শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

জান্নাতে রসুল (সা.)-এর বন্ধু হবেন ওসমান (রা.)

সমাজের ভুখা-নাঙ্গা মানুষের প্রতি হজরত ওসমান (রা.) ছিলেন সর্বদা দরাজহস্ত। একবার মদিনায় বড় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এমন সময় খবর এলো ওসমানের (রা.) ব্যবসার এক হাজার উট বোঝাই খাদ্যশস্য আমদানির পথে। মদিনার ব্যবসায়ীরা এসে ওসমান (রা.)-এর বাড়িতে ভিড় জমান। তিনি তাঁদের সংরক্ষণাগারে নিয়ে গেলেন, যেখানে সারি সারি খাদ্যশস্য ভর্তি বস্তা সাজানো ছিল। তিনি তাঁদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা আমাকে কী লাভ দেবে?’ তাঁরা বললেন, ১০ টাকা ক্রয় মূল্যের ওপর দুই টাকা। তিনি বললেন, ‘আমি আরও বেশি লাভ পেতে পারি।’ তাঁরা দাম বাড়াতে বাড়াতে ১০ টাকায় পাঁচ টাকা দিতে সম্মত হলো। হজরত ওসমান (রা.) বললেন, ‘আমি দশে দশ লাভ পেতে পারি।’ অতঃপর তিনি ঘোষণা করলেন- ‘তোমরা সাক্ষী থাক, আমি সব খাদ্যশস্য মদিনার অভাবী লোকদের সদকা করে দিলাম।’ এভাবে সমাজের ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূর করতে তিনি তাঁর বিপুল ঐশ্বর্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে হিরাক্লিয়াস মদিনার বিরুদ্ধে লক্ষাধিক সৈন্যের এক সুসজ্জিত বাহিনী প্রেরণ করলে রসুলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের যুদ্ধ প্রস‘তির জন্য যুদ্ধ তহবিলে সামর্থ্য অনুযায়ী সবাইকে দান করতে বলেন। হজরত ওসমান (রা.) সে সময় এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা, এক হাজার উট ও ৭০টি ঘোড়া সরবরাহ করেন। রসুল (সা.)-এর পরিবারের জন্যও তাঁর সম্পদ ছিল উন্মুক্ত। ঘৃণ্য দাসপ্রথা উচ্ছেদে তাঁর ভূমিকা ছিল সর্বাধিক। তিনি প্রতি জুমাবার একটি করে গোলাম অথবা বন্দী মুক্ত করে দিতেন। কারণবশত কোনো শুক্রবার না পারলে পরবর্তী শুক্রবারে দুটি দাস মুক্ত করে দিতেন।

আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা.)-এর সঙ্গে হজরত ওসমান (রা.)-এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মানবতার কল্যাণে জীবন ও সম্পদ উত্সর্গকারী এ সাহাবি সম্পর্কে রসুলে খোদা (সা.) বলেছেন, ‘ওসমান হলো তাঁদেরই একজন, যাঁরা আল্লাহ ও রসুলকে বন্ধু ভাবেন এবং আল্লাহ ও রসুল তাঁদের বন্ধু ভাবেন।’

রসুলুল্লাহ (সা.) প্রথমে নিজের মেয়ে হজরত খাদিজার (রা.) গর্ভজাত সন্তান রুকাইয়াকে ওসমান (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহ দেন। হজরত রুকাইয়ার ইন্তেকাল হলে তাঁর সহোদরা উম্মে কুলসুমকে হজরত ওসমান (রা.)-এর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। রসুল (সা.)-এর দুই মেয়েকে বিয়ের কারণে তাঁকে ‘জিননুরাইন’ বলা হয়। উম্মে কুলসুমের ইন্তেকালের পর রসুল (সা.) বলেন, ‘আমার যদি আরও একটি মেয়ে থাকত, তাহলে তাকেও আমি ওসমানের সঙ্গে বিয়ে দিতাম।’ তিনি রসুল (সা.)-এর নির্দেশে পীড়িত স্ত্রী রুকাইয়ার সেবায় মদিনায় অবস্থানের কারণে একমাত্র বদর ছাড়া সব যুদ্ধেই রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে অংশ নেন। রসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে একাধিকবার জান্নাতের শুভ সংবাদ দিয়েছেন। রসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নবীরই বন্ধু থাকে, জান্নাতে আমার বন্ধু হবে ওসমান।’ তিনি ছিলেন রসুল (সা.)-এর কাতেবে ওহি দলের অন্যতম।     জাফর খান।

 

সর্বশেষ খবর