শনিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অর্থ লালসা থেকে দূরে থাকতে হবে

মাওলানা আবদুর রশিদ

অনেক সময় দেখা যায়, মানুষের চলার মতো বেশ অর্থ আছে, রুজি-রোজগারের সুন্দর ব্যবস্থা আছে। তবুও সে অতিরিক্ত অর্থের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে অর্থোপার্জন করে যাচ্ছে। হালাল পথ না পেয়ে, অথবা হালাল পথে ধনাগম কম দেখে হারাম পথ কেউ উত্কৃষ্ট পথ বলে গ্রহণ করে নিচ্ছে। মনে প্রশ্ন জাগে, মানুষ হারাম উপার্জনে উদ্বুদ্ধ হয় কেন?

বিলাসিতা যখন মনেপ্রাণে অনুপ্রবেশ করে তখন মানুষ অর্থলোলুপতার শিকার হয়। আর তখনই অর্থোপার্জনের জন্য উপায় ও কৌশল অবলম্বন করে। বিলাসবহুল পরিবেশের বিলাসিতার প্রতিযোগিতায় মানুষ নিজেকে পশ্চাত্বর্তী করতে চায় না। বিলাসিনী অর্ধাঙ্গিনীর বিলাস-সামগ্রী সংগ্রহ করতে তাকে ধন অর্জনের পথ অবলম্বন করতেই হয়। আর সেই সময় হালাল পথ না পেলে অথবা হালাল পথে উপার্জন কম দেখলে হারাম পথকেই বেছে নেয়।

মন চায় না যে, কেউ গরিব হোক, অথচ সীমা লঙ্ঘনকারী ধনবত্তা থেকে গরিবী অনেক ভালো। আসলে মন ধনী হলে সেটাই যথেষ্ট, তা না হলে পৃথিবীর সম্পদ তার জন্য যথেষ্ট নয়। এ দুনিয়ায় যার মন ধনী, সে-ই প্রকৃত ধনী। নচেৎ সারা পৃথিবী পেয়েও তার ধন-পিপাসা পানি-পিপাসা থেকেও কঠিনতর।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আবু জর (রা.)কে বললেন, তুমি কি মনে কর যে, বেশি ধন হলে তার নামই ধনবত্তা? (না,) বরং প্রকৃত ধনবত্তা হলো হৃদয়ের ধনবত্তা এবং প্রকৃত দরিদ্রতা হলো হৃদয়ের দরিদ্রতা। যার হৃদয়ে ধনবত্তা থাকে, দুনিয়ার কোনো বঞ্চনা তার ক্ষতি করতে পারে না। আর যার হৃদয়ে দরিদ্রতা থাকে, দুনিয়ার ধনাধিক্য তাকে অভাবমুক্ত করতে পারে না। আসলে হৃদয়ের কাপর্ণ্যই তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর আমাদের বাংলা প্রবাদে বলে, বিত্ত হতে চিত্ত বড়।

অনেক মানুষের কাছে বাস্তব এই যে, দুনিয়াটা কার? দুনিয়া টাকার। যার আছে টাকা, তার সব পাপ ঢাকা। যার নেই টাকা, তার সব কথাই ঢাকা। টাকা যখন কথা বলে সত্য ও ন্যায় তখন চুপ থাকে। সব কথা ফাঁকা, আসল কথা টাকা। সুতরাং যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, অর্থই হলো জীবনের সবকিছু সে ব্যক্তি তা অর্জনের পথে সব কিছুই করতে পারে। আর সেই সময় সে ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে থাকে, লাখ টাকার স্বপ্ন দেখে।

আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে কোনো ছাগপালে ছেড়ে দিলে তারা ছাগলের যতটা বিনাশ সাধন করে, তারচেয়েও ধনলোভ ও দীনদারির খ্যাতিলোভ মানুষের অধিক বিনাশ সাধন করে।

তিনি আরও বলেন, আদম সন্তানের মালিকানায় যদি সোনার একটি উপত্যকাও হয়; তবুও সে অনুরূপ আরও একটির মালিক হওয়ার অভিলাষী থাকবে। পরন্তু একমাত্র মাটিই আদম সন্তানের চোখ (পেট) পূর্ণ করতে পারে। অবশ্য যে ব্যক্তি তওবা করবে, আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করবেন।

তিনি আরও বলেন, দুজন লোভী তৃপ্ত হয় না, জ্ঞানলোভী ও ধনলোভী। মানুষ যে ধন ভালোবাসে, সে কথা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালাও বলে দিয়েছেন তাঁর কোরআন কারিমের বিভিন্ন স্থানে। এক স্থানে তিনি বলেন, অর্থাৎ, আর তোমরা ধন-সম্পদকে প্রাণভরে ভালোবাস। (সূরা ফজর ২০)। আর সে ধন-সম্পদের আসক্তিতে অতি কঠিন। (সূরা আদিয়াত ৮)। আল্লাহ আমাদের অর্থ লালসা থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক

সর্বশেষ খবর