বুধবার, ৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাংবাদিকদের ওপর হামলা

অপরাধীদের আইনের আওতায় আনুন

সাংবাদিকতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে প্রতিপক্ষ ভাবার পরিণাম কারোর জন্যই ভালো হয় না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এ সত্যটি সবার জানা থাকলেও ক্ষমতাদর্পীরা বার বার একই ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা ইতিহাসের সেই শিক্ষাকেই যথার্থ বলে প্রমাণ করেছেন। যাতে বলা হয়েছে, ‘ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।’ নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কয়েক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর নির্বিচারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হেলমেট ও মুখোশ পরা দুর্বৃত্তরা গত শনি, রবি ও সোমবার রাজধানীর জিগাতলা, সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ মোড়, রামপুরা ও উত্তরায় সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হওয়ার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। পুলিশের নাকের ডগায় দুর্বৃত্তরা হামলা চালালেও পুলিশ তাতে বাধা দেওয়া কিংবা সাংবাদিকদের নিরাপত্তাদানের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং সোমবার আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থী এবং পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এক নারী সাংবাদিককে পুলিশের নারী সদস্যরা যে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেছে তা অপ্রত্যাশিতই শুধু নয়, নিন্দনীয়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে ১৭ কোটি মানুষের একাত্মতা সম্পর্কে দ্বিমতের অবকাশ নেই। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দলের শীর্ষ নেতারাও এর ন্যায্যতা স্বীকার করেছেন। এ আন্দোলনে সাংবাদিকরা কোনো পক্ষ নয়। তারা সংবাদ সংগ্রহ ও ছবি তোলার পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোয় গিয়েছিলেন। সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা মুখোশ ও হেলমেট পরে নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে চেয়েছে এ কারণে যে তারা অপরাধী। অন্ধকারের জীবেরা যেমন আলোর সামনে আসতে ভয় পায়, হামলাকারীদের মধ্যেও একই ধরনের ভয় কাজ করেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি ফোর্থ স্টেটের মর্যাদাধারী সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ তো ব্যর্থ হয়েছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের কর্মকাণ্ড ছিল সমানভাবে নিন্দনীয়। দেশে সাংবিধানিকভাবে গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম থাকা সত্ত্বেও গণমাধ্যম কর্মীদের মুক্তভাবে কাজ করার অধিকারে যে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়েছে তা গর্হিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। এই দুর্বৃত্তপনার বিরুদ্ধে সংবাদপত্র পরিষদ ও সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, যারা এসব অপকর্মের অবতারণা করেছে তাদের কর্মকাণ্ড শুধু সংবাদমাধ্যমই নয়, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার পরিপন্থী। অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করা সরকারের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যারা অসৌজন্য আচরণে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে— এমনটিও প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর