সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

মিথ্যা বলা ওয়াদা ভঙ্গ ও আমানতের খেয়ানত মুনাফিকের আলামত

মাওলানা মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

সত্য সুন্দর কল্যাণের ধর্ম ইসলামে অসত্য, অসুন্দর ও অকল্যাণের কোনো ঠাঁই নেই। মিথ্যাচার ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ইসলামের দৃষ্টিতে আমানত হচ্ছে অন্যের সম্পদ নিজের কাছে গচ্ছিত রাখা। যা নষ্ট করার কোনো সুযোগ নেই। কোনো ডাকাত এরূপে ডাকাতি বা ছিনতাই করতে পারে না যে লোক তার প্রতি নজর উঠিয়ে দেখে অর্থাৎ প্রকাশ্যে যখন সে ডাকাতি করে, মুমিন থাকা অবস্থায়। তোমাদের কেউ গনিমতের মালে (বা অন্য কোনো মালে) খেয়ানত করতে পারে না যখন সে খেয়ানত করে, মুমিন থাকা অবস্থায়। অতএব তোমরা সাবধান হও। তোমরা সাবধান হও (বোখারি, মুসলিম, মিশকাত)।

অত্র হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, মানুষ যখন খেয়ানত করে তখন মুমিন থাকে না। মুমিন হওয়ার জন্য তওবা করতে হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, মুনাফিকের আলামত হচ্ছে তিনটি—যখন সে কথা বলে, মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে, ভঙ্গ করে, এবং যখন তার কাছে কোনো কিছু আমানত রাখা হয়, তা সে খেয়ানত করে (বোখারি, মুসলিম, মিশকাত)।

হজরত আনাস (রা.) বলেন, রসুল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম আমাদের এরূপ উপদেশ খুব কমই দিয়েছেন, যাতে এ কথাগুলো বলেননি, যার আমানতদারী নেই, তার ইমান নেই এবং যার অঙ্গীকারের মূল্য নেই তার দীন-ধর্ম নেই (আহমাদ, মিশকাত)। অত্র হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আমানত রড়্গা করা এবং অঙ্গীকার পূরণ করা পূর্ণ মুমিন হওয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তোমার কাছে আমানত রেখেছে তাকে সময়মতো আমানত বুঝিয়ে দাও। আর যে তোমার সঙ্গে খেয়ানত করে তার খেয়ানত কর না (তিরমিজি, আবু দাউদ, দারেমি, মিশকাত)।

হজরত সাঈদ ইবনে যায়েদ (রা.) বলেন, রসুল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, যে ব্যক্তি অত্যাচার করে অর্ধহাত জমিন দখল করেছে, নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন অনুরূপ সাতটি জমিন তার কাঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে (বোখারি, মুসলিম, মিশকাত)

তাবেই সালেম তার বাপ আবদুলস্নাহ ইবনে ওমর হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, রসুলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, যে অনধিকারে কারও কিছু জমিন নিয়েছে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক জমিন পর্যন্ত্ম ধসিয়ে দেওয়া হবে (বোখারি, মিশকাত)।

হজরত ইয়ালা ইবনে মুররা (রা.) বলেন, আমি রসুলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নামকে বলতে শুনেছি, যে কোনো ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারও এক বিঘত জমি দখল করে, তাকে আলস্নাহ তা সাত তবকের শেষ পর্যন্ত্ম খুঁড়তে বাধ্য করবেন। অতঃপর তার গলায় তা শিকলরূপে পরিয়ে দেওয়া হবে, যাবৎ না মানুষের বিচার শেষ করা হয় (আহমাদ, মিশকাত)।

হজরত আবদুলস্নাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রসুলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, মানুষের মধ্যে উত্তম কে? তিনি বললেন, প্রত্যেক নিষ্কলুষ অন্ত্মঃকরণ সত্যভাষী। সাবাহাগণ আরজ করলেন, সুদুকুল লিসান তো আমরা বুঝি, তবে মাখমুমুল কালব কি? তিনি বললেন, নির্মল ও পবিত্র অন্ত্মঃকরণ, যা পাপ করেনি, জুলুম করেনি, যা খেয়ানত করেনি ও যা হিংসা-বিদ্বেষ হতে মুক্ত (ইবনে মাজাহ, বায়হাকি, শুআবুল ইমান, মিশকাত)।

হজরত আবদুলস্নাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রসুলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নাম বলেছেন, যখন তোমার মধ্যে চারটি বস্তু বিদ্যমান থাকে, তখন দুনিয়ার যা কিছুই তোমার থেকে চলে যায় তাতে তোমার কোনো ক্ষতি নেই।  আমানত রড়্গা করা, সত্য কথা বলা, উত্তম চরিত্র হওয়া এবং খানাপিনাতে সতর্কতা অবলম্বন করা।  (আহমাদ, শুআবুল ইমান, মিশকাত)।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর