সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

সু চি-র মিথ্যাচার

সভ্য দুনিয়ার জন্য লজ্জার

মিয়ানমারের শাসনক্ষমতার নিয়ন্ত্রক স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি দাবি করেছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের ৮৮টি সুপারিশের ৮১টি ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চি-র নতুন দাবিটি করা হলো মিয়ানমার থেকে নতুন পর্যায়ে রোহিঙ্গা বিতাড়নের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে। রাখাইন রাজ্যে রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের সহাবস্থান নিশ্চিত করতেই মিয়ানমার সরকারের উদ্যোগে কফি আনান কমিশনকে সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এটি ছিল এক জঘন্য ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি। কফি আনান কমিশন তাদের রিপোর্ট মিয়ানমার সরকারের কাছে পেশ করার পর পরই সে দেশ থেকে শুরু হয় রোহিঙ্গা বিতাড়ন। মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর সহাবস্থান নিশ্চিত করার বদলে তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করার জন্য শুরু হয় গণহত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়ন। জ্বালাও পোড়াওয়ের মাধ্যমে অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সে বিষয়টি সচেতনভাবে লুকিয়ে রেখে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত ২১ আগস্ট থেকে সু চিকে উদ্ধৃত করে প্রচার করা হচ্ছে, ‘রাখাইন রাজ্যে টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ড. কফি আনান কমিশনের ৮৮টি সুপারিশের মধ্যে এযাবৎ ৮১টিই আমরা বাস্তবায়ন করেছি।’ রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের বছর পূর্তির প্রাক্কালে আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন বিষয়ে সু চি ওই মিথ্যাচার করেছেন সিঙ্গাপুরে বসে। দৃশ্যত তিনি মিয়ানমারের ওপর চাপ এড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন। গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের প্রসঙ্গ এড়িয়ে সু চি বলেন, রাখাইন রাজ্যে মানবিক সংকটের সূত্রপাত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি থেকে। সেই ঝুঁকি এখনো বিদ্যমান বলে অং সান সু চি দাবি করেছেন সিঙ্গাপুরের এক সেমিনারে। কফি আনান কমিশনের ৮৮টি সুপারিশ পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হবে মিয়ানমার সরকার এগুলোর একটিও বাস্তবায়ন করেনি। সুপারিশগুলোর মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৮২ সালের নাগরিক আইন পর্যালোচনা। মিয়ানমার এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ না নিয়ে আগের মতোই রোহিঙ্গাদের ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি)’ গ্রহণের ওপর জোর দিচ্ছে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চি-র পুরস্কার প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে বিশ্বজুড়ে। কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের বদলে গত এক বছরে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশ ছাড়া করে সু চি যে মিথ্যাচারের পরিচয় দিয়েছেন তাতে মিথ্যাচারের সেরা পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার যোগ্যতাই তিনি দেখিয়েছেন,  যা সভ্য দুনিয়ার জন্য লজ্জার, তবে কোনো অসভ্য দেশের জন্য গর্বের হলেও হতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর