বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণে অভিভাবকের ভূমিকা

প্রফেসর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আজিজুল ইসলাম

মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণে অভিভাবকের ভূমিকা

ভয়াবহ এক ব্যাধি মাদকাসক্তি। শুধু ব্যক্তি নয়, তা ধ্বংস করে সমাজকে, তাই মাদকাসক্তি একটি সামাজিক ব্যাধি। দেশের ভবিষ্যৎ তরুণ প্রজন্মই আজ মাদকাসক্তির আগ্রাসনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। মাদকাসক্তের দুই তৃতীয়াংশই বয়সে তরুণ বা টিনএজার। অতি দ্রুত মাদকাসক্তি প্রতিরোধ করা না গেলে তরুণসমাজ তথা জাতি অন্ধকারে নিপতিত হবে। আমরা জানি, প্রত্যেক ব্যক্তি একটি পরিবার বা সমাজের অংশ। প্রায় সব তরুণ-তরুণী কোনো না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বা সম্পৃক্ত। পারিবারিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে মাদকাসক্তি ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমরা মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণে পিতা/মাতা/অভিভাবকদের করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করছি।

পরিবার সমাজের প্রাথমিক সোপান। পরিবার বেড়ে ওঠার, শিক্ষা লাভের, আদর্শ ও নৈতিকতা শিক্ষার, মানুষ হওয়ার সর্বপ্রথম ও প্রাথমিক স্তর। মাদকাসক্তি প্রতিরোধে তাই পরিবার তথা পিতা/মাতা/অভিভাবকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পিতা/মাতা হিসেবে আপনার সন্তানকে মাদকাসক্তির হাত থেকে বাঁচাতে নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপ নিতে পারেন— ক. আপনার সন্তানের খোঁজ রাখুন। সে কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, তার বন্ধুবান্ধব কারা তার খবর নিতে হবে। আপনার সন্তানের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গেও সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করুন। খ. সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন। তার আবেগের, ভালোবাসার আর নির্ভরতার স্থানটি যেন আপনি হতে পারেন। আপনার সন্তান যেন তার অনুভূতি-আবেগগুলো আপনার সঙ্গে ভাগ করতে পারে। সন্তানের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক হবে সহজ, স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ। গ. নিজের ব্যক্তিত্ব আর ইমেজ সুন্দর করুন/রাখুন। আপনি যেন আপনার সন্তানের রোল মডেল/আদর্শ হতে পারেন। নিজের বাজে অভ্যাস, খারাপ দিকগুলো ত্যাগ করে নিজেকে সৎ, আদর্শবান করে সন্তানের সামনে উপস্থাপন করুন যাতে সন্তান আপনাকে অনুসরণ/অনুকরণ করতে পারে। ঘ. পরিবারের একটি সুষ্ঠু/সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন ও অনুসরণ করুন। যেমন ২১ বছরের আগে ধূমপান নিষেধ। যে কোনো মাদক যে কোনো পর্যায়ে গ্রহণ নিষেধ। যেসব পার্টিতে মাদক ব্যবহারের সম্ভাবনা থাকে সেসব পার্টিতে যাওয়া নিষেধ। রাতে বাড়ির/বাসার বাইরে থাকা যাবে না, খাবার একই টেবিলে একই সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে ইত্যাদি। ঙ. সন্তানকে মাদকের কুফল সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে, সতর্ক করতে হবে। সেজন্য নিজেকেও এসব বিষয়ে জানতে হবে। মাদকাসক্তির লক্ষণগুলো জানুন। আপনার সন্তানের এসব লক্ষণ আছে কিনা সেদিকে নজর রাখুন। চ. সন্তানকে আপনার সুন্দর চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপারগুলো স্পষ্ট করে বলুন। সন্তানের বিষয়ে আপনার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর ভালোলাগার বিষয়গুলোও তাকে বলুন। ছ. সন্তানকে সহশিক্ষা, পুঁথি-পুস্তকের বাইরের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করুন। যেমন খেলাধুলা, ব্যায়াম, বিতর্ক, গান-বাজনা, নাচ, ছবি আঁকা ইত্যাদি। এসব সুকুমারচর্চার মাধ্যমে মন ও মনন সুন্দর হয়। জ. কখনো কখনো সন্তানকে ‘না’ বলতে শিখুন। অনুশাসন, নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলার বিষয়ে প্রয়োজনে কিছুটা কঠোর হোন। ঝ. সন্তানের মধ্যে তার নিজস্ব সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গিগুলোকে পরস্ফুিটিত করতে সহায়তা করুন। মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করুন। ঞ. মা-বাবার দৃষ্টিভঙ্গি এক হওয়া বাঞ্ছনীয়। দুজন দুই রকম বললে/করলে সন্তানের চিন্তা-চেতনা-অনুভূতিগুলোর বিচ্যুতি আর বিপর্যয় ঘটে। পিতা-মাতার সিদ্ধান্তটি একরকম হলে খুব ভালো হয়।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান ও উপদেষ্টা

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ

ও সিএমএইচ ঢাকা।

 

সর্বশেষ খবর