রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরে হজ ও ওমরাহ

মাওলানা মুহম্মাদ আশরাফ আলী

কাবাঘর দুনিয়ার বুকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য নির্মিত প্রথম মসজিদ। ফেরেশতারা এটি নির্মাণ করেন। তারা কাবাঘরে প্রথম ইবাদত করেন। পরে দুনিয়ার প্রথম মানব হজরত আদম আলাইহিস সালাম কাবাঘরে ইবাদত করেন। আল্লাহতায়ালা আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হজ করা ফরজ, আর যে অস্বীকার করবে, তবে তার জেনে রাখা উচিত, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্ববাসীর  মুখাপেক্ষী নন।’ সূরা আলে ইমরান : ৯৭।

হজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের একটি; যা স্রষ্টার প্রতি অগাধ বিশ্বাস, অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও পূর্ণ আনুগত্যের প্রতীক। স্রষ্টার সঙ্গে বান্দার ভালোবাসার পরীক্ষার চূড়ান্ত ধাপ হলো হজ।

হজ ও ওমরাহর উদ্দেশ্য প্রায় অভিন্ন। কাবাঘর তাওয়াফ করার উদ্দেশ্যেই উভয় ইবাদত করা হয়। হজ ও ওমরাহর মধ্যে গুণগত মিল থাকায় অনেকে ওমরাহকে ছোট হজ বলেও অভিহিত করেন। যে নামেই অভিহিত করা হোক, হজ ও ওমরাহর সুস্পষ্ট পার্থক্যও রয়েছে। ৯ জিলহজ অকুফে আরাফাত বা আরাফায় অবস্থানের আগে হজের ইহরাম বেঁধে বেশকিছু আমল পালন করার নামই হলো হজ। আর্থিক সামর্থ্যের অধিকারীদের জন্য হজ ফরজ। পক্ষান্তরে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় কাবাঘর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ায় সায়ি করার পর হলক বা মাথা মুণ্ডন করে ইহরামমুক্ত হওয়াকে ওমরাহ বলে। হজ ও ওমরাহর মধ্যে ব্যাপক সাদৃশ্য রয়েছে। হজের ইহরামের পর যেসব বিষয় হারাম, মাকরুহ, সুন্নত ও মুবাহ ওমরাহর ক্ষেত্রেও তা পালনীয়। হজ ও ওমরাহর মধ্যে আটটি পার্থক্য রয়েছে—

১. হজের জন্য একটি বিশেষ সময় নির্ধারিত রয়েছে, কিন্তু ওমরাহ বছরের যে কোনো সময় আদায় করা যায়। কেবল হজের নির্দিষ্ট দিনসমূহে অর্থাৎ ৯ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত ওমরাহ পালন করা নিষেধ; মাকরুহে তাহরিমি।

২. হজ ফরজ, কিন্তু ওমরাহ ফরজ নয়।

৩. হজ বিনষ্ট হতে পারে কিন্তু ওমরাহ বিনষ্ট হতে পারে না।

৪. হজে আরাফাত ও মুজদালিফায় অবস্থান, দুই নামাজের একত্রীকরণ, খুতবা প্রভৃতি আছে, কিন্তু ওমরায় নেই।

৫. হজের তাওয়াফে কুদুম ও তাওয়াফে বিদা প্রভৃতি অপরিহার্য, কিন্তু ওমরায় তা নেই।

৬. ওমরাহ ফাসেদ করলে অথবা নিষিদ্ধ কাজ সংঘটিত করা অবস্থায় তাওয়াফ করলে বকরি জবাই করলেই যথেষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু হজে তা যথেষ্ট হয় না।

৭. ওমরার মিকাত সব লোকের জন্যই হিল্ল এলাকা। কিন্তু হজে তার বিপরীত। মক্কাবাসীকে হারাম থেকে হজের ইহরাম বাঁধতে হয়। বাইরের কোনো লোক যখন ওমরাহ পালনের ইচ্ছায় আগমন করেন, তখন তারা নিজ নিজ মিকাত থেকেই ইহরাম বেঁধে আসেন।

৮. ওমরার তাওয়াফ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই তালবিয়া পাঠ মুলতবি করতে হয়, কিন্তু হজে জামারায়ে উখরায় রমি বা কঙ্কর নিক্ষেপ শুরুর সময় থেকে মুলতবি করতে হয়। হজ ও ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্য সর্বশক্তিমান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। আল্লাহ এক এবং তাঁর কোনো শরিক নেই— এ সত্য বুকে ধারণ করে জীবনযাপনের শপথ নেওয়া।

 

            লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর