শুক্রবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ

প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কাছে জাতির অনেক ঋণ

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের অবদানের প্রতিদান দেওয়া দূরের কথা, অনেকেই দেশে-বিদেশে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের এক বড় অংশ ছিলেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের। বাঙালি প্রতিরোধ যোদ্ধারা দেশে ফিরে নিজ ভিটায় বসবাসের সুযোগ পেলেও আদিবাসীদের বেশিরভাগ সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব প্রতিরোধ যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা আসাম ও মেঘালয়ের গহিন পাহাড়ে অবর্ণনীয় অভাব-অনটনে দিনাতিপাত করছেন। ৪৩ বছরেও তাদের নির্বাসন জীবনের অবসান ঘটেনি, কোনো সরকার তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী চক্রের বংশবদরা দেশত্যাগী বীরযোদ্ধাদের ভিটামাটি, সহায়-সম্পদ ইতিমধ্যে জবরদখল করে নিয়েছে। তারা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আত্মীয়-স্বজনদেরও বিতাড়িত করেছে নিষ্ঠুর বর্বরতায়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, হাজং বিদ্রোহ দমনে সীমাহীন অত্যাচার-নির্যাতন, ’৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাসহ ’৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্বিচার হত্যাকাণ্ডেও গারো পাহাড়বাসীকে দেশত্যাগে বাধ্য করা যায়নি। অব্যাহত নিপীড়ন-নির্যাতনের মুখেও তারা লাল মাটি আঁকড়ে থেকেছেন মাতৃভূমিতেই। অথচ সেই লড়াকু মানুষজনের অনেকেই পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করে নিজেদের বাপ-দাদার ভিটামাটিতে টিকে থাকতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় তাদের ওপর নেমে আসে সীমাহীন প্রশাসনিক অত্যাচার, খুনি চক্রের দোসররা মেতে ওঠে জিঘাংসায়। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে যে সশস্ত্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল তাতে ব্যাপকভাবে যোগ দেয় বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম ভক্তি পোষণকারী বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের দোসররা ক্ষমতা হারালেও জাতির পিতা হত্যার বিরুদ্ধে যারা প্রতিরোধ গড়ে তুলে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয় তাদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ না নেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারীদের প্রতি এ আচরণ কৃতঘ্নতার পরিচায়ক বললেও কম বলা হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারীদের কাছে জাতির অনেক ঋণ। প্রতিবাদকারীদের মধ্যে যারা বিদেশ-বিভুঁইয়ে রয়েছেন তাদের শুধু দেশে ফিরিয়ে আনা নয়, সসম্মানে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে এমনটিই কাঙ্ক্ষিত। এটি জাতীয় কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর