হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনজনের তৃতীয়জন বলল, হে আল্লাহ! যদি তুমি জানো যে, আমি এক দিনের জন্য একজন দিনমজুর নিয়েছিলাম। সে আমার অর্ধদিন কাজ করেছিল। আমি তাকে মজুরি দিলাম। সে অসন্তুষ্ট হলো এবং পারিশ্রমিক গ্রহণ করল না। আমি সে অর্থকে বাড়ালাম। শেষ পর্যন্ত তা প্রচুর সম্পদে পরিণত হলো। তারপর হঠাৎ একদিন এসে সে তার পারিশ্রমিক চাইল। আমি বললাম, এসব সম্পদ তুমি নিয়ে নাও। আমি ইচ্ছা করলে শুধু সেদিনের পারিশ্রমিক দিতে পারতাম। তুমি যদি মনে কর আমি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টির আশায় এবং তোমার শাস্তির ভয়ে করেছি, তাহলে তুমি এই গর্তের মুখ থেকে পাথর সরিয়ে দাও। আল্লাহ পাথর সরিয়ে দিলেন এবং তারা বেরিয়ে চলতে লাগল। বুখারি, আত-তারগিব।
এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তারা গর্তের মধ্যে আল্লাহর রহমতের আশাবাদী হয়ে তার শাস্তির ভয়ে কান্নাকাটি করে বিপদ থেকে বাঁচতে চেয়েছিল। মানুষ বিপদে পড়ে কান্নাকাটি করে এভাবে বাঁচতে চাইলে আল্লাহ তাকে রক্ষা করবেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার মর্যাদার কসম! আমি আমার বান্দার মাঝে দুটি ভয় ও দুটি নিরাপত্তা একসঙ্গে জমা করি না। যদি দুনিয়ায় আমাকে ভয় করে, আমি তাকে কিয়ামতের দিন নিরাপত্তা দেব। আর যদি দুনিয়ায় আমার ব্যাপারে নিরাপদ থাকে, তাহলে আমি তাকে পরকালে ভীতসন্ত্রস্ত করব। আত-তারগিব।হাসান বসরি সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মান-মর্যাদা হলো ধনসম্পদ। আর ভদ্রতা-নম্রতা হলো তাকওয়া অবলম্বন করা। মিশকাত।
মানুষ কীভাবে নম্র-ভদ্র হতে পারে এ হাদিসে তার স্পষ্ট বিবরণ পেশ করা হয়েছে। পরহেজগারিতা ছাড়া মানুষ ভদ্র হতে পারে না। আর পরহেজগার মানুষ ছাড়া অন্য কাউকে ভদ্র বলা যায় না। মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে তাকে বিচার করা যায় না। প্রকৃতপক্ষে তাকওয়াই মানুষকে শালীন-ভদ্র করে গড়ে তোলে। হজরত উকবার ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের বংশ পরিচয় এমন কোনো বস্তু নয় যে, তার কারণে তোমরা অন্যকে গালমন্দ করবে। তোমরা সবাই আদমের সন্তান। দাঁড়িপাল্লার উভয় দিক যেমন সমান থাকে, যখন তোমরা পূর্ণ করনি। দীন ও তাকওয়া ছাড়া একজনের ওপর আরেকজনের কোনো মর্যাদা নেই। তবে কোনো ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য অশ্লীল বাকচারী ও কৃপণ হওয়াই যথেষ্ট। আহমাদ, মিশকাত।
এ হাদিস দ্বারা বোঝা গেল যে, বংশের নিন্দা করা যাবে না। আর পাল্লার উভয় দিক যেমন সমান, তেমন আদমসন্তান হিসেবে সব বংশের মানুষই সমান। সুতরাং একমাত্র তাকওয়াই হলো উঁচু-নিচু মান নির্ধারণের মাধ্যম। এ হাদিসে উল্লিখিত দুটি দোষ মানুষের অভদ্র হওয়ার মাধ্যম— ১. অশ্লীল বাকচারী ২. কৃপণ। যাকে-তাকে যখন-তখন যথেচ্ছ গালিগালাজ করা, অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা অভদ্রতা। এসব পরিহার করা যেমন প্রত্যেক মুমিনের জন্য অবশ্যকর্তব্য, তেমন কৃপণতা ত্যাগ করা জরুরি।
হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ইমানদার ছাড়া কাউকে সাথী করো না। আর পরহেজগার ছাড়া কেউ যেন তোমার খাদ্য না খায়। তিরমিজি, আবু দাউদ, মিশকাত। এ হাদিস দ্বারা প্রতীয়মাণ হয় যে, ইমানদার ব্যক্তি ছাড়া কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। আর পরহেজগার ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে স্বেচ্ছায় খাদ্য দেওয়া যাবে না। তবে পরহেজগার ছাড়া কেউ যদি চায় তাহলে তাকে সাধ্যমতো দান করতে হবে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি কাজ মানুষকে রক্ষা করে এবং তিনটি কাজ মানুষকে ধ্বংস করে। রক্ষাকারী কাজ তিনটি হলো ১. প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা ২. সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে হক কথা বলা এবং ৩. সচ্ছলতায় ও অসচ্ছলতায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। আর ধ্বংসকারী কাজ তিনটি হলো ১. প্রবৃত্তির অনুসরণ করা ২. কৃপণতাকে মেনে নেওয়া এবং ৩. আত্ম-অহংকার করা। আর এটিই হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন। বায়হাকি, মিশকাত।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক