মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

কোরবানির ফজিলত অপরিসীম

মাওলানা মুহম্মাদ সাহেব আলী

কোরবানির শুরু প্রথম মানব হজরত আদম (আ.)-এর  আমলে। এ সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে আমার হাবিব! আপনি তাদের আদমের পুত্রদ্বয়ের ঘটনা যথার্থরূপে পাঠ করে শুনিয়ে দিন; যখন তারা উভয়েই কোরবানি দিয়েছিল। অতঃপর তাদের একজনের কোরবানি কবুল করা হয়েছিল এবং অন্যজনের কোরবানি গৃহীত হয়নি। সে বলল, আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। তখন অন্যজন বলল, আল্লাহ মুত্তাকিদের আমল কবুল করে থাকেন। সূরা মায়িদা : ২৭।  হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে কোরবানির দিনগুলোয় কোরবানি করার চেয়ে অধিক প্রিয় কোনো আমল নেই। কোরবানির পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, পশম, খুরসহ আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। আর কোরবানির পশু জবাইয়ের পর রক্ত মাটিতে গড়ানোর আগেই আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। অতএব, তোমরা এতে আনন্দিত হও।’ তিরমিজি।

কোরবানির প্রচলন হজরত আদম (আ.)-এর সময় শুরু হলেও মুসলমানরা ঈদুল আজহায় যে কোরবানি দেয়, এর সঙ্গে জড়িত হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর স্মৃতি। আল কোরআনের সূরা সফফায় হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর সে (ইসমাইল) যখন পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো, তখন ইবরাহিম তাকে বলল, পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে জবাই করছি; এখন তোমার অভিমত কী? সে বলল, পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তা-ই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম তাকে জবাই করার জন্য শায়িত করল, তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম জবাই করার জন্য এক মহান জন্তু।’ জিলহজের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ এই তিন দিন কোরবানি দেওয়া যায়। এ সময় নিসাব পরিমাণ মালের মালিক যিনি হবেন তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। বকরি ও দুম্বা হলে একজনে একটি কোরবানি দিতে হবে। আর গরু, মহিষ, উট হলে সর্বোচ্চ সাতজন একসঙ্গে কোরবানি দিতে পারবে।  হাদিসে স্পষ্ট করা হয়েছে, বিশ্বাসীদের আদি পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত হিসেবে কোরবানি মুসলমানদের জন্য পালনীয়। যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাদের জন্য কোরবানির তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে লোকসকল! (জেনে রাখো) তোমাদের প্রত্যেক (সামর্থ্যবান) পরিবারের পক্ষে প্রত্যেক বছরই কোরবানি করা আবশ্যক।’ আবু দাউদ, নাসায়ি।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানি করল না সে ঈদগাহের কাছেও যেন না আসে।’ ইবনে মাজাহ।

কোরআন ও হাদিসের আলোকে প্রমাণিত হয়, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি কোরবানি না করে তবে সে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অসন্তুষ্ট করার ভুল করবে; যা আমাদের জন্য কাম্য হওয়া উচিত নয়। কারণ হাশরের দিন তাঁর সুপারিশ ছাড়া কারও পক্ষে আল্লাহর কৃপালাভ সম্ভব হবে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহিভাবে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর