রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং রাষ্ট্রের সংস্কার

আবু হেনা

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং রাষ্ট্রের সংস্কার

ঘাতক বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার পর সপ্তাহজুড়ে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ। শিক্ষার্থীরা ঘাতক বাসচালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও একজন মন্ত্রীর অস্বাভাবিক আচরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করলেও তরুণ কিশোরদের আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল সুদূরপ্রসারী। ৪৭ বছরের ঘুণেধরা রাষ্ট্রের সংস্কার চায় ওরা। এ দেশের সব মানুষের সমর্থন আছে এ আন্দোলনে। এ আন্দোলন সরকারের পক্ষেও নয়, সরকারের বিপক্ষেও নয়। বেপরোয়া বাস-ট্রাকের চাপায় একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটবে আর গাড়ি মালিক সমিতি ও শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের দাপটে অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে তা আর হতে দেওয়া যাবে না। এ অবস্থার আমূল পরিবর্তন চায় এ দেশের জনগণ। আজ একটি সত্য দেশবাসীর সামনে উন্মোচিত হয়েছে। তা হলো এই যে, দেশের পরিবহন খাতটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সরকারের একজন ক্ষমতাধর মন্ত্রী সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। সে কারণেই এ আন্দোলনকে বিফল করার প্রয়াস চালানো হয়েছে কোনো ঘোষণা ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়ে। সবার ধারণা, ছাত্রদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ব্যর্থ করার জন্যই পাল্টা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অবৈধ ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। তারা ছাত্রদের মুখোমুখি না হয়ে তাদের লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ির চালককে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এটা তারা করেছেন তাদের নেতা নৌপরিবহনমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ মদদে। আন্দোলনের সময়ে রাজধানীর ধানমন্ডি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। সংঘর্ষ, গুলি, টিয়ার গ্যাস, সাংবাদিকদের মারধর, গাড়ি-ক্যামেরা ভাঙচুর হয়েছে। ফেনীতে কয়েক শ শিক্ষার্থী হামলার শিকার হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় শতাধিক ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাল্টা হিসেবে শ্রমিকদের রাস্তায় নামানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। তারপর তারা বেআইনিভাবে অঘোষিত ধর্মঘটের পথ বেছে নেয়। ‘প্রতিশোধের’ এ ধর্মঘটে সারা দেশের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে। মোটরযান আইন ও শ্রম আইনে এ ধর্মঘট সম্পূর্ণ অবৈধ। পরিবহন খাতের সূত্রমতে, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো এসব পরিস্থিতিতে এক হয়ে মাঠে নামে। আর এতে মুখ্য নেতৃত্ব দেন সরকারের নৌপরিবহনমন্ত্রী। তার সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনই শ্রমিকদের নিয়ে প্রথমে বাস বন্ধের উদ্যোগ নেয়। মালিকরাও এ উদ্যোগে শামিল হন। সারা দেশের মালিক সমিতিগুলোর নেতৃত্বে আছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা এবং ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।

মোটরযান আইনে বাস-মিনিবাসের অনুমতির অন্যতম শর্ত হচ্ছে গাড়ি চলাচল নিয়মিতভাবে অব্যাহত রাখতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে তা রুট পারমিট শর্তের লঙ্ঘন। এর সর্বোচ্চ শাস্তি রুট পারমিট বাতিল। গত বছর আদালত একজন চালককে যাবজ্জীবন ও আরেকজনকে মৃত্যুদণ্ড দিলে পূর্ব  ঘোষণা ছাড়াই বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ করে দেয় মালিক-শ্রমিকরা। সেবার নৌপরিবহনমন্ত্রীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনেই বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই বছর ২০ বছরের পুরনো বাস-মিনিবাস ও সিটিং সার্ভিস বন্ধ অভিযান শুরু হলে ঘোষণা ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শ্রম আইন অনুসারে মালিকরা ধর্মঘট ডাকতে পারেন না। তারা নির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে ‘লে অফ’ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অন্তত ১৫ কর্মদিবসের আগে শ্রমিকদের অবহিত করতে হবে এবং মজুরি দিয়ে দিতে হবে। দুঃখের বিষয়, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মতোই শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সরকার দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করেছে। একদিকে সরকার তাদের ৯ দফা দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছে, আন্দোলনকে যৌক্তিক বলছে, অন্যদিকে সরকারের একজন ক্ষমতাধর মন্ত্রী যিনি পুরো পরিবহন সেক্টরকে এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির সরাসরি বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে তরুণ-কিশোররা ৪৭ বছরের জমে ওঠা দুর্গন্ধময় আবর্জনার স্তূপকে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও জাতীয় জীবন থেকে সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে তাদের উপদেশ দেওয়ার ধৃষ্টতা না দেখিয়ে যদি সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা নিজ নিজ বাহিনীর মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেন, যারা লাইসেন্স ও ফিটনেস-বিহীন গাড়ি চালাচ্ছেন তাদের এবং মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেন, তাহলে শিক্ষাঙ্গন ছেড়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের রাজপথে নেমে আসতে হতো না।

আজ এ খুদে আন্দোলনকারীরাই দীর্ঘ ৪৭ বছর পর প্রমাণ করল আমরা কতটা দুর্নীতিবাজ, কত লোভী, স্বার্থপর। আমরা যারা আইন, নিয়মনীতি সৃষ্টি করি, তারাই আইন, নিয়মনীতি ভঙ্গকারী। আজ আমাদের সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন কী নিদারুণভাবে ভেঙে পড়েছে, সমাজের অবক্ষয় কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা সমগ্র জাতিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আজকের এই তরুণ প্রজন্ম। ওরা ৪৭ বছরের অপশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। আকাশে-বাতাসে আওয়াজ তুলেছে! ‘যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ’। জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ভাষায় বলছে—

‘আমরা যদি না জাগি মা

কেমনে সকাল হবে?’

ওরা দাঁড়িয়েছে ঘুণেধরা সিস্টেমের বিরুদ্ধে, অচলায়তনের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অবিচারের বিরুদ্ধে, শোষণ আর শাসনের বিরুদ্ধে। ওদের কোনো নেতা নেই। ওরা চঞ্চল, ওরা দুর্জয়, ওরা কাউকে করে না ভয়। জনমত তৈরির স্লোগান লেখা প্লাকার্ড নিয়ে ওরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের আবেগের তাড়নায় রাস্তায় নেমে এসেছিল। সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড়ে এক ছাত্রী একটি প্লাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে! ‘আর কত লাশের বিনিময়ে শান্তি আসবে?’ ওরা স্লোগান দিচ্ছে, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে?’ ওরা শূন্যস্থান দেখিয়ে জানতে চাচ্ছে ‘এবার শূন্যস্থানে মৃতদের তালিকায় কার নাম যোগ হবে?’ ওরা স্লোগান দিচ্ছে, ‘ওরা ভয়ানক, বেপরোয়া যানচালক, ওরা আমাদেরকে পিষে মারবে, ধাক্কা দিয়ে খাদে ফেলে দিবে, আহত হয়ে উঠতে গেলে নদীতে ছুড়ে ফেলবে, কিন্তু ওদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না!’

ওরা উচ্চৈঃস্বরে বলছে, ‘আমরা কারা?’ আমরা জনতা। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ব। আমরাই আনব ‘নতুন ভোর’। এ কয়েকদিনে ওরা ঠিকই প্রমাণ করেছে ওরা ৪৭ বছরের রাষ্ট্রের সংস্কার চায়। এতদিনে ওরাই প্রমাণ করল রাষ্ট্র কী? রাষ্ট্র কার? রাষ্ট্র কে চালায়। ওরা আটক করেছে এক অতি ক্ষমতাধর সচিবের গাড়ি। তার গাড়িচালকের লাইসেন্স মেয়াদ উত্তীর্ণ, এ গাড়িটি সরকার সচিবের মালিকানায় দিয়েছে। এ গাড়ি শুধু তিনি নিজে নন, তার পরিবারের সদস্যরাও সার্বক্ষণিক ব্যবহার করেন। এ গাড়িটি ত্রুটিযুক্ত কিনা, এর চালকের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কিনা এসবই দেখার দায়িত্ব সচিবের নিজের। এ গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে কোনো পথচারীকে হত্যা করলে গাড়িচালক এবং যার নামে এ গাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছে তাদের দুজনেরই হত্যার দায়ে বিচার ও সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে। অবশ্য যদি পুলিশ আইন প্রয়োগ করে গাড়ি আটক করে এবং চালক ও গাড়ির মালিককে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে এবং আদালত ‘ন্যাচারাল জাস্টিস’-এর ভিত্তিতে বিচার করে রায় দেয়। কিন্তু হীরক রাজার দেশে এ আইন, এ নিয়ম আছে কি? এখানে যে নিয়ম আছে তাতে সচিবের গাড়ি দেখলেই পুলিশ স্যালুট মারবে, বুটের ঠকঠক আওয়াজ করে। আজ তরুণ ছেলেমেয়েরাই আমাদের বলে দিল ‘সবাই স্যালুটের যোগ্য নয়।’ এ গাড়ি আটক করে তার গাড়ির লাইসেন্সবিহীন চালককে পুলিশে সোপর্দ করে এ দেশের গর্বের ধন, কিশোর-তরুণরাই সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল রাষ্ট্র, প্রশাসন কে চালায়, কীভাবে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি পরিচালনা করতে হয়। তারা বলে দিল কীভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হয়। তারা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করল জনগণই এ দেশের মালিক। জনগণের আদেশ-নির্দেশেই দেশ চলবে, সরকার চলবে, চলবে প্রশাসন। এ দেশে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

সরকারি অবস্থান ও মর্যাদার প্রতীক জাতীয় পতাকাটি সচিবের গাড়িতে শোভা না পেলেও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে তার গুরুত্ব ওই পদের কারণেই বিবেচনায় আসে, সেই সঙ্গে সরকারি বিধি-বিধান ও রাষ্ট্রাচার অনুযায়ী তার গুরুত্ব ওই সরকারি পদ ও মর্যাদার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই পতাকা না থাকলেও কর্তব্যরত পুলিশ তার গাড়িকে সম্মান দেখায়। দীর্ঘ ৪৭ বছর ধরেই রাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ এ কাজটি করে আসছে। আজ তার ব্যতিক্রম ঘটল বাচ্চা ছেলেমেয়েদের হাতে। ওরা দেখিয়ে দিল শুধু পদমর্যাদা মানুষকে দায়িত্বশীল করে তোলে না, এরা বোঝে না প্রকৃতির মতোই মনুষ্যসমাজেও কিছু বিধি, আইন ও বিধান থাকে। প্রকৃতির মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এক অমোঘ শক্তি। তেমনি সমাজেরও একটি মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আছে। প্রতিটি ক্রিয়ার সেই কারণেই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া এ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। মনুষ্যসমাজেও একই প্রকৃতি-প্রদত্ত আইন প্রচলিত। এ আইনের প্রয়োগে কোনো বাচবিচার নেই, উচ্চ-নীচ, আপন-পর নেই, প্রকৃতির নিয়মে সবাই সমান। আইনের শাসন ছাড়া যেমন মহাবিশ্ব চলে না, তেমন মানবসমাজও চলতে পারে না, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না হলে সমাজে স্থিতিশীলতা, শৃঙ্খলা, শান্তি এবং আর্থসামাজিক প্রগতি ও উন্নতি আসে না।

আজ ক্ষমতার নেশায় উন্মত্ত মানুষ প্রকৃতিতে আইনের শাসন অমোঘ জেনেও একটি কথা বোঝে না যে আইনের শাসন ছাড়া যেমন মহাবিশ্ব চলে না, চলতে পারে না, তেমন কোনো মানবসমাজ, দেশ, রাষ্ট্রও চলতে পারে না। ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত না হলে সমাজে স্থিতিশীলতা, শৃঙ্খলা, শান্তি এবং আর্থসামাজিক প্রগতি ও উন্নতি আসে না। সুন্দর সমাজ গড়তে হলে সমতাভিত্তিক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। মুক্ত হতে হবে ব্যক্তিনির্ভর, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত ও শাসনের হাত থেকে। আজ যারা রাজপথে আন্দোলনে নেমেছে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে অর্থবহ করতে হলে আইনকে, প্রতিষ্ঠানকে ও সমাজের মঙ্গলের জন্য সৃষ্ট নীতি, বিধি, রীতিকে মহাশক্তিধর মানুষ ও শাসক-প্রশাসকদের ওপরে স্থান দিতে হবে। যেমন সূর্যকেও তার বিধিবদ্ধ নিয়ম মেনে চলতে হয়। এক কথায় দেশ ও রাষ্ট্রকে সুরক্ষা দিতে পারে একমাত্র মজবুত আইনের শাসন ও বলিষ্ঠ ন্যায়বিচার।

বাস্তবভিত্তিক ও জীবনমুখী স্বপ্ন যে কোনো দেশ ও জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির অন্যতম চালিকাশক্তি। এ অঞ্চলের মানুষ স্মরণাতীতকাল থেকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ জীবনের স্বপ্ন দেখে আসছে। এ ভূখণ্ডের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যারা যুগে যুগে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারাও যুগান্তকারী ‘ভিশন’-এর ভিত্তিতে দেশ জাতিকে এগিয়ে নিয়েছেন। এবারে আমাদের স্বপ্ন সম্ভাবনাময় স্বাধীনতার স্বপ্ন, সার্বিক অর্থনৈতিক মুক্তি ও সমৃদ্ধির স্বপ্ন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতাভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। কিন্তু এসব কিছু ছাড়িয়ে আজ যা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে তা হলো আইন-শৃঙ্খলার সুষ্ঠু ও ন্যায়নীতিভিত্তিক বাস্তবায়ন করে নিরাপদ জীবন ও স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি সুনিশ্চিত করা।

আজ প্রয়োজন বলিষ্ঠ, সুশৃঙ্গল ও জনগণের আস্থাবান প্রশাসন ব্যবস্থা, প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সব মন্ত্রণালয়ে অভিজ্ঞ, দক্ষ, পেশাদার ব্যক্তিদের। আজ সময়ের প্রয়োজনে সমাজ বদলেছে, বদলে গেছে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পটভূমি।

আজ জনপ্রশাসনের দলীয়করণ চরমে। রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য, দুর্নীতিবাজদের চারণ ক্ষেত্র। রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যাধিগ্রস্ত, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা এখন মোক্ষলাভের একমাত্র উপায়। দেশে নেই সজীব ও প্রাণচঞ্চল গণতন্ত্র। আজ সর্বত্র আস্থার সংকট, এ পরিবেশেই এ দেশের কোমলমতি কিশোর-তরুণরা রাজপথ বেছে নিয়েছিল। ওদের নিঃস্বার্থ, নিষ্পাপ আবেগঘন জাতীয় আন্দোলন ব্যর্থ হলে নিরুপায় জাতিকে বাধ্য হয়েই কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায় বলতে হবে :

‘... রৌদ্র-জ্যোতি হতে

আবার ফিরাও মোরে তমসার প্রত্ন দায়ভাগে।’

 

            লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য

সর্বশেষ খবর