বুধবার, ৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

হজের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে শান্তির পয়গাম

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

হজের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে শান্তির পয়গাম

ইসলামের পাঁচ রুকনের (স্তম্ভ) অন্যতম হলো হজ। আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী যারা আর্থিক ও শারীরিক দিক থেকে সামর্থ্যবান তাদের ওপর জীবনে একবার হজ ফরজ। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে শরিয়তের নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ে বায়তুল্লাহ ও সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহে নির্ধারিত ইবাদত সম্পন্ন করাই ইসলামের পরিভাষায় হজ। হজের বিষয়ে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহর হজ করা তার অবশ্যকর্তব্য। আর যে প্রত্যাখ্যান করল সে জেনে রাখুক, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বজগতের মোটেই মুখাপেক্ষী নন।’

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো কোন আমল অধিক উত্তম। তিনি বললেন, আল্লাহ ও রসুলের প্রতি ইমান আনা। প্রশ্ন করা হলো, এরপর কোনটি? জবাব দিলেন আল্লাহর পথে জিহাদ করা। আবার প্রশ্ন করা হলো, এরপর কোনটি? উত্তর দিলেন, মকবুল হজ। আরেক হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ করল এবং স্ত্রীসম্ভোগ ও কবিরা গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে মাতৃগর্ভ থেকে সদ্যপ্রসূতের মতো নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করল। বুখারি।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরাহ পরপর আদায় কর, কেননা এ দুটি কাজ দারিদ্র্য ও গুনাহ নিশ্চিহ্ন করে দেয়, যেমন রেত লোহার মরিচা এবং সোনা ও রুপার ময়লা দূর করে দেয়। আর কবুল হওয়া হজের সওয়াব জান্নাত ছাড়া কিছুই নয়।’ আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদ।

হজ পালনে কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন— ১. মুসলমান হওয়া। কোনো অমুসলিমের জন্য হজ আদায়ের অনুমতি নেই। আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র। তারা যেন মাসজিদুল হারামের কাছেও না আসে।’ সূরা তাওবা : ২৮। ২. প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া। অপ্রাপ্তবয়স্ক ও পাগলের ওপর হজ ফরজ নয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি থেকে আমলনামার কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছে। তারা হলো পাগল, যতক্ষণ না তার মস্তিষ্ক সুস্থ হয়। ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জেগে ওঠে। শিশু, যতক্ষণ পর্যন্ত সে প্রাপ্তবয়স্ক না হয়।’ মুসতাদরাক। ৩. স্বাধীন হওয়া। দাস-দাসীর ওপর হজ ফরজ নয়।  ৪. হজ আদায়ের সামর্থ্য  অর্থাৎ, কাবা পর্যন্ত সফর করার শারীরিক যোগ্যতা থাকা।

হজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ হাকিম ও প্রজ্ঞাময়। হজের কার্যক্রম মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সংহতির প্রতীক, যা আমাদের জন্য অনুকরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। হজ এমন একটি ইবাদত, যার অসিলায় মানবজীবনের গুনাসমূহ মাফ হয় আর মকবুল হজের প্রতিদান একমাত্র জান্নাত।

হজের মাধ্যমে মোমিনরা আল্লাহ ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশিত ধর্মীয় চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়। কাবা চত্বর লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হয় এবং বিশ্বের সব অঞ্চলের মুসলমানের অংশগ্রহণে একত্রে ইবাদত-বন্দেগির সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা বিশ্বভ্রাতৃত্ব স্থাপনে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। হজ মুসলিম উম্মাহর বর্ণগত, ভাষাগতসহ সব ধরনের বৈষম্য দূর করে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ শিক্ষা দেয়। হজের উদ্দেশ্যে মুসলিম জাতির সকল শ্রেণির মানুষ পবিত্র কাবায় সমবেত হয়। হজব্রত পালনের সুবাদে মুসলিম উম্মাহ বিশ্বশান্তি স্থাপন ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টির প্রয়াস পায়, সমকালীন সংকট নিরসনে যা ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া হজ সম্পাদনের কারণে পারস্পরিক খোঁজখবর নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ সব হাজীর মধ্যে জাগ্রত হয়।

পরিশেষে বলা যায়, হজ হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ। এর মাধ্যমে উম্মাহর শক্তি সুসংহত হয় এবং সুখ্যাতি ও গৌরব গোটা জাহানে ছড়িয়ে পড়ে, যা সারা জাহানের জন্য শান্তির পয়গাম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হজ পালনের তাওফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর