরণা ও অনুপ্রেরণার উৎস হবে। শ্রেণিহীন, বৈষম্যহীন, বিবাদমুক্ত সুখ-শান্তিময় পরিবেশ গড়ায় পাথেয় হবে।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক মুহাদ্দিস, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর