বুধবার, ৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

সঠিক সিদ্ধান্তের বিকল্প নেই

ইঞ্জিনিয়ার এম এ মান্নান

সঠিক সিদ্ধান্তের বিকল্প নেই

আগস্ট শুধু শোকের মাস নয়, শোককে শক্তিতে পরিণত করার মাস। ৪৩ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত হয়েছিল সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড। ইয়াজিদ ও মীরজাফরের বংশধররা বঙ্গবন্ধু এবং পরবর্তীতে একই বছরের ৩ নভেম্বর চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করে বাঙালি জাতির প্রাণভোমরাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল। স্বাধীনতা ও শোষণমুক্ত সমাজ তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শকে হরণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু ঘাতকদের সে অভিলাষ সফল হয়নি। শোককে শক্তিতে পরিণত করে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ২০০৮-এর নির্বাচনে আবারও জয়ী হয় বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও তাদের প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত হয়। একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচার ও তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়। ২০০৮-এর নির্বাচনের পর থেকে দুই মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। চলতি বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার হাতছানি সামনে। তবে আশঙ্কাও কম নয়। কারণ স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের ঘরের ভিতরেই বেড়ে উঠেছিল খন্দকার মোশতাকের মতো নব্য মীরজাফররা। আজ দলের অগ্রযাত্রার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নানা দিক থেকে ছুটে আসা ঘৃণ্য ও লোভী কাউয়ারা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও যাদের সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কাউয়াদের কারণে দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা হতাশায় ভুগছেন। কাউয়ারা যে দলের জন্য কোনো দায় বোধ করে না, তা প্রমাণিত হয়েছে ২০১৪ সালের আগুন-সন্ত্রাসের সময়।

এ বছরের শেষ ভাগে হতে যাচ্ছে একাদশ সংসদ নির্বাচন। দেশের সিংহভাগ মানুষ বঙ্গবন্ধুকন্যার উন্নয়নের রাজনীতির প্রতি সমর্থন জানালেও দলের মধ্যে আশ্রয় নেওয়া বসন্তের কোকিল ও কাউয়াদের ব্যাপারে তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এ ক্ষোভ ফুটে উঠেছে লন্ডনপ্রবাসী স্বনামধন্য সাংবাদিক কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর বক্তব্যে। তিনি দলের বিতর্কিতদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তো সাফ সাফ বলে দিয়েছেন আগামী নির্বাচনে যাচাই করে মনোনয়ন দেওয়া হবে। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই জানি কাউয়া বা বসন্তের কোকিলরা নয়, ত্যাগী কর্মীরাই আওয়ামী লীগের সম্পদ। মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের হাতে গড়া একজন কর্মী হিসেবে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকারকে নিজের জীবনের ব্রত হিসেবে ভেবেছি। ২০০৬ সালে কিশোরগঞ্জ-২ আসনের বয়োবৃদ্ধ এমপি ডা. মান্নানের বদলে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আমি নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করি এবং নিজের পক্ষে কর্মীদের সংগঠিত ও জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম হই। ডা. মান্নান মনোনয়ন না পাওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতালে তাকে দেখতে গিয়ে সহানুভূতিশীল হয়ে আমাকে ডেকে তার জন্য সেক্রিফাইস করতে বলেন। প্রতিশ্রুতি দেন দশম সংসদ নির্বাচনে আমাকেই মনোনয়ন দেবেন। কিন্তু জেলার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের প্রভাবে জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যাওয়া এবং সেখান থেকে আওয়ামী লীগে আসা এক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাঁটিতে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কহীন এক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ায় কী পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে তা খতিয়ে দেখলে হতাশায় ভুগতে হবে। আগামী নির্বাচনে দলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন একজন সাবেক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে এমন অপপ্রচারও চলছে এলাকায়। যা কর্মীদের মনে হতাশার সৃষ্টি করেছে। শুধু কিশোরগঞ্জ-২ আসন নয়, আরও বহু এলাকায় ঘটছে একই ঘটনা। গত এক দশকে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকার দেশের উন্নয়নে দৃষ্টিগ্রাহ্য সাফল্য অর্জন করেছে। সারা দুনিয়া বাংলাদেশের উন্নয়নকে বিস্ময় বলে অভিহিত করেছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। তারা সামান্য ছুতা পেলেই থাবা বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। অতএব সাধু সাবধান!

জাতি ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির উৎসব পালন করবে। ২০২০ সালে জাতির জনকের শততম জন্মবার্ষিকী পালিত হবে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এ দুটি বছর খুবই তাৎপর্যের দাবিদার। তাই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জিততেই হবে। জিততে হলে দলের ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীদের মূল্যায়নের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটি আসনে এলাকাবাসীর কাছের মানুষ ও নেতা-কর্মী সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন দিতে হবে। যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পেছনে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের একাট্টা হয়ে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্তের বিকল্প নেই। শোকের মাস আগস্টে শোককে শক্তিতে পরিণত করার জন্য এটিই হোক আমাদের সবার শপথ। রক্তস্নাত আগস্টে সর্বকালের সেরা বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।

লেখক : রাজনীতিক

সর্বশেষ খবর