রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাজপেয়িকে যেমন দেখেছি

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

বাজপেয়িকে যেমন দেখেছি

আমি জুনিয়র রিপোর্টার থাকাকালীনই অটল বিহারি বাজপেয়ির সঙ্গে আমার আলাপ। তখন তিনি জনসংঘের একজন জনপ্রিয় নেতা। জনসংঘের নেতা হিসেবেই কলকাতায় এসেছিলেন। মালদহে একটা জনসভা ছিল অটল বিহারি বাজপেয়ির। আমারও সেখানে অ্যাসাইনমেন্ট ছিল। মালদহে জনসভার পর সার্কিট হাউসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলাম আমি আর যুগান্তর পত্রিকার তত্কালীন এক সিনিয়র রিপোর্টার। আমি বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখি, দুজনে মিলে রাম খাচ্ছেন। আমাকে বললেন যোগ দিতে। আমি বলেছিলাম আমি তো মদ্যপান করি না। তা শুনে বাজপেয়িজি বলেন, দাঁড়াও হচ্ছে তোমার। তারপর আমাকে ধরে চামচ দিয়ে মুখে রাম ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। সেই পরিচয়ের সূত্রপাত, যা চলেছিল তার মৃত্যু পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, বোফর্স মামলা নিয়ে কিছু করবেন না? উনি দুহাতের বুড়ো আঙ্গুল নাড়িয়ে বলেছিলেন, হামনে ফাইল দেখা। কুছ নেই হ্যায়। বিশ্বনাথ (প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথপ্রতাপ সিং) হামে ধোঁকা দিয়া। এমনই নানা টুকরো টুকরো স্মৃতি রয়েছে বাজপেয়িজির সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একবার কলকাতায় এসেছিলেন। প্রথামাফিক সাংবাদিক বৈঠকের পর আমাকে বললেন, শাম কো আ যাও। সেই মতো আমি আর আমার চার সাংবাদিক বন্ধু বিকেলে বের হলাম। উনি রাজভবনে বা কোনো হোটেলে উঠতেন না, বড়বাজারে দীর্ঘদিনের পুরনো এক বন্ধুর বাড়িতে উঠতেন। আমরা খুঁজে খুঁজে সে বাড়িতে চলে গেলাম! তখন উনি ঘুমাচ্ছিলেন। আমরা ঘরের বাইরে বারান্দায় বসে গল্প করতে থাকলাম। সেই আওয়াজে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল বাজপেয়িজির। উঠে এসে বললেন, তোমরা তো দেখছি ঘুমাতেও দেবে না। দাঁড়াও মুখটা ধুয়ে আসি। সেই আড্ডা চলেছিল রাত পর্যন্ত। তিনি যে কতটা বন্ধুবত্সল ছিলেন, তার প্রমাণ আমরা একাধিকবার হাতেনাতে পেয়েছি। কোনো শত্রম্ন ছিল না বাজপেয়ির। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একেবারে বিপরীত মেরুর বাসিন্দা ছিলেন তিনি। আমার মনে আছে, সংসদ ভবনে হামলার সময় সারা দেশ যখন সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছিল, সে সময় অটলবিহারি বাজপেয়ি ফোন করলেন সোনিয়া গান্ধীকে। দুজনেই সে সময় সংসদ ভবনে ছিলেন। অটলের ব্যাকুল প্রশ্ন ছিল সোনিয়াজি আপ ঠিক হ্যায় তো? সেদিন সোনিয়া গান্ধী কাউকে কিছু বলেননি। অনেক পরে বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি ভারতের গণতন্ত্রের শক্তি বোঝাতে গিয়ে বলেছিলেন, সেই বিপর্যয়ের সময় বিরোধী নেতা প্রথম ফোন করে আমার খোঁজ নিয়েছিলেন। এটাই ভারতের গণতন্ত্রের শক্তি! অজাতশত্রম্ন অটলবিহারির মৃত্যু তাই শুধু কোনো প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর চলে যাওয়া নয়, আমার কাছে তা আত্মীয় বিয়োগের শামিল। তার প্রয়াণের সময় ভারত শাসন করছে তারই হাতে গড়া দল বিজেপি। তাই স্বাভাবিকভাবেই তুলনা চলে আসছে বর্তমান শাসক দলের মাথাদের সঙ্গে। আর সেখানেই বারবার ধাক্কা খেতে হচ্ছে আপামর ভারতবাসীকে।

মৃত্যুশোকে মুহ্যমান ভারত-সম্রাট শাহজাহান বানিয়েছিলেন বিশ্বের অমর সৃষ্টি তাজমহল। বিশ্বব্যাপী বিশ্বময় সৃষ্টির কয়েকশ’ বছর পর সেই মহলেরই মতো যমুনার তীরে গড়ে উঠবে আরেকটি স্মৃতিসৌধ। প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ির স্মৃতিতে নির্মিত সেই সৌধ হবে তাজমহলকেও ছাড়িয়ে যাওয়া তার এক অপার বিস্ময়কৃতি! জীবদ্দশায় গত ১৩ বছরেও বেশ সময়  যারা কেবল মাত্র বছরে একবার জন্মদিনের দিন শুঙ্কং কাষ্ঠং আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া বাজপেয়িজি সম্পর্কে কোনো খবরই রাখতেন না, সেই বিজেপি নেতৃত্ব তার প্রয়াণে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলার। তাজমহল তৈরি করে সৃষ্টিকীর্তির ইতিহাসে শাহজাহান যেমন অমর হয়ে আছেন, তেমনি ইতিহাসের পাতায় ঠিক একই রকম গৌরবগাথায় নিজেকে চির মহিমান্বিত করে রাখতে ‘অটল-মহল’ স্থাপনের পরিকল্পনাটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরই মস্তিষ্কপ্রসূত। হ্যাঁ অটল সৌধ। প্রাথমিকভাবে সেরকমই ঠিক হয়েছে এই স্মৃতিসৌধের প্রসত্মাবিত নাম।

প্রধানমন্ত্রী তার ঘনিষ্ঠবৃত্তের কয়েকজন শীর্ষ নেতানেত্রীর সঙ্গে কথা বলে এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন! মোদির ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানা হয়েছে, অটল বিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যুর ঘটনাকে অবলম্বন করে দেশব্যাপী একটি প্রবল সহানুভূতির ঝড় সৃষ্টি করাই উদ্দেশ্য। যার ওপর ভর করে আর কয়েক মাস পরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনে বিজয়রথ ছোটানোর পরিকল্পনা করছেন মোদি। এই পরিকল্পনার স্বার্থে সুকৌশলে মোদি নিজেকে অটলজির একমাত্র সুযোগ্য ভাবশিষ্য হিসেবে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরবেন। বস্তুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ি প্রয়াত হওয়ার পর মোদি যে প্রাথমিক শোকবিবৃতি দিয়েছেন সেখান থেকেই তিনি নিজেকে অটল বিহারি বাজপেয়ির একমাত্র মানসপুত্র হিসেবে তুলে ধরতে শুরু করেছেন।

ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ্রদ্ধা জানাতে দিল্লিতে গিয়ে পৌঁছেন বহু মানুষ। বিজেপির সদর দফতর থেকেই শুরু হয় শেষযাত্রা। শেষযাত্রায় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা যোগ দেন। অগণিত সাধারণ মানুষের সঙ্গেই অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে আসেন রাজনৈতিক দলের নেতারাও। বিজেপি অফিসে না গিয়ে বাজপেয়ির বাসভবনে শ্রদ্ধা জানাতে যান কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। সেখানে তিনি বলেছেন, দেশ তার এক মহান সন্তানকে হারালো। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বলেছেন, অসামান্য বাগ্মী ছিলেন বাজপেয়েজি! বিশিষ্ট শিল্পপতি রতন টাটা বলেছেন, বাজপেয়িজির রসবোধ ছিল প্রখর। প্রাক্তন ভারত ক্রিকেট অধিনায়ক শচিন টেন্ডুলকার বলেছেন, দেশের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, সংসদের ভিতরে ও বাইরে অজাতশত্রম্ন ছিলেন অটলজি। একই কথা বলেন, বিজেপির প্রবীণ নেতা তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু। বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ বলেন, ভারতের আকাশে নেই ধ্রুবতারা।

 

তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে শেষকৃত্যে অংশ নেন সুখেন্দু শেখর রায় ও দিনেশ ত্রিবেদী। প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি বলেছেন, ৬৫ বছরের বন্ধুকে হারালাম। সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর তার শোকবার্তায় বলেন, ফের পিতৃহারা হলাম। ব্যক্তিগত মহূর্তের কথা এ দিন বারেবারেই উঠে এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে। শান্তিনিকেতনের ক্যান্টিন চালান কৌশিক পাল। তিনি জানান, খুব মাছ খেতে ভালোবাসতেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। আর পছন্দ ছিল ঢেঁড়স-পোস্তর মতো পদ কিংবা মুড়ি তেলে ভাজার মতো খাবার। দিন দয়াল উপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর জনসংঘের দায়িত্ব নেন অটল বিহারি বাজপেয়ি। সঙ্গে ছিলেন লালকৃষ্ণ আদভানি। ১৯৭৫-এ জরুরি অবস্থার সময়ে অন্য বিরোধী নেতাদের সঙ্গে গ্রেফতার হন বাজপেয়ি। জয়প্রকাশ নারায়ণের ডাকে সাড়া দিয়ে কংগ্রেস বিরোধী জনতা দলে যোগ দেয় জনসংঘ। ’৭৭-এর ভোটে ক্ষমতায় আসে জনতা দল। মোরার্জি দেশাইয়ের মন্ত্রিসভায় বিদেশমন্ত্রী হন বাজপেয়ি। সেই সরকার বেশি দিন চলেনি। এরপর জনসংঘ থেকে তৈরি হলো নতুন দল ভারতীয় জনতা পার্টি! তবে সাফল্য তাড়াতাড়ি আসেনি। প্রথমবার মাত্র দুটি আসনে জিতে বিজেপি। তবে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ আন্দোলনে ভর করেই ভিত শক্ত হতে শুরু হয়। বাজপেয়িকে মুখ করে ১৯৯৬-এর ভোট লড়ে পদ্মশিবির। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন অটল বিহারি বাজপেয়ি। তবে আস্থা ভোটে হেরে ১৩ দিনেই ইতি পড়ে সেই সরকারের। এরপর ইউনাইটেড ফ্রন্ট সরকারও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৯৮ সালে বেশ কিছু আঞ্চলিক দল নিয়ে এনডিএ জোট তৈরি করে বিজেপি। তারপর ১৯৯৮ সালের মে মাসে পোখরানে পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করে ভারত । পাকিসত্মানের সঙ্গে মৈত্রী বাড়াতে দিল্লি-লাহোর বাসযাত্রাও শুরু করেন বাজপেয়ি। তবে এসবের মাঝেই ঘরে-বাইরে দানা বাঁধছিল বিদ্রোহ। ১৯৯৯-এর মে মাসে হঠাৎই জোট ছেড়ে দেন জয়ললিতা। ১৩ মাসের মাথায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় বাজপেয়ি সরকার। অন্যদিকে কাশ্মীর সীমান্ত্মে অনুপ্রবেশ। শুরু হয়ে যায় কার্গিলের যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ জয়ের পর বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে এনডিএ। পাঁচ বছরের শাসনকালে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ন করেন প্রধানমন্ত্রী। চালু হয় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা, সর্বশিক্ষা মিশনের মতো প্রকল্প। সোনালি চতুর্ভুজ প্রকল্পে গোটা দেশকে একসূত্রে বাঁধার কৃতিত্ব বাজপেয়ির। তবে শুধু পদ্যের পাপড়িই নয়, কাঁটাও ছিল এই পাঁচ বছরে! তেহেলকা দুর্নীতি, গুজরাট হিংসার মতো ঘটনাও ঘটেছে। ২০০৪ সালে বাজপেয়ির ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’কে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে ইউপিএ সরকার। শেষ হয় অটল যুগের। আর ফেরেননি বাজপেয়ি। ২০০৫ সালে রাজনীতি থেকে অবসর নেন।  ২০০৯ সালে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কার্যত গৃহবন্দী। মোদি জমানায় তিনি পেয়েছেন ভারতরত্ন সম্মান। তার জন্মদিনকে সুশাসন দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছেন নরেন্দ্র মোদি। বাজপেয়ি বলতেন তার কবিতা যুদ্ধের মতো। সেখানে হেরে যাওয়ার কথা নেই। আছে এক যোদ্ধার জয়ের আখ্যান। নিজের জীবনেও সেই কবিতার কথাই বলে গিয়েছেন তিনি। আটের দশকের তার দুই সাংসদের দল আজ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে দিল্লির মসনদে। গোটা ভারতের ২১ রাজ্যের ক্ষমতায় বিজেপি। এমন দিনের ভবিষ্যদ্বাণী সেই কবে করে গিয়েছেন বাজপেয়ি। বলেছিলেন, ‘অন্ধেরা ছুটেগা, কমল কিলেগা।’ আজ তারই শিষ্যের হাত ধরে গোটা দেশে বিকশিত হয়েছে ‘কমল’। সেদিন টালমাটাল গুজরাটের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন আনকোরা নরেন্দ্র ভাইয়ের হাতে। নেতা চিনতে ভুল হয়নি অটলের। আজ সেই গ্যাম্বুলই বিজেপিকে রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। তবে দেখে যেতে পারলেন না অটল বিহারি বাজপেয়ি। দীর্ঘদিন আগেই স্মৃতি সঙ্গ ছেড়েছে। কবির মৃত্যু হয় না। তিনি বেঁচে থাকেন পাঠকের মননে। অটল ‘অটল’ হয়ে থাকবেন। তার হার না-মানা লেখনীতে। হার নেহি মানুঙ্গা, রার নেহি ঠানুঙ্গা, কাল কে কপাল পর লিখতা মিটাতা হুঁ। গীত নয়া গাতা হুঁ। কট্টর হিন্দুত্ববাদী ও ভারতবর্ষকে হিন্দু রাষ্ট্রতে পরিণত করার সংকল্পবদ্ধ দল হিসেবে বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা হলেও অনেকেই বাজপেয়িকে দলের আর সব নেতার মতো চরম সাম্প্রদায়িক বলে চিহ্নিত করেন না। পরন্তু অনেকেই তাকে কিছুটা ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবেও দেখতে চেষ্টা করেন। কিন্তু বাজপেয়িকে ঘিরে এসব কথা-বার্তার মধ্যে সত্য-মিথ্যা যাই থাক না কেন, এ কথা অনস্বীকার্য যে, বিজেপির মদদপুষ্ট সংঘ বাহিনীর হাতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার ঘটনায় তিনি ছিলেন চূড়ান্তভাবে নীরব দর্শক। আবার গুজরাটে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি-সরকারের মদদে যখন দিনের পর দিন ভয়ঙ্কর গণহত্যা চলতে থাকল তখনো বিষ্ময়কর দার্শনিক মৌনতায় তিনি ছিলেন নীরব দর্শকই। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যদি সে দিন দাঙ্গা বন্ধ করার জন্য নরেন্দ্র মোদিকে একটি বারের জন্যও নির্দেশ দিতেন তবে গুজরাট দাঙ্গার এই বীভত্স চেহারার রূপ হয়তো অত ভয়ঙ্কর হতো না।

            লেখক : প্রবীণ ভারতীয় সাংবাদিক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর