বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

কোরবানির তাৎপর্য ও আহকাম

মুফতি ওলিউল্লাহ পাটোয়ারী

কোরবানির তাৎপর্য ও আহকাম

পশু উৎসর্গ করা হবে এক আল্লাহর উদ্দেশে যার কোনো শরিক নেই। আল্লাহ রব্বুল আলামিন মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর ইবাদতের জন্য। যেমন তিনি বলেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে এজন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা শুধু আমার ইবাদত করবে।’ আল্লাহ তাঁর ইবাদতের জন্য মানবজাতিকে সৃষ্টি করলেন। ইবাদত হলো যেসব কথা ও কাজ আল্লাহ রব্বুল আলামিন ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন; হোক সে কাজ প্রকাশ্যে বা গোপনে। আর এ ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাঁর উদ্দেশে পশু জবাই করা। এ কাজটি তিনি শুধু তাঁর উদ্দেশেই করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘বল, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশে। তাঁর কোনো শরিক নেই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’

ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ রব্বুল আলামিন নির্দেশ দিয়েছেন ‘যেসব মুশরিক আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে পশু জবাই করে তাদের যেন জানিয়ে দেওয়া হয় আমরা তাদের বিরোধী। সালাত, কোরবানি শুধু তাঁর নামেই হবে যার কোনো শরিক নেই।’ এ কথাই আল্লাহ সূরা কাওসারে বলেছেন, ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।’ অর্থাৎ তোমার সালাত ও কোরবানি তাঁরই জন্য আদায় কর। কেননা মুশরিকরা প্রতিমার উদ্দেশে প্রার্থনা করে ও পশু জবাই করে। আর সব কাজে ইখলাস অবলম্বন করতে হবে। ইখলাসের আদর্শে অবিচল থাকতে হবে। যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে পশু উৎসর্গ বা জবাই করবে তার ব্যাপারে কঠোর শাস্তির কথা হাদিসে এসেছে।

আবু তোফায়েল থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলী ইবনে আবি তালিবের কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে বললেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোপনে আপনাকে কী বলেছিলেন? বর্ণনাকারী বলেন, আলী (রা.) এ কথা শুনে রেগে গেলেন এবং বললেন, ‘আল্লাহর রসুল মানুষের কাছে গোপন রেখে আমার কাছে একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি বললেন, হে আমিরুল মোমিনিন! সে চারটি কথা কী? তিনি বললেন, ‘১. যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয় আল্লাহ তাকে অভিশাপ দেন। ২. যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে পশু জবাই করে আল্লাহ তার ওপর লানত করেন। ৩. ওই ব্যক্তির ওপর আল্লাহ লানত করেন যে ব্যক্তি কোনো বেদাতিকে প্রশ্রয় দেয়। ৪. যে ব্যক্তি জমির সীমানা পরিবর্তন করে আল্লাহ তাকে লানত করেন। এ কাজগুলো এমন, যে ব্যক্তি তা করল সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে কুফরির সীমানায় প্রবেশ করল। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববি (রহ.) বলেন, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে পশু জবাই করার অর্থ এমন, যেমন কোনো ব্যক্তি প্রতিমার নামে জবাই করল অথবা কোনো নবীর নামে জবাই করল বা কাবার নামে জবাই করল। এ ধরনের যত জবাই হবে সব নাজায়েজ ও তা খাওয়া হারাম।

লেখক : খতিব, বাইতুন নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, দক্ষিণ পীরেরবাগ, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর