সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

অটল বিহারি বাজপেয়ির সঙ্গে কিছুক্ষণ

মেজর মো. আখতারুজ্জামান (অব.)

অটল বিহারি বাজপেয়ির সঙ্গে কিছুক্ষণ

সমসাময়িক রাজনীতির সিংহ পুরুষ অতি উচ্চ মাপের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অটল বিহারি বাজপেয়ি সদ্য গত হয়েছেন। আমি তার বিদেহি আত্মার পরম শান্তি কামনা করছি। এই সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তিতুল্য মহাপুরুষের কাছে আসার দুর্লভ সুযোগ হয়েছিল যা সম্ভবত আমার জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্মৃতি।

১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে দিল্লিতে প্রথম সার্ক স্পিকার ও সংসদ সদস্যদের সম্মেলন সব সার্কভুক্ত দেশের স্পিকার ও আমন্ত্রিত সংসদগণের সঙ্গে আমিও যোগদান করেছিলাম। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলের লাগাতার সংসদ বয়কটের কারণে বিরোধী দলের কোনো সংসদ সদস্য ওই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেনি। তখন ভারতে নরসিমা রাও প্রধানমন্ত্রী এবং তার দল কংগ্রেস ক্ষমতায়। তারিখটা আমার এ মুহূর্তে মনে নেই। বিজ্ঞান ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন। সম্মেলনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সার্কভুক্ত দেশের স্পিকার ও সংসদগণ ছাড়াও ভারতের মন্ত্রিপরিষদের সিনিয়র মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিরোধী দলের নেতৃস্থানীয় সদস্য, সরকারি সিনিয়র কর্মকর্তা ও বিশাল সংখ্যক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন। প্রথম সম্মেলন হওয়ার কারণে সম্মেলনটি যথেষ্ট গুরুত্ব পায় এবং খুবই উৎসবমুখরভাবে তিন দিনব্যাপী সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও সকাল ৮টায় সম্মেলন উদ্বোধন করেন এবং উদ্বোধন অধিবেশন দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে। দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের বিরতি।

বেলা ২টায় প্রথম আলোচনা সভা শুরু হয়। ভারতের স্পিকার প্রারম্ভিক ভাষণ দেন। তারপরেই আমার নাম ঘোষণা হয়। আমার নামের ঘোষণা শুনে ও মঞ্চের পেছনে কম্পিউটার স্ক্রলে আমার নাম দেখে আমি সম্পূর্ণ ঘাবড়ে যাই। বাংলাদেশের বি এবং আমার নামের প্রথম অক্ষর এ্যা হওয়ার কারণে আমার নামটি প্রথমে আসে। মজার বিষয় হলো আমি প্রারম্ভিক বক্তৃতা চলাকালে পরের দিনে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য একটি খসড়া লিখছিলাম। আমার পাশে ছিলেন নোয়াখালীর মহিলা সংসদ সদস্য হালিমা। আগের রাত ১২টায় বিমানে চড়ে ভোর ৫টায় দিল্লি পৌঁছে সকাল সকাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করাতে আমার কোনো প্রকার পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। তাছাড়া ১৯৯১ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার পরে সরকারিভাবে কোনো সফরে যাইনি এবং কোনো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ারও কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাও ছিল না। সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল ওই সম্মেলনে আমার যাওয়ার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। স্পিকার রাজ্জাক আলী আমার প্রিয় এবং শ্রদ্ধাভাজন যিনি আমাকেও যথেষ্ট স্নেহ করতেন। সংসদে বক্তব্য রাখার জন্য তিনি আমাদের কয়েকজনকে বেশ উৎসাহিত করতেন। মূলত স্পিকার রাজ্জাক সাহেবের উৎসাহেই শেষ মুহূর্তে যাওয়া হয়েছিল। যাওয়ার আগের দিন সন্ধ্যায় বারডেমে একটি গণ্ডগোল হয় এবং আমি আহত হই। যার ফলে রাত ১০টা পর্যন্ত সেখানে ব্যস্ত ছিলাম। সবার শেষে বিমানবন্দরে পৌঁছে রাত ১২টায় দিল্লি রওনা হই।

আমি যখন বসে বসে বক্তৃতার খসড়া করছিলাম তখন বারবার সংসদ সদস্য হালিমা প্রশ্ন করছিলেন কিন্তু তার কোনো জবাব দিচ্ছিলাম না। লেখাটি শেষ করে হালিমাকে বললাম আগামীকালের জন্য একটি বক্তৃতা লিখলাম। হালিমা কী বলতে যাচ্ছিল এর মধ্যে মাইকে আমার নাম ঘোষণা হলো। সঙ্গে সঙ্গে হালিমা বলে উঠল আখতার ভাই আপনার নাম তো এখনই ঘোষণা করছে। কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বোন হালিমা উৎসাহ জোগাল। লিখেই তো ফেলেছেন, আজকেই দিয়ে দেন। অনিচ্ছা সত্ত্বে দাঁড়ালাম। দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ডায়াসে বসা স্পিকার রাজ্জাক আলী সাহেবের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে গেল। উনার চোখে উৎসাহের আহ্বান। ছিলাম প্রায় পিছনের সারির দিকে। একটু আগাতে দেখা হলো চিফ হুইপ খন্দকার দেলোয়ার সাহেবের সঙ্গে। তিনি দাঁড়িয়ে হাত মিলিয়ে বললেন, তুমি প্রথম, সুন্দর করে বক্তৃতা দিও। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রথম বক্তা হিসেবে তিনি আমাকে উৎসাহিত ও গাইড করে দিলেন। খুব ভয়ে ভয়ে পোর্ডিয়ামের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। হাতের নোট খাতাটা পোর্ডিয়ামের ওপর মেলে রাখলাম। বক্তৃতা শুরু করার জন্য সামনে তাকালাম। তাকিয়ে ফ্রিজ হয়ে গেলাম। হার্ডবিট বেড়ে গেল। সামনে সাতটি সার্কভুক্ত দেশের প্রায় দুই শতাধিক সংসদ সদস্য। তার পেছনে প্রায় শতাধিক সংবাদকর্মী। অনেকগুলো ক্যামেরা। ফ্লাড লাইট আমার ওপরে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ও জাঁদরেল আন্তর্জাতিক ব্যক্তিদের সামনে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ আগে আমার জীবনে কখনোই হয়নি। এখানে তো আমি কোনো ব্যক্তি নই। আমি আমার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি। আমাকে দিয়ে মেপে নেবে বাংলাদেশের সংসদ সদস্যদের মান ও উচ্চতা। আমি ভালো ইংরেজি জানি না। বিশেষ করে ইংরেজি গ্রামারে আমি প্রচণ্ডতম দুর্বল। ইংরেজি শব্দের ভাণ্ডারও আমার খুব সীমিত। অথচ বক্তৃতা দিতে হবে ইংরেজিতে। মনে মনে ভাবলাম আর সামনে তাকাব না। আমি যে বক্তৃতাটি লিখেছিলাম তা লেখার পরে মনে হয়েছিল খুব ভালো লিখেছি। এটাই সরাসরি পড়ে যাব তাতে ১০-১৫ মিনিটের বক্তৃতা হয়ে যাবে।

খুব পোজ নিয়ে চেহারায় আত্মবিশ্বাসের ভাব ফুটিয়ে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলে বক্তৃতা শুরু করলাম। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে বক্তৃতা শুরুর উদ্দেশ্য হলো হার্ডবিটটাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। মনে হলো কাজ হয়েছে। খুব ঘটা করে সবাইকে সম্বোধন করলাম সময় নষ্ট করার জন্য। তারপর নোটে লেখা বক্তৃতা পড়া শুরু করলাম। ২-৩ মিনিট পড়ার পরে দেখলাম নিজের লেখা নিজেই পড়তে পারছি না। তাছাড়া বক্তৃতা কেমন যেন ছন্দহারা হয়ে যাচ্ছে এবং উপস্থিত সুধীজনের মধ্যে উসখুস ভাব দেখা দিচ্ছে। এবার লেখা বক্তৃতা ছেড়ে আমার নিজস্ব স্টাইলে বক্তৃতা শুরু করে দিলাম। কখন যে সময় চলে গেল বুঝতেই পারলাম না। সবাই দেখি আমার দিকে একাগ্র হয়ে তাকিয়ে আছে। কোনো শব্দ নেই। সবাইকে মনে হলো খুবই মনোযোগী। প্রায় ৪০ মিনিট চলে গেল, আমার অনর্গল বক্তৃতা চলছে। হঠাৎ কে যেন ভারতীয় উচ্চারণে ইংরেজিতে বলল ‘আমার রুমে ৪০ জন থাকে’। কথা শুনে তাকালাম কে এই কথা বলল। চেয়ে দেখি দ্বিতীয় সারির প্রথম আসনে বসা ভারতের সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ি। প্রথম সারিতে ছিল মন্ত্রীরা। স্টেজে ছিল সব স্পিকাররা। আমার বক্তব্য সমর্থন করবেন হিমালয়তুল্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তা আমি স্বপ্নেও কোনো দিন ভাবিনি। এই ছিল আমার জন্য বিশ্বজয়। আমার জীবনের পাওয়া সবচেয়ে মূল্যবান মন্তব্য যা আমাকে সারা জীবন কথা বলতে অনুপ্রাণিত করবে।

আমার বক্তৃতার বিষয়বস্তু ছিল— ‘সংসদ, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক’। এ বিষয়টির ওপরে আমার ব্যক্তিগত কিছু ধ্যানধারণা আছে যার ওপর ভিত্তি করে এবং সংবিধান রাষ্ট্রের এ তিনটি স্তম্ভের কী দায়িত্ব দিয়েছে তা বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে তুলে ধরি। তাদের ওপর জনগণের প্রত্যাশা কী তা অনেকটা বিশদভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করি এবং তাতে উপস্থিত অতিথিদের নীরব সমর্থন পাই। আমার বক্তব্যের একপর্যায়ে এসে বলেছিলাম জনগণ সংসদ সদস্যকে তার অতি আপন মনে করে। বিশেষ করে গ্রামের সাধারণ জনগণ। গ্রামের জনগণের কাছে একজন সংসদ সদস্য শুধু তার প্রতিনিধি নয়, সে অতি আপনজন। সংসদ সদস্যরা যেন জনগণের আত্মা, জনগণের অস্তিত্ব। এ বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় বলেছিলাম, থাকার জন্য সংসদ হোস্টেলে আমাকে যে কক্ষটি দেওয়া হয় সেটি আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণ মনে করে তাদের নিজের কক্ষ। তারা যখনই ঢাকায় বিভিন্ন কাজে আসে তখন সন্ধ্যায় সরাসরি সেই কক্ষে চলে আসে রাতে থাকার জন্য। তাদের অন্তরের মনোভাব হলো এটি তাদেরই কক্ষ। আমি যেহেতু প্রথম থেকেই বাধা দেইনি বা কোনো আপত্তি করিনি তাই তারাও ধরে নিয়েছে এ কক্ষটি তাদের জন্যই রাখা হয়েছে। রাজধানীতে সংসদ হোস্টেলে তাদের থাকার সুযোগ আছে এটি তাদের জন্য গর্ব যা তারা গ্রামে ফিরে গিয়ে সবার সঙ্গে গর্বভরে গল্প করে বেড়ায়। যদি কোনো সংসদ সদস্যের কক্ষ তালামারা থাকে বা সেখানে তাদের থাকার সুযোগ না থাকে তাহলে তারা মর্মাহত হয়। তাই আমি কখনোই আমার কক্ষে তালা মারিনি। এ জন্য আমার কক্ষে ১০-১৫ জন এলাকাবাসী এবং দলীয় কর্মী থাকে যা সংসদ সচিবালয় ভালো চোখে দেখে না। পুলিশ ও গোয়েন্দারা সমস্যা সৃষ্টি করে যার জন্য আমাকে মাঝে মাঝে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। জানি না আপনাদের দেশে এরকম অভিজ্ঞতা আছে কিনা? আমার এ প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে বাজপেয়িজী বলে উঠলেন মাঝে মাঝে উনার কক্ষে ৪০ জন থাকে। জনগণের প্রত্যাশা নিয়ে আমার যে ক্ষুদ্র ধারণা ছিল সত্য ও সব দেশে প্রযোজ্য বলে সিল মেরে দিলেন এক মহান নেতা যিনি আমৃত্যু জনগণের সম্মান ও শ্রদ্ধা পেয়েছেন যা উনার মৃত্যুর পরে আরও মহিমান্বিত হয়েছে। সংসদ সদস্য জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি এই বিশ্বাস দৃঢ় করে দিলেন জনগণের মহান নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ি।

সেদিন আমার বক্তৃতার শেষ ১০ মিনিট ছিল ফারাক্কা সমস্যা নিয়ে। উক্ত সম্মেলনে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া নিষেধ ছিল। কাকতালীয়ভাবে ভারতের সংসদ বিষয়কমন্ত্রী এবং পানি সম্পদমন্ত্রী একই ব্যক্তি ছিলেন। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী সম্মেলনের শেষ দিন দিল্লির অন্যতম অভিজাত হোটেল ‘হোটেল তাজ’-এ সংবর্ধনা নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন। আমি নৈশভোজের ছুতা ধরে বলেছিলাম যেহেতু পানি সম্পদমন্ত্রী ফারাক্কায় পানি আটকিয়ে দিয়েছেন যার জন্য আমাদের লাখ লাখ মানুষ পানির অভাবে কষ্ট পাচ্ছে তাই আমি ফারাক্কার পানি নিশ্চয়তা না পেলে ওই নৈশভোজ প্রতীকী হলেও বয়কট করব। এই বলে আমার বক্তব্য শেষ করলে পুরো হল দাঁড়িয়ে লাগাতার করতালি দিয়ে আমার বক্তব্যের প্রশংসা করেন যা ছিল আমার জন্য অভাবনীয়। শুধু তাই নয় সামনের সারির সব মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা, সব স্পিকার পর্ডিয়ামে এসে হাত মিলিয়ে আমাকে অভিনন্দন জানায় যা ছিল আমার জন্য বিরল সম্মান। সেদিন আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল যখন বাজপেয়িজী উঠে এসে আমাকে অভিনন্দন জানালেন। শুধু তাই নয়, বিকালে টি-কর্নারে আবার আমাকে কাছে ডেকে নিলেন এবং খুবই আদর এবং স্নেহের সঙ্গে বললেন আমার বক্তৃতা না-কি উনার পছন্দ হয়েছে। ফারাক্কার ব্যাপারে বললেন, আমাদের চাপ যেন অব্যাহত রাখি। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চাপ সৃষ্টি করতে না পারলে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের দাবি কখনোই আদায় করা যাবে না। কথা বলতে বলতে তিনি তৎকালীন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে যিনি এখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেকে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, উনার মতো না-কি আমিও পানি নিয়ে প্রতিবাদ করছি এবং আমাকে বললেন সুষমা দিল্লির পানির জন্য হরিয়ানা সরকারের সঙ্গে দর কষাকষি করছেন। সুষমাজী হেসে আমাকে সমর্থন দিলেন।

বিষয়টি পরে আমরা রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে গেলে শিলিগুড়ির সংসদ সদস্য সেখানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও এবং রাষ্ট্রপতি ড. শংকর দয়াল শর্মার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় বলেন এই সেই সংসদ সদস্য যে ফারাক্কা ইস্যুতে নৈশভোজ বয়কট করবে বলে বক্তব্য দিয়েছে। আমি ও স্পিকার রাজ্জাক আলী সাহেব প্রথমে বিব্রত হয়ে গেলাম কিন্তু যখন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও আমার প্রশংসা করলেন এবং আমার পিঠে হাত রেখে আদর ও স্নেহের সুরে উনার জীবনের এ ধরনের অনেক ঘটনা বলে উৎসাহিত করলেন তখন আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। রাষ্ট্রপতি নিজেও আমাকে উৎসাহিত করলেন। একপর্যায়ে রাজ্জাক সাহেবের সামনে আমাকে বললেন তুমি তোমার অবস্থানটা ধরে রাখবে। ঘাবড়ে যেও না। তোমার দেশের জন্য তোমার অবস্থান সঠিক। রাজ্জাক সাহেবকে বললেন আমার দিকে খেয়াল রাখতে।

কত বড় রাজনীতিবিদ ছিলেন অটল বিহারি বাজপেয়ি, নরসিমা রাও। কত বড় হৃদয় ছিল তাদের। কত মহান উঁচু তাদের ধ্যান-ধারণা। নিজেদের অধিকার ও রাষ্ট্রের স্বার্থে বিন্দুমাত্র ছাড় উনারা দেন না কিন্তু একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের প্রতিবাদের অধিকারটাও তারা অস্বীকার করেননি। উনারা আমার প্রতিবাদটাকে তো সম্মান দেখিয়েছেনই তার সঙ্গে আমার যেন কোনো ক্ষতি না হয় তা দেখার জন্য স্পিকার রাজ্জাক আলীকে বলে দিয়েছেন। আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন আমার ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের অধিকার নিয়ে বৃহৎ রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে আপসহীন বোঝাপড়া করব কিন্তু অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে হিমালয় সমান নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ি ও নরসিমা রাওকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করব। অবনতচিত্তে উনাদের গুণ কীর্তন করব এবং ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের অধিকার প্রতিষ্ঠার অভিভাবক হিসেবে জোর গলায় স্বীকার করে যাব। মহাপ্রয়াণে উনাদের বিদেহি আত্মা শান্তিতে থাকুক আমার আজীবনের প্রার্থনা।

             লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।

সর্বশেষ খবর