বুধবার, ৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ক্যাপ্টেন থেকে কিং

অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত

ক্যাপ্টেন থেকে কিং

ইমরান খান নিয়াজি, সমকালীন শিক্ষা অর্থাৎ দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয় নিয়ে অনার্স গ্রেডসহ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট। ব্রিটেনে ছাত্রাবস্থায় তার নামের সঙ্গে যুক্ত ছিল 2P অর্থাৎ Player & Playboy. তারপর পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রবেশের পর 3P অর্থাৎ Player, Playboy and Politician. এখন তার নামের সঙ্গে সহজেই আমরা আরও একটি P বসিয়ে দিয়ে 4P করতে পারি, যা হবে Player, Playboy, Politician and Prime Minister. ষাটোর্ধ্ব ইমরান খান কোনো বালক, কিশোর বা যুবক নন, একজন পরিপূর্ণ বয়স্ক রাজনীতিবিদ, শিক্ষিত এবং সর্বক্ষেত্রে অভিজ্ঞ। ব্রিটেনের ব্রাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক দিনের চ্যান্সেলর পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই যুবক। নির্বাচনের পরদিন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তখনো শপথ নেওয়া হয়নি এক টিভি সাক্ষাৎকারে ইমরান খান যে দিকগুলোর দিকে ইঙ্গিত দিয়ে অথবা সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তার প্রথমটাই হলো পাক-ভারত সমস্যা অর্থাৎ কাশ্মীর সমস্যা। দ্বিতীয়ত দরিদ্রতা, যা অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। শুধু উপমহাদেশ নয়, বিশ্বশান্তির জন্যও।

ইমরান খান এও বলেছেন, Biggest Problem is Kashmir…, If India takes one step towards us, we will take two but we at least need a start. অর্থাৎ ভারত এক কদম এলে পাকিস্তান দুই কদম এগিয়ে যাবে। অত্যন্ত সুন্দরভাবে উর্দুভাষী খান ইংরেজিতে যা বলেছেন তা শুধু সুমিষ্ট নয় বরং সৌন্দর্যমণ্ডিত এবং গ্রহণযোগ্য।

I arguably know the most people in India because of my days in Cricket. We can resolve the poverty crisis in south Asia. We want to improve our relation with India, If their leadership also wants it. This slam game that whatever goes wrong in Balochistan is because of India and Vice-Versa brings us back to square one. After a 22 year long struggle, almighty God has finally Given me the chance to implement the manifesto I have dreamed up over two decades ago.

১৯৯২ সালে বিশ্বকাপজয়ী ইমরানের ভাষণ বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় বয়ে দিয়েছিল, কারণ সেই ভাষণে তিনি নিজেকে বেশি উস্কিলিতি করেছিলেন, শুধু একটি বাক্য ছিল দলের জন্য। কিন্তু নির্বাচনোত্তর তার ভিডিও লিঙ্ক ভাষণ একজন রাষ্ট্রনায়কের মতো। নির্বাচনী প্রচারণার মেনিফেস্টোতে তিনি যদিও কাশ্মীর সমস্যার ওপর তেমন জোর দেননি। যদিও তিনি জাতিসংঘের নেওয়া সিদ্ধান্তের ওপরই সমাধান চান। তবে এ কথাও সত্য, পাকিস্তানের শক্তিধর সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভর করেই ইমরান খানকে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। যদিও কোনো টেস্ট ক্রিকেটে তিনি ভারতের কাছে পরাজিত হননি। কাশ্মীর ক্ষেত্রে কোনো জয়-পরাজয় নয়, এখানে দরকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাধান।

প্রথম কাশ্মীর সমস্যা, দ্বিতীয় দারিদ্র্য দূরীকরণ, এরপর তৃতীয় যে ব্যাপারটির ওপর জনাব খান তীক্ষ দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন, তা হলো পররাষ্ট্রনীতি। শুরুতে তিনি চীন, সৌদি আরব ও ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির কথা তুলে ধরে বলেন, No other country needs peace like we do. তিনি বলতে ভুল করেননি পাকিস্তানের দুর্দশা আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির জন্য নয় বরং আমেরিকাকে একপেশে নীতি বর্জন করে উভয়ের জন্য এবং উপমহাদেশের জন্য মঙ্গলকর নীতি গ্রহণ করতে হবে।

চতুর্থটি হলো Corruption অর্থাৎ দুর্নীতির সূত্র কোথায়, কেন দুর্নীতির প্রতি কিছু লোকের এত আগ্রহ এবং কীভাবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সৌদি আরবকে বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে খানের মন্তব্য— সৌদি সরকার পাকিস্তানের দুঃসময়ে তাদের পাশে ছিল এবং তাই আমরাও তাদের পাশে থেকে তাদের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাব। তালেবানের সঙ্গে আলোচনা করে আফগান সমস্যা সমাধানেও তিনি প্রচণ্ড আশাবাদী। তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় ক্রিকেট ক্যাপ্টেন কপিল দেবের মন্তব্য— Let’s hope India and Imran’s Government can sort out major issues and bring peace into the region. Dev added, Imran was a tough captain and Pakistan did well under him. I hope he will do a good job as P M of Pakistan as well.

সর্বশেষ তিনি এও বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে তিনি যাবেন না। তিনি এত বড় প্রাসাদে থাকতে লজ্জিত ও বিব্রত। আমাদের সরকার সিদ্ধান্ত নেবে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি কী করা হবে? হয়তো বা ভালো একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ওই বাড়িতে নির্মাণ করা যাবে। দেখা যাক, এই দীর্ঘ ইংনিসে তিনি কেমন খেলেন এবং পরিচালনা করেন। কেননা তিনি এখন আর ক্যাপ্টেন নন বরং কিং বা রাষ্ট্রনায়ক।

লেখক : সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর